logo
আপডেট : 4 May, 2019 02:21
ফণীর তাণ্ডবে তছনছ ওড়িশা, নিহত ৭
ভেঙে গেছে বাড়িঘর, টাওয়ার * উপড়ে পড়েছে শত শত গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি
মেইল রিপোর্ট

ফণীর তাণ্ডবে তছনছ ওড়িশা, নিহত ৭

ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ভারতের ওড়িশা উপকূল ও পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু এলাকা। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওড়িশার পুরীসহ অন্তত চারটি জেলা। শত শত গাছপালা উপড়ে, ভেঙে, বাড়িঘর তছনছ করে উদ্দাম গতিতে ছুটে চলে ফণী।

বহু জায়গায় রেল লাইন উপড়ে গেছে। রাস্তার ওপর ভেঙে পড়েছে টাওয়ার,বৈদ্যুতিক খুঁটি। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঝড়ের নারকীয় তাণ্ডবে ওড়িশায় অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর এএফপি, এনডিটিভি, নিউজ১৮, আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের।

খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ফণী ওড়িশার উপকূলীয় তীর্থ নগরী পুরীর ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গোপালপুর আর চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করে। এ সময় আশপাশের এলকা তছনছ করে দেয় ফণী।

বিশেষ করে পুরী, কটক, ভুবনেশ্বর, বালাসোর, চাঁদিপুর, গোপালপুর একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট হয়ে পড়ে জনশূন্য। ওই সময় বাতাসের টানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করার পর ঘূর্ণিঝড়টি অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হয়। পুরী, ভুবনেশ্বরের প্রবীণদের অনেকেই বলেছেন, প্রকৃতির এমন ভয়াল-ভয়ানক রূপ আগে কখনও দেখেননি তারা। ঝড় কমে এলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন ওড়িশা পুলিশসহ স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মীরা।

ফণীর প্রথম শিকার পুরী এবং সংলগ্ন এলাকাগুলো। আগে থেকেই পুরীর সব হোটেল, লজ খালি করে দেয়া হয়েছিল। কার্যত জনমানবশূন্য ছিল সৈকত শহর। কিন্তু রক্ষা পায়নি স্থায়ী কাঠামো, বাড়িঘর, গাছপালা। ফুঁসে ওঠে সমুদ্র। বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ে উপকূলে। বাঁধ উপচে শহরে ঢুকে পড়ে পানি। নিচু এলাকাগুলো হয়ে যায় জলমগ্ন।

ওড়িশার স্পেশাল রিলিফ কমিশনার বিষ্ণুপদ বলেন, আমরা কয়েকজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করছি। তাদের মধ্যে এক বৃদ্ধা একটি আশ্রয় কেন্দ্রে হৃদরোগজনিত কারণে মারা গেছেন। অন্য একজন আমাদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঝড়ের মধ্যে বাইরে বের হন এবং গাছ চাপা পড়ে মারা যান। গাছের নিচে চাপা পড়া ওই কিশোরের বাড়ি পুরীতে। এছাড়া নৈয়াগড়ে নির্মাণাধীন একটি স্থাপনা থেকে ইট পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা গেছে, কোথাও ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়েছে বিএসএনএলের টাওয়ার, কোথাও আবার উড়ে গেল বাড়ির ছাদের অস্থায়ী ছাউনি, ভুবনেশ্বর হোস্টেলের ছাদের কংক্রিটের ছাউনি উড়ে গেছে ঝড়ে, পুরীতে ঝড় ও বৃষ্টির চোটে চারপাশে নেমে আসে ঘন অন্ধকার, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে জিনিসপত্র। কোথাও আবার উল্টে গিয়েছে বাস। এক জায়গায় আবার মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে সুবিশাল ক্রেন।

প্রবল বাতাসে এভারেস্টের প্রায় ২০টি তাঁবু উড়ে গেছে। এগুলো ছিল ক্যাম্প টুতে ৬৪০০ মিটার উঁচুতে। এক্সপিডিশন অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ইশ্বরী পাওদেল বলেন, প্রবল ঝড়ে তাঁবুগুলো উড়ে যায়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে ওড়িশার পুরীতে ফণী আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের দিঘা, মন্দারমনিসহ উপকূলবর্তী অঞ্চলে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হয় তুমুল ঝড়বৃষ্টি। শঙ্করপুরে ভেঙে পড়ে হাইটেনশন বিদ্যুতের খুঁটি। বেলা ৩টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরে সব বিমান উঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বন্ধ হয়ে যায় ভুবনেশ্বরের বিজু পট্টনায়ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এদিকে ফণীর আগমনী বার্তা পাওয়ার পরেই বাতিল করে দেয়া হয়েছে একাধিক ট্রেন।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই ওড়িশা লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলোতে ঝড়ের অগ্রভাগের ছোবল পড়ে। এ সময় আশপাশের প্রায় ২৫টি বাড়ির চাল উড়ে যায়। মাত্র ১৫ সেকেন্ডের দমকা হাওয়া ফণীকে ঘিরে মেদিনীপুরবাসীর আতঙ্ক কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।

আগাম প্রস্তুতি : ফণী পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবেলায় ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শেষ করেছে ওড়িশা প্রশাসন। তার মধ্যে রয়েছেন ৫৪২ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীও। শুধু গঞ্জাম জেলা থেকেই সরানো হয়েছে ৩ লাখ মানুষকে। পুরী জেলায় সেই সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার। তাদের খাবার সরবরাহের জন্য খোলা হয়েছে ৫ হাজার গণরান্নাঘর। এছাড়া ত্রিপল, শুকনো খাবার মজুদ রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত।

বাতিল ভোট প্রচার : ৬ মে লোকসভার পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ। প্রচারের জন্য হাতে আর মাত্র এক দিন বাকি থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে প্রচার কর্মসূচি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল, বিজেপিসহ সব রাজনৈতিক দল।

পাশে থাকার বার্তা নরেন্দ্র মোদির : দুর্যোগের সময় পাশে থাকার বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, গোটা দেশ এ তিন রাজ্যের মানুষের সঙ্গে আছে। কেন্দ্রীয় সরকার তিনটি রাজ্যের (ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছে। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্স, ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী, সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনী সবাই এ তিনটি রাজ্যে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন মানুষদের আমি বলছি আপনারা নিশ্চিত থাকুন সরকার সব রকমভাবে আপনাদের পাশে আছে। শুক্রবার রাজস্থানের সভা থেকে এসব কথা বলেন তিনি।

ভূমিকম্পের আঘাত : ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে যখন ফণীর আতঙ্ক তুঙ্গে, ঠিক তার আগে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে হিমাচল প্রদেশ। ভোর ৪টা ৩২ মিনিটে প্রদেশটির মান্ডি জেলাসহ আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। এ সময় অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ২। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মান্ডি অঞ্চল। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।