logo
আপডেট : 20 April, 2019 02:12
মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা যথাযথ স্বীকৃতির দাবি রাখে
আহমদ রফিক

মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা যথাযথ স্বীকৃতির দাবি রাখে

এই তো ক’দিন আগে একাত্তরে পাকিস্তানি সামরিক সদস্যদের বর্বরতার শিকার ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর জীবনাবসান হয়। সাংবাদিক মহল ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন তার বিদায়ে বেদনার প্রকাশ ঘটিয়েছে তাদের লেখায়, বক্তৃতায়, আলোচনা সভায়। এমনি হাতেগোনা কয়েকজনের সামাজিক স্বীকৃতি। তবে সমাজ সবার ‘বীরাঙ্গনা’ নামের সঠিক মূল্যায়ন করেনি, মমতায় বা মর্যাদায় কাছে টেনে নেয়ার ঘটনা সংখ্যায় খুব একটা বেশি নয়।

অথচ তাদের দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রণা তুলনাবিহীন। নির্যাতিত হয়ে যাদের মৃত্যু ঘটেছে তাদের সংখ্যা অনেক, অনেক। কে তাদের হিসাব রেখেছে, কে তাদের মর্যাদার তালিকায় চিহ্নিত করেছে, শাসনযন্ত্র বা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন? যুক্তি তুলে কেউ হয়তো বলতে পারেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে এ রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দায়ভার অগ্রাধিকার পাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না।

এ কথায় যুক্তি থাকলেও তা প্রশ্নাতীত নয়। দীর্ঘ সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে অভাবিত সশস্ত্র যুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীতে যে মাত্রার আবেগ-উচ্ছ্বাস-উল্লাস ও

উন্মাদনা দেখেছি সেক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক মহলের আত্মস্থ হওয়া এবং কিছু ঐতিহাসিক সত্য সন্ধান ও ঐতিহ্য রক্ষায় দায় কি ধীরে সুস্থে হলেও খুবই কঠিন যুক্তিহীন দাবি? অন্তত আমি তা বিশ্বাস করি না।

আসলে বাংলাদেশি বাঙালি নিশ্চিতই এক ইতিহাস-অসচেতন জাতি, ঐতিহ্য চেতনায় নেতিবাচক দিকটি প্রধান। মননশীল ও স্বজনশীল ভুবনেও আরাম-আয়েশ ও সংক্ষিপ্তযাত্রার প্রবণতা অধিক। শ্রমের প্রতি অনীহার প্রকাশ যথেষ্ট, ব্যতিক্রমীদের কথা মনে রেখেই গবেষণাকর্মে এমন প্রবণতার কথা লিখছি। ইতিহাস গবেষণার দিকটিতে এ প্রবণতা অপেক্ষাকৃত অধিক।

কথাগুলো সংকীর্ণ চিন্তার প্রকাশ যে-নয়, বহু ঘটনা তার প্রমাণ। তার মধ্যে দু’একটি তুলে ধরা যায়। একুশের ভাষা আন্দোলন নিয়ে, রাজনীতিক্ষেত্রে তার প্রভাব কীভাবে একাত্তরে পৌঁছেছে তাই নিয়ে আমাদের রাজনীতিকগণ প্রগলভ। তারা নানা প্রশস্তিবাচক অভিধায় চিহ্নিত করেছেন একুশকে। কেউ এমনও বলেছেন, একুশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও লড়াই শেষের স্বাধীনতা অর্জনের ‘সূতিকাগার’।

কিন্তু ওই প্রশস্তিবাচনেই সব শেষ। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিলপত্র কিছুটা সংকলিত হলেও ভাষা আন্দোলনের নিদর্শন-প্রমাণ, দলিলপত্র রক্ষিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের মতো বহু খণ্ডে দূরে থাক, একখণ্ডেও সেসবের কিছু সংকলিত হয়নি। আর সেই রক্ষণশীলতার কালে একুশের আন্দোলনের নারীদের ভূমিকা সামান্য লিখিত।

এদিক থেকে যেমন শাসকযন্ত্র তেমনি সাংস্কৃতিক সংগঠনে সমান অবহেলা বা উদাসীনতা। ফলে নিদর্শন সব বিলুপ্ত। অদৃশ্য ইশতেহার, পোস্টার, চিঠিপত্রসহ সংশ্লিষ্ট সব কিছু। লেখা হয়নি একুশে নিয়ে উচ্চমানের একটি উপন্যাস। একই কথা খাটে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও। তেমনি যে কথা শুরুতে বলেছি স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের অবদানের, তাদের রক্তাক্ত জীবনদানের বাস্তব ইতিহাস সামান্যই আলোচিত।

দুই.

একটু সুস্থির হয়েই এ কাজ শুরু করা যেত সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে। শুধু ইতিহাস-ঐতিহ্যের খাতিরেই নয়, গর্বের স্বাধীন বাংলাদেশের বাঙালি জাতির মর্যাদা রক্ষার খাতিরেও। বিশ্ব সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক মহল তাহলে এ বিষয়ে এতটা নির্লিপ্ত হতে পারত না, ভিন্ন ধারার বশীভূত হতে পারত না। কোনো লেখক বলতে পারত না; কয়েক লাখ নারী নির্যাতন ও হত্যা? না, এ অসম্ভব, সবটাই কল্পিত সংখ্যা।

কিন্তু ঘটনা বাংলা-বিরোধীদের সন্দেহ-সংশয়ের বিপরীত কথাই বলে। বলে এ কারণে যে পাকিস্তানি সামরিক শাসন এক ধরনের বিজাতীয় ঘৃণা-বিদ্বেষ নিয়ে শুধু নিজ ভূখণ্ড দখলের নেশায়ই মাতেনি, তাদের ভাষায় বাঙালিকে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি দিতে চেয়েছে যাতে বাঙালি আর কখনও মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস না দেখায়। একাত্তরের ন’মাসে তাদের বর্বর কর্মকাণ্ড, তাদের নির্দেশ ও মনোভাব এমন এক সত্যই তুলে ধরেছিল।

পরবর্তী সময়ে তাদের অর্থাৎ পাকিস্তানি ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তাদের লেখার উল্লিখিত প্রত্যক্ষ ঘটনা ও পরোক্ষ মন্তব্যও ইঙ্গিতে তা স্পষ্ট ধরা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ধরা রয়েছে ওই ন’মাসে ব্রিটেনে ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকপত্র ও সাময়িকীগুলোতে প্রকাশিত সংবাদ পরিবেশনে ও প্রতিবেদনে। মার্কিনি ‘টাইম’ এই বিশেষ ক্ষেত্রে বেশ বাস্তবভূমিকাই পালন করেছিল। তেমনি ‘নিউজ উইক’।

আর তৎকালীন পূর্ববঙ্গবাসী মানুষের অভিজ্ঞতা কি কম গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারিক পর্যায়ে নারীর ইজ্জত ও জীবন হারানোর ঘটনা বোধগম্য কারণে ছোট্ট বৃত্তের বাইরে প্রকাশ পায়নি। বিবিসি বা ভারতীয় পত্রিকা ও দূরদর্শনের খবরে কিছু ঘটনার উল্লেখ তো রয়েছে। ঢাকাই দৈনিকগুলো নিষেধাজ্ঞার কারণে গণহত্যা ও নারীদের ওপর সংঘটিত বর্বরতার ঘটনা প্রকাশ করতে পারেনি।

পাকিস্তানি মেজর সিদ্দিক মালিকের লেখা উইটনেস টু সারেন্ডারট-এ কিছুটা আভাস-ইঙ্গিত আছে পাকসেনাদের বাঙালি নারীদের সঙ্গে আচরণ সম্পর্কে। এমনকি আছে জেনারেল টিক্কার স্থলাভিসিক্ত জেনারেল নিয়াজির দুশ্চরিত্র ও বাঙালি নারী নির্যাতনবিষয়ক নীতি সম্পর্কে দু’এক ছত্রের বক্তব্যে।

ঢাকায় কর্মরত আরেক শীর্ষস্থানীয় পাক সামরিক কর্মকর্তা খাদিম হোসেন রাজার লেখা বইতেও অনুরূপ ইঙ্গিত রয়েছে, বিশেষ করে নিয়াজির চরিত্র ও পূর্ববঙ্গে অনুসৃত তার রণনীতি সম্পর্কে।

সাধারণত কর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাঙালি নারীদের প্রতি আচরণে যেমন অশ্লীল ইঙ্গিত রয়েছে, তেমনি ছিল একাধিক সূত্রে উল্লিখিত তার উক্তি, বাঙালি জাতির রক্তে পাঞ্জাবি রক্তের মিশ্রণ ঘটিয়ে তাদের ভিন্ন জাতিসত্তায় পরিণত করতে হবে। গ্রিক সেনাবাহিনীর রক্ত মিশ্রণে গঠিত যোদ্ধা পাঞ্জাবি জাতির যোগ্য উত্তর পুরুষও প্রতিনিধি আমির আবদুল্লাহ নিয়াজি। আমাদের ক্ষুব্ধ যন্ত্রণা যে এই দুর্বৃত্ত পাকিস্তানি জেনারেলের অপরাধের শাস্তি হয়নি, না বাংলাদেশে; না ভুট্টোর পাকিস্তানে। হয়নি তার নীতির অনুসারী সামরিক কর্মকর্তাদেরও।

পূর্ববঙ্গে ন’মাসের সামরিক শাসনে, মূলত নিয়াজির নেতৃত্বে মূলনীতি ছিল এক নম্বরে নির্বিচার হিন্দু নিধন, সেই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী বা স্বাধীনতাকামী বাঙালি মুসলমান নিধন, বিশেষভাবে বাঙালি নারী নির্যাতন, ক্ষেত্র বিশেষে হত্যা। হোক তারা সুন্দরী গৃহবধূ বা তরুণী বা যুবতী কিংবা শিক্ষার্থী। পূর্ব বাংলাকে আয়ত্তে আনতে তাদের নীতিগত স্লোগান- আদমি নেহি মাংতা, মিত্তি মাংতা’ তেমনি অন্যদিকে সেনা জওয়ানদের মুখে উচ্চারিত ‘লেড়কি মাংতা’ এখন বাঙালি পরিবারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। এ দুর্বৃত্তপনার নায়ক পূর্বাঞ্চলের সামরিক সেনাপ্রধান নিয়াজি ও তার অনুসারী কয়েকজন দুশ্চরিত্র সেনা কর্মকর্তা। মূল বিষয়টি ছিল বাঙালির প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ-অবজ্ঞা।

এরা পাকিস্তানি সেনাজওয়ানদের পূর্বোক্ত নীতিতে এমনভাবে মগজ দোলাই করেছিল যে তারা বাঙালি নারী ধর্ষণ পবিত্রকর্ম হিসেবে ধরে নিয়েছিল। বিভিন্ন শিক্ষায়তনের শহীদ তালিকায় দেখা যায় শিক্ষার্থীনীদের নাম। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো এলাকায়, বিশেষ করে হিন্দুপ্রধান এলাকায় জানা গেছে তরুণী, কিশোরী বা গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনা। এক্ষেত্রে বিহারি-বাঙালি রাজাকারদের ছিল বিশেষ ভূমিকা। এ সময়কার রচিত বাংলা কবিতায় এসব বর্বরতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বয়সী মানুষের অবদান নিয়ে আমরা গর্ব করি, বেশ কিছু লেখালেখিও প্রকাশ পেয়েছে এ উপলক্ষে। নির্যাতিত নারীদের নাম দেয়া হয়েছে বীরাঙ্গনা। কিন্তু সমাজ সাধারণভাবে তাদের যোগ্য মর্যাদার চোখে দেখেনি। পাকসেনাদের বাংকারে বা আশ্রয়ে জীবদ্দশায় তাদের দুঃসহ যন্ত্রণার্ত জীবন। তাদের কেউ ফিরেছেন কেউ অবৈধ সন্তান প্রসব করেছেন, কিংবা মারা গেছেন, তাদের ক’জনকে আমরা মনে রেখেছি, ক’জনের যন্ত্রণার অংশে ভাগ হয়েছি।

না, ব্যাপকভাবে নীতিগত ব্যবস্থাপনায় সামান্য সংখ্যকই সমাজে সমান-মর্যাদায় পুনর্বাসিত হয়েছেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রব্যবস্থার তুলনায় বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) ভূমিকা অপেক্ষাকৃত অধিক। যুদ্ধকালের অবৈধ সন্তানদের গতি হয়েছে বিদেশে, বিশেষ করে কানাডা বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশের কোনো কোনোটিতে, কখনও জাতিসংঘ তথা ইউনিসেফের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু লাঞ্ছিত, ধর্ষিত বা নিহত নারীদের সম্পর্কে জরিপ বা কোনো তালিকা তৈরি করা হয়নি। কাজেই সংখ্যাটি মুখে মুখে বা লেখায় কয়েক লাখের অনিশ্চয়তায় গতি হয়েছে।

তিন

এরা মুক্তিযুদ্ধের বলি, কথিত বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃত। এরা মুক্তিযোদ্ধা নয়। তবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী তরুণী, অনেক যুবতী পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে ধর্ষিত হয়ে শহীদ হয়েছে। আবার তাদের অনেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, ফিরেছেন কেউ কেউ বিজয়ের মালা গলায় ঝুলিয়ে, আবার কেউ রণাঙ্গনে শহীদ। আবার অনেকে শরণার্থী শিবিরে বা অন্যত্র সেবামূলক কাজে মগ্ন থেকেছেন।

যারা সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী দেশে যাননি, নিরাপত্তার ভয় না করে দেশে থেকে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের আনুষঙ্গিক কাজে অংশ নিতে, তাদের কেউ কেউ পাক নেতাদের হাতে ধরা পড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বা পাকসেনাদের যৌনলালসার শিকার হয়ে দুঃসহ জীবন-যন্ত্রণায় শেষ হয়েছেন, কী এদের পরিচয়? এরা কি মুক্তিযোদ্ধা নন?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের বাইরে অবস্থানরত নারীদের একাংশও নানাভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রেখেছেন, যেমন রেখেছেন প্রবাসী পুরুষ। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ ভারতের একাধিক স্থানে বাংলাদেশি নারীদের বিচিত্র অবদানমূলক ভূমিকা সর্বাধিক। সেখানে রয়েছে ভারতীয় বাঙালি নারীদের বিশেষ ইতিবাচক ভূমিকা। এদের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সদস্য বা নেত্রী। অনেকে আবার সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেত্রী বা কর্মী।

এরা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বা জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আগরতলা থেকে কলকাতা-কেন্দ্রিক শরণার্থী শিবির ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পগুলোতে সর্বাত্মক সাহায্য, সহায়তা ও সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়েছেন এবং অনুরূপ সেবা ব্যবস্থা সংগঠিত করেছেন। এদের সংখ্যা কম নয়। এদের ক’জনের নাম সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে? ক’জনের নাম আমরা জানি বা তা সরকারি নথিপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে?

এদের কর্মতৎপরতায় আরও ছিল প্রবাসে থেকেও পূর্বোক্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ, যেমন খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ এবং তা আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণশিবিরে এবং অন্যত্র যথাযথস্থানে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা। এদের কেউ শরণার্থীদের চিকিৎসাসেবাদানে সহযোগী ব্যবস্থা হিসেবে নার্সিং স্কোয়াড গঠনে সাহায্য করেছেন বলেও জানা যায়।

এছাড়া ছিল অর্থসংগ্রহের মতো কঠিন কাজ। অর্থ সংগ্রহের চেয়েও সমস্যাসংকুল ছিল তা যথাযথ স্থানে পাঠানো এবং তার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা। এসব ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সংখ্যক সমাজ সেবিকার নামও উল্লেখযোগ্য। তবে উল্লিখিত কর্মকাণ্ডের উদ্যোক্তা হিসেবে বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি নারীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। যেমন মৈত্রেয়ী দেবী, ড. ফুলরেনু গুহ, গৌরী আইয়ুব, মনিকুন্তলা সেন, ইলামিত্র প্রমুখ বিভিন্ন ঘরানার নারী। মৈত্রেয়ী দেবী তো যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে নারী ও শিশু পুনর্বাসনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

এক কথায় প্রবাসী পূর্ববঙ্গীয় নারীদের পাশাপাশি ভারতীয় বাঙালি নারী ও ইউরোমার্কিন বিদেশিনীদেরও সেবাব্রতা ভূমিকা পালনের উদাহরণ রয়েছে। এদের সাহায্য সহযোগিতা মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যে ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু বিচ্ছিন্ন কিছু লেখার বাইরে এদের সবাই বাংলাদেশে সরকারিভাবে স্বীকৃত ইতিহাসে উল্লিখিত নন। এ বিষয়ে গবেষাণাকর্মের সুযোগ তখন ছিল, এখনও কিছুটা আছে যাতে এ সম্পর্কে সঠিক প্রামাণ্য ইতিহাস রচিত হয়।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল মুক্তিযুদ্ধে নিহত, ধর্ষিত নারীদের সাহসিকতার ইতিহাস ও ভূমিকা এবং তাদের সঠিক তালিকা সরকারি উদ্যোগে প্রণয়ন এবং তা মুক্তিযোদ্ধাদের সাধারণ তালিকার বাইরে পৃথকভাবে। এ কাজটি জরুরি মনে করি।

 

লেখক: কবি, প্রবন্ধকার, গবেষক এবং ভাষাসংগ্রামী।