মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইচ্ছার বিপরীতে গিয়ে নীতিনির্ধারণী সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ। ফেড জানিয়েছে, সুদের হার ২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশের সীমাতেই থাকছে।
বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত মঙ্গলবার সুদের হার নিয়ে টুইট করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই টুইটে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ‘রকেটের’ গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে সুদের হার ১ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। তবে এরপরও অটল অবস্থানে রইল ফেড।
ট্রাম্প বলেন, ‘বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি আমরা দেখেছি, ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এখন ফেড যদি সুদের হার কমায় আর আমাদের মূল্যস্ফীতির হারও যেহেতু কম, আমরা রেকর্ড অবস্থানে যেতে পারি।’
এই মন্তব্যের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল বলেন, ‘আমরা একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং এর অর্থ আমরা স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছি না। আমরা তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাতেও যাচ্ছি না এবং তাদের আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে দেব না।’ এরপর এক বিবৃতিতে নিজেদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ফেড জানায়, সুদের হারে এখন ধৈর্য রাখছে তারা। আর এর তীব্র সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প।
ফেড বলছে, প্রবৃদ্ধির অবস্থা বেশ ভালো, তবে ভোক্তার ব্যয় এবং ব্যবসায়ে স্থায়ী বিনিয়োগ প্রথম প্রান্তিকে বেশ কমেছে। তারা এটাও বলছে, মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য অনুযায়ী কম। ফেডের লক্ষ্য মূল্যস্ফীতিকে ২ শতাংশে রাখা। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ। মার্চে তা আরও কমে হয় ১ দশমিক ৬ শতাংশ।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতেই এ বছর সুদের হার কমানো হবে না- এমন ইঙ্গিত দেয় মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার কমানোর আহ্বান জানায় হোয়াইট হাউস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ল্যারি কুডলো মনে করেন, বর্ধিত সুদের হারের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি কমে গেছে। এই বিষয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধের শুরু হয়। গত মার্চে ট্রাম্প মন্তব্য করেন, সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ভুল করেছে। তারা ভুল সময়ে তারল্য নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এত সব কথার চাপেও মাথা নত করেনি ফেড। দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৭ সালের মার্চে ফেড যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী সুদের হার দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ায়। সে বছর দুই দফা বাড়ানো হয়। ২০১৮ সালেও কয়েক দফা সুদের হার বাড়ায় মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৮ সালের মহামন্দায় আর্থিক সংকটে পড়ে মার্কিন নীতিনির্ধারকরা ঋণগ্রহণ ও ব্যয় বাড়ানোর জন্য সুদের হার কমিয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের মার্চে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সুদের হার বাড়ায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। ওই সময় নীতিনির্ধারণী সুদের হার শূন্য দশমিক ২৫ বাড়ানোর ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় এই ব্যাংকের তখনকার প্রধান জ্যানেট ইয়েলেন। সুদের হার বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৭৫ থেকে ১ শতাংশ করা হয়।