প্রতিদিন মামলাজট বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে প্রতি দশ লাখ লোককে মাত্র ১০ জন বিচারক বিচারিক সেবা দিচ্ছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ১০৭, কানাডায় ৭৫, ব্রিটেনে ৫১, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১৮ জন বিচারক কাজ করে থাকেন। বললেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
শনিবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।
সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটি ও জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (জিআইজেড) যৌথভাবে ‘ন্যাশনাল জাস্টিস অডিটের ফলাফল উপস্থাপন’ বিষয়ক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটির সভাপতি ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় অডিটের ফলাফল উপস্থাপনা করেন আন্তর্জাতিক পরামর্শক এরিক ক্যাডোরা। অন্যদের মধ্যে জিআইজেড বাংলাদেশের হেড অব প্রোগ্রাম (রুল অব ল) প্রমিতা সেনগুপ্ত ও জুডিথ হারবার্টসন বক্তব্য দেন।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের মতে, মামলাজট নিরসন ও বিচার প্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সঠিক মামলা ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ উন্নত অনেক দেশে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে অধিকাংশ মামলা নিষ্পত্তির উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশেও এই প্রক্রিয়া অনসুরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, বিচারক সঙ্কট, অবকাঠামোগত অপ্রতুলতাকে মামলাজটের অন্যতম কারণ মনে হলেও শুধুমাত্র বিচারক বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে এ অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এর থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সঠিক মামলা ব্যবস্থাপনা, যা নিশ্চিত করতে আমাদের দুটি ধাপে কাজ করতে হবে। প্রথমত, প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় মামলা দায়েরের হার কমানো এবং দ্বিতীয়ত, মামলা দায়েরের পর প্রতিটি পর্যায়ে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রুত সময়ে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারাধীন মামলার তুলনায় বিচারকের অপর্যাপ্ততা থাকায় প্রতিদিন মামলাজট বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মামলা পারস্পরিক বোঝাপড়া বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। বড় জোর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মামলা নিষ্পত্তি হয় আদালতে। আর আমাদের দেশে এর চিত্র ঠিক তার বিপরীত। এদেশে কেবল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মামলা নিষ্পত্তি হয়ে থাকে বোঝাপড়া বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে। আর ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয় আদালতে।