॥ শামীমুল হক ॥
রজনী হইসনা অবসান/ আজ নিশিতে আসতে পারে/ বন্ধু কালাচাঁন। গানে গানে এমন আকুতি কি শুনেছিল রজনী? না। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে সময় এগিয়ে যাচ্ছে। রজনীর পর রজনীর অবসান হচ্ছে। অথচ কিছু কিছু মুহুর্ত যেন শেষ না হয়- এমন চাওয়া থাকে হৃদয়ে। হৃদয়ের এ চাওয়া কি পূরণ হয়? না! এ চাওয়া পূরণ হয় না। আসলে মানুষের চাওয়ায় কি আসে যায়? স্টিয়ারিং যদি অন্যের হাতে থাকে তাহলে কারো কিছু করার থাকে না। এখানেই অসহায় সবাই। তবে ওইসব মুহুর্ত স্মৃতিতে ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে মানুষ।
ক্যামেরা কিংবা ভিডিওতে ধারণ করে রাখে। কখনো সেই মুহুর্তের কথা মনে হলে যতেœ রাখা ছবি কিংবা ভিডিও বের করে দেখে। আফসোস করে। অতীতের কথা মনে করে নষ্টালজিয়ায় ভূগে। কখনো কখনো চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পড়ে জল। সত্যিই মানুষ কত কিছুই না চায়। ভাবে, এটা যদি এভাবে হতো। ওটা যদি সেভাবে হতো। সেটাতো আর হয়না। কিভাবেই বা হবে?
পথহারা পথিক পথ ফিরে পেতেও পারে। আবার কখনো পথ ফিরে নাও পেতে পারে। একবার পথ হারালে আবার পথে ওঠা যে কত কঠিন যারা পথ হারিয়েছে শুধুমাত্র তারাই জানেন। তাই পথে উঠলে সবসময় মনে রাখতে হয়, পথ যেন না হারাতে হয়। এটা মনে থাকলেই সঠিক পথে চলা যায়। আর বেপরোয়া গতিতে চললে পথ থেকে ছিটকে পড়তে হয়। ঘটে দুর্ঘটনা। কখনো কখনো নদীতে তলিয়ে যেতে হয়। সেখান থেকে উঠার আর কোন উপায় থাকেনা। পৃথিবীতে কত উত্থান পতন হয়েছে। ইতিহাসের পাতা ভারি হয়েছে। পাল, সেন, মোঘল, নবাব আমলের বিলুপ্তি ঘটেছে বহু আগে। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজো জ¦ল জ¦ল করে সেসব দিনের স্মৃতি। কথায় আছে-আকাশে তাকিয়ে পথ চললে হোচট খেতে হবেই। তাই মাটির দিকে তাকিয়ে পথ চলা সবার জন্য ভাল। এই ভালটাই আমরা বুঝতে শিখিনি। আর শিখিনি বলেই উল্টোটা করি। ফলশ্রুতিতে জীবন সংগ্রামে পথ হারা পথিকের মতো ভবঘুরে হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। তারপরও আমরা যা করি তাকে ঠিক বলে মনে করি। কেউ যদি বেঠিক বলে শুধরে দিতে চায় তাকে কটু কথা বলি।
আচ্ছা এমন কিছু কি আছে যেখানে বিতর্ক নেই? অন্তত আমি খুঁজে পাইনা। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো বিতর্কও রং বদলায়। রাজধানীর লোকাল বাসগুলোই তার বড় প্রমাণ। কোন স্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠলে দেখা যায় সিট খালি নেই। আর যারা বসে আছেন সিটে তাদের কেউ কেউ চিৎকার করে উঠেন উঠাইছস কে? সিটিং ভাড়া নিবি আর দাঁড়াইয়া নিবি, এইটা হবেনা। ভাড়া নিতে আয় লোকাল ভাড়া দিমু। দাঁড়ানোদের মধ্যে কেউ কেউ উল্টো চিৎকার দেয় আধাঘণ্টা ধরে খাড়াইয়া রইছি। একটা গাড়িতে উঠতে পারিনা। ভাড়া কি কম দিমু। কিন্তু আরেকদিন দেখুন বসে যাওয়া লোকটিকে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। আর দাঁড়িয়ে যাওয়া লোকটি বসে যাচ্ছে। এরই সঙ্গে তাদের মুখের ভাষাও উল্টে গেছে। আসলে অবস্থানের কারণেই বিতর্কের রং বদলে যায়। এক সময় জাতীয় সংসদ খুলে বসে থাকতো দেশের মানুষ। বিতর্ক দেখাই ছিল মূল কারণ। ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে একরকম কথা, আবার বিরোধী দল থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ। যুক্তি পাল্টা যুক্তি এক রসাত্মক হয়ে উঠত মানুষের কাছে। তাই সবাই সংসদ চলাকালে টিভি খুলে এসব দেখতো। এখন আসলে সে রকম সংসদ নেই। তাই এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। স্কুল কলেজগুলোর বিতর্ক অনুষ্ঠানেও দেখা যায় দু’পক্ষই বিষয়বস্তুর পক্ষে বিপক্ষে ঝড় তুলছে। আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজেদের বক্তব্যকে বাস্তব প্রমাণ করাতে। কিন্তু অন্য কোন বিতর্ক অনুষ্ঠানে এ দলই যদি অবস্থান বদল করে বসে তাহলে তাদের সুরও পাল্টে যায়। আগের বিতর্ক অনুষ্ঠানে যে বক্তব্য সমর্থন দিতে পারেনি এখানে সে বক্তব্যকে সমর্থনই দিচ্ছেনা শুধু তাদের বক্তব্য যে সঠিক ও গ্রহণযোগ্য তা প্রমাণ করতে নানা উদাহরণ তুলে ধরছে।
সমাজের সর্বত্র আজ বিভক্তি। আফসোস- এ বিভক্তি কোন যুক্তির নয়। এ বিভক্তি শুধু স্বার্থের। স্বার্থের জন্যই একটি বিষয়ে একেক অবস্থানে একেক বক্তব্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। অর্থাৎ ঝোপ বুঝে কোপ মাড়ার মতো। কিন্ত একবারও কেউ চিন্তা করেনা আমি কি বলছি। আগে কি বলেছি। তাইতে বলি, রজনীর যেন অবসান না হয়। সময় যেন চলে না যায়। কথা যেন পরিবর্তন না হয়। ট্রেজারি বেঞ্চ কিংবা অপজিশন যেখানেই থাকি না কেন বাস্তবই যেন বেরিয়ে আসে মুখ থেকে।