logo
আপডেট : 27 April, 2019 02:30
আইএসের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত!
মেইল রিপোর্ট

আইএসের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত!

সিরিয়ায় সন্ত্রাস চালাতে ট্যাংক ব্যবহার করেছে আইএস। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে কথিত লড়াইয়ের কথা বলে এলেও আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই একবার বলেছিলেন, এসব মনভোলানো বুলি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাসহ সামরিক বাহিনীই ইসলামিক স্টেটের পেছনের শক্তি হিসেবে কাজ করছে। সামরিক ও রাজনৈতিক রসদ যুগিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটিকে করে যাচ্ছে সর্বোত পৃষ্ঠপোষকতা।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে আফগানিস্তানে সরকার চালানো হামিদ কারজাইয়ের ওই বিস্ফোরক বক্তব্য আবার সামনে এসেছে। সূত্রের বরাত দিয়ে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এমন একটি খবর এসেছে ভারতের ইকোনমিক টাইমসেও।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সিরিয়া ও ইরাকে শোচনীয় পরাজয়ে আইএস নিশ্চিহ্ন হওয়ার হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু মার্কিন বাহিনী এই গোষ্ঠীটির সদস্যদের আফগানিস্তানে ঢোকার সুযোগ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ভূবেষ্টিত দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফেরানোর অজুহাতে শান্তির আলোচনা চালিয়েছে।

অভিযোগে বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানের ভেতরে প্রায়ই হেলিকপ্টারে করে অস্ত্র ঢোকানো হচ্ছে। ওই এলাকার আকাশপথ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। তবে আজ পর্যন্ত তারা ওই হেলিকপ্টারগুলোকে চিহ্নিত করা বা আটকানোর চেষ্টা করেনি। সেজন্য এ ধারণা পোক্ত হয় যে, জঙ্গিদের হাতে অস্ত্র পৌঁছানোয় মার্কিন বাহিনীর হাত আছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই এপ্রিলের শুরুতেই কাবুল থেকে আইএসের ছয় মিডিয়াকর্মীকে গ্রেফতার করে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী। আটক হওয়া জঙ্গিরা ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আইএসের প্রচারণা চালাতো। এরপর নাংগারহার প্রদেশে আরেক অভিযানে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা আইএসকে বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহ করতো। ওই অভিযানে প্রায় ১২ হাজার ৫০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। 

আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে লড়াইরত তালেবানদের ওপর কয়েক সপ্তাহ আগে কুনার প্রদেশে হামলা চালায় আইএস। এরপর থেকেই আইএস, তালেবান ও আফগান বিশেষ বাহিনীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

হামিদ কারজাই তার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমার মতে মার্কিন বাহিনীর পূর্ণ উপস্থিতি, নজরদারি, সামরিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমেই আইএসের উত্থান ঘটেছে। উত্থান ঘটেছে তাকফিরিদের (এমন মতবাদী, যারা নিজেদের ছাড়া বাকিদের কাফির ভাবে)। দুই বছর ধরে বেসামরিক আফগানরা এর যন্ত্রণা ভোগ করছে। তারা কেঁদেছে, চিৎকার করে সাহায্য চেয়েছে। কিন্তু কিছুই করা হয়নি।

আবার ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল নাংগারহার প্রদেশে আইএস থাকার অজুহাতে ১১ টন বিস্ফোরক সমৃদ্ধ ‘মাদার অব অল বোম্ব’ও (এমওএবি) যুক্তরাষ্ট্র নিক্ষেপ করে বলে উল্লেখ করেন হামিদ কারজাই।

নতুন করে সামনে আসা এ অভিযোগের বিষয়ে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী একটি দেশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কথিত ‘খিলাফত’র ভয়ঙ্কর ‘আদর্শ’ প্রতিষ্ঠায় বিধ্বংসী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আইএস আফগান শাখার নেতৃত্বে যে আস্তানা আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে গড়ে উঠছে, তা দিনে দিনে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার ঘাঁটি হয়ে উঠছে। আইএস চাইছে, এই আফগান ঘাঁটি ব্যবহার করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করতে।

তবে এ ধরনের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। উল্টো তাদের দাবি, মার্কিন ও আফগান বাহিনীর চাপেই আইএস ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং আফগানিস্তানে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভিন্ন এলাকা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।