বছর ঘুরে আরেকবার দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাংলার নতুন বছর ১৪২৬। আজকের ডুবন্ত সূর্য আগামীকালের ভোরের কিরণে জ্বলে উঠবে নতুন একদিন, নতুন এক বছর। সুরের মূর্চ্ছনায় গেয়ে উঠবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক কাটারে দাড়িয়ে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।
এমনি প্রাণের উৎসবে বাঙালীর ঘরে ঘরে মাতবে চির চেনা ‘পহেলা বৈশাখ’। নেই কোনো ভেদা- ভেদ জাতিতে জাতিতে। একটাই পরিচয়, আমরা বাঙালী । তাই, বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ও নানা বর্ণের ধর্ম ফুটিয়ে তুলতে থেমে নেই সম্প্রীতি-প্রিয়াসী সিলেটবাসী।
শনিবার সকাল থেকে চৈত্রসংক্রান্তির উৎসবে মাতছে সিলেট অঞ্চলের নানা শ্রেণী পেশার মানুষেরা বঙ্গাব্দ ১৪২৫কে বিদায় জানাতে। চলছে নানা বর্ণের ধর্মীয় উৎসব। পাশাপাশি রয়েছে সংস্কৃতি আয়োজনও । এদিকে বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে ঘিরে শনিবার থেকে সিলেটের মহানগর এলাকায় নিরাপত্তার জোরদার করা হয়েছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৯ এর উদ্যোগে ।
বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনাকাঙ্খিত দূর ঘটনা এড়াতে র্যাবের বিশেষ টহল অবস্থান করেছে । পাশাপাশি সাদা পোষাক ও মোটর সাইকেল যোগে র্যাবের বিশেষ টহল গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে ।
এই নিরাপত্তা তিনটি স্তরে বলে জানান র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৯ এর সংশ্লিষ্টরা। বাংলা নববর্ষ ১৪২৬কে স্বাগত জানাতে আগামীকালের ভোরের আলো উঠার আগে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি ছেড়ে নিচ্ছে সংস্কৃতি প্রেমীরা। এর মধ্যে নাচ, গান, নাটক, আবৃতি, চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগীতার প্রস্তুতির সরব তো চলছে ছোট বড় সংগঠনের ।
কিন্তু গ্রামাঞ্চলের হরেক রকমের খেলা ধরে রাখতে কোন প্রকার ভূলেনি আয়োজকেরা । তারাও নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যপূর্ণ খেলা অংশগ্রহনের জন্য বিভিন্ন ঢং এ আহ্বান জানান দিয়ে যাচ্ছে শেষ সময়ে এসে । এদিকে নববর্ষের উৎসবে বাঙালীর সাজে নিজেদের ফুটিয়ে তুলতে ভূলছেনা তরুণ তরুণীরা । তাই সিলেট নগরীর বড় বড় অভিজাত বিপনী বিতান ছাড়াও দেশীয় শোরুমগুলোতে শেষ সময়ে পছন্দের পণ্য ক্রয় করে নিচ্ছে তারা।
পোশাকের সাথে মানানসই অলংকার । তার মধ্যে বাদ যায়নি রং-বেরঙের ফুলের সাজ সজ্জাও। এজন্য সিলেট নগরীর প্রতিটি ফুলের দোকানেও ক্রয়-বিক্রয় জমজমাট হয়ে উঠেছে নতুন দিনের নববর্ষকে ঘিরে ।
এবার নববর্ষের দিনে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়াবে সিলেটে আনন্দলোক, শ্রুতি, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযু্িক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও এমসি কলেজের প্রাঙ্গনগুলো ।
ভোরের প্রথম আলোয় মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাবে । আনন্দলোকের পরিচালক রবীন্দ্র সাধক শিল্পী রানাকুমার সিনহা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও সিলেটের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনকে নিয়ে পহেলা বৈশাখের আয়োজন করা হয়েছে ।
রোববার সকাল ৭টা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হবে পহেলা বৈশাখের নানা আয়োজন। চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত । তাই শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে এখন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আল মুসা বলেন, বাঙালী নববর্ষে সিলেট মহানগরীতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে । নববর্ষে অনুমোদিত অনুষ্ঠান আয়োজককারীদের সিসিটিভি স্থাপন, ভিডিও চিত্র ধারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে । এই কার্যক্রম চলবে রোববার পর্যন্ত।
তবে সন্ধ্যা ৬টার আগে সিলেট মহানগর এলাকার সব নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি ।
সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার সিলেট নগরী চাঁদনীঘাটে সপ্তাহব্যাপী মেলা শুরু করেছে নববর্ষ উপলক্ষে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে । এই সময় চাঁদনীঘাটে চৈত্রসংক্রান্তির বঙ্গাব্দ ১৪২৫কে নাচে গানের মধ্য দিয়ে বিদায় জানান দেয় সিলেটের সাংস্কৃতিক প্রমীরা।
অপরদিকে নতুন দিনে হালখাতার বিলিয়ে দিতে শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পাড় করে যাচ্ছে ছোট বড় সব ব্যবসায়ীরা ।