এন সি রায়: জ্যোতির্ময়ের তেজোদীপ্তময়তা সব প্রানীকুলকে আকৃষ্ট করে, অথবা প্রাণীকূল জ্যোতির্ময়ের দীপ্তপ্রভায় প্রভাবিত হয়। এটা যেমন প্রকৃতির বেলায় প্রযোজ্য তেমনি আধ্যাত্মিক জগৎ বলেন আর জীবজাগতিক ও সামাজিক জগৎ বলেন সর্বত্রই আমি একই নিয়মের সামন্জস্য দেখতে পাই।
যেমন উজ্জলতম বিশালত্বের প্রতি আমাদের ভালবাসা ও ভক্তিত্ব। তেমনি সর্ববিশালত্ব সম্পন্ন শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি সকল জীবওপ্রকৃতির প্রদক্ষিন। এই প্রদক্ষিনের মধ্যেই আমরা ও আমাদের বিচরণ। মূলত ৩৬০ ডিগ্রী’র মধ্যেই আমাদের ঘুর্ণয়মান। আর তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রতিদিন। আজকের এই দিনটি আপনার জীবনে আর ফিরে পাওয়া যাবে না কিন্তু এই দিনটিই বর্ষপঞ্জিকার নিয়মানুসারে আবার ফিরে আসবে।
হ্যাঁ, বর্ষপঞ্জিরার কথা। ‘সূর্য, সৌরজগতের সর্বোজ্জল এই নক্ষত্রকে বেষ্টন করেই সকলের সব কিছু। জীব বা প্রকৃতি যা ই বলেন না কেন সকলই এই দীপ্ত প্রভায় ভাস্বর। আর একে কেন্দ্র করেই ঘডির সময়, সেকেন্ড, মিনিট ঘন্টা, দিনপন্জি, বর্ষপঞ্জি যুগপঞ্জি, শতাব্দী, সহস্রাব্দ ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমাদের বাংলা ‘সন’ বলেন, আর ‘বঙ্গাব্দ’ বলেন রাজা শশাঙ্ক বলেন, আর সম্রাট আকবর বলেন যে-ই এই পন্জিকার প্রবর্তন করেন না কেনো আমি ওই বিতর্কে যাবো না বা এই প্রবন্ধের পাঠক কে সেই বিতর্কিত তথ্যও দিতে চাইবো না। কারণ যে জিনিস টি মানুষের মধ্যে বিভেদ ও বিভ্রান্তি সৃস্টি করে বা মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িকতা সৃস্টি করে সে বিষয়টি বর্জন করে আমি বর্তমানের মধুর সম্প্রীতিকে আরো গাঢ় করে দেখতে চাই।
যাঁরা ইতিহাস জানতে চান তাঁরা খোঁজ করে দেখবেন-ডিম আগে এসেছিলো না মুরগী আগে এসেছিলো। আমি পাঠকদের ডিম ও মুরগীর গুরুত্ব ও বাস্তব জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে চেষ্টা করছি মাত্র।
আজ পহেলা বৈশাখ, বাঙ্গালীর মহামিলনের দিন, বর্ষবরণের দিন। জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সকল বাঙ্গালী স্বকীয় ঐতিহ্য নিয়ে একত্রে মিলিত হয়। আজই একমাত্র উদযাপন জাতীয় অনুষ্ঠান ছাড়া যেখানে সকল বাংলা ভাষিরা একত্রিত হয়। বাঙ্গালীর সকল বাঙ্গালীত্ব প্রদর্শনের দিন আজ। আজ বাঙালীর পান্তা খাওয়ার দিন, ইলিশ খাওয়ার দিন, শুক্ত খাওয়ার দিন আজ, মুড়িঘন্ট খেতে হবে , শাড়ি পরতে হবে, ধুতি পরতে হবে, লু্ঙ্গি পরতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি বাঙালীপনার উৎকর্ষের বহির্প্রকাশ ঘটবে আজ ।
আমাদের বর্ষবরণ শুধু দেশেই নয়, বাঙ্গালী ও বাংলাদেশীরা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই করে থাকেন। খুব উৎসাহ ও উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে এই নুতনকে বরণ করা হয়। বাঙালীর বাংললিত্ব শুধু বছরের এই প্রথম দিনটির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে বংলাকে ভালোবাসা হবেনা । বাংলা ও বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য জীবিত রাখতে হবে এর নিজস্বতা, আপন স্বকীয়তা। কোন ধার করা সংস্কৃতি নয়, আমাদের অনেক সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী সংস্কৃতি আছে আমরা যেনো তা নিয়েই এগিয়ে যেতে পারি সেই প্রত্যাশা।
সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ বলিষ্ঠতর হোক। নূতন বছর ১৪২৬ সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, সমৃদ্ধি ও সুস্থ্য জীবন।