লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপে ভোট উৎসবের চিত্রটা এমনই। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের ৫৯টি আসনে আজ সেয়ানে সেয়ানের লড়াই। কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি- সব দলেই বাঘা-বাঘা প্রার্থী।
উত্তরপ্রদেশের রাজপুত্র অখিলেশ যাদব, মধ্যপ্রদেশে দিগ্বিজয় সিং, কেন্দ্রশাসিত দিল্লিতে কংগ্রেসের তিন তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের বিপরীতে বিজেপির মনোজ তিওয়ারি, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি- সব মিলিয়ে ভোটের মাঠ আজ গরম।
গত পাঁচ ধাপে একসঙ্গে এত হেভিওয়েট প্রার্থী নিয়ে চিন্তায় পড়তে হয়নি ভোটারদের। সাত রাজ্যের এবার প্রার্থী মোট ৯৭৯ জন হলেও কয়েকটি আসনের দিকে থাকবে সবার নজর। কোথাও থাকছে দ্বৈত আবার কোথাও থাকছে ত্রিভুজ লড়াইয়ের হাঙ্গামা।
ভোপাল, মধ্যপ্রদেশ: ‘হ্রদের শহর’ খ্যাত মধ্যপ্রদেশের ভোপাল এবারের লোকসভার সবচেয়ে আলোচিত আসনগুলোর একটি। আসনটির দখলে লড়ছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা দিগি¦জয় সিং। তার বিরুদ্ধে লড়ছেন বিজেপির বিতর্কিত প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা। ২০০৮ সালে মালেগাঁও সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম অভিযুক্ত আসামি তিনি। ব্যাপক বিতর্ক সত্ত্বেও জামিনে মুক্তি পাওয়া সাধ্বীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিজেপি। আজকের ভোটে আসনটিতে বিজেপি ও কংগ্রেসের হাড্ডাহাড্ডি দ্বৈত লড়াইয়ের আভাস দেখা যাচ্ছে।
নর্থ ইস্ট দিল্লি, দিল্লি : কেন্দ্রশাসিত দিল্লির নর্থ ইস্ট দিল্লি আসনটি কংগ্রেস ও ক্ষমতাসীন বিজেপি উভয় দলের জন্যই খুব কাক্সিক্ষত। আসনটি পুনরুদ্ধারে দিল্লির তিন তিনবার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শীলা দীক্ষিতকে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। বিপরীতে লড়ছেন বর্তমান এমপি ও দিল্লি বিজেপির প্রধান মনোজ তিওয়ারি। লড়াইয়ে রয়েছেন আম আদমি পার্টির (এএপি) দিলিপ পান্ডেও। অন্যান্য দলের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বহুজন সমাজ পার্টির রাজবীর সিং, রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়ার মোহাম্মদ হাসান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কানহাই লাল। এবার বহুমাত্রিক এ লড়াই বেশ জমবে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ২০১৪ সালের ভোটে এএপির প্রার্থী আনন্দ কুমারকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেন মনোজ। এর আগেরবার ২০০৯ সালে বিজেপির বিএল শর্মা প্রেমকে ধরাশায়ী করেন কংগ্রেসের জয় প্রকাশ আগারওয়াল।
গুনা, মধ্যপ্রদেশ : আসনটিকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে নিয়েছেন কংগ্রেসের জ্যোতিরিন্দ্র সিন্দিয়া। ২০০২ সাল থেকে আসনটিতে একটানা জিতে চলেছেন তিনি। এবারও ফের লড়াইয়ে আছেন। তার বিরুদ্ধে মাঠে আছেন সাবেক কংগ্রেস এমপি কেপি যাদব। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে যোগ দেন ক্ষুব্ধ যাদব।
সুলতানপুর, উত্তরপ্রদেশ : সুলতানপুরের লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গান্ধীকে নামিয়েছে বিজেপি। গতবার আসনটিতে জয়ী হয়েছিলেন মানেকার ছেলে ফিরোজ বরুণ গান্ধী। বিজেপির বিরুদ্ধে সাবেক সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিংকে নামিয়েছে কংগ্রেস। বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী চন্দ্র ভদ্র সিং উপস্থিতি সুলতানপুরের লড়াইকে ত্রিমাত্রিক রূপ দিয়েছে। একসময়ের কংগ্রেসের ঘাঁটি এ সুলতানপুরকে ১৯৯১ সালে প্রথমবারের জন্য নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় বিজেপি।
এলাহাবাদ, উত্তরপ্রদেশ : উত্তরপ্রদেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসন। অতীতে আসনটিতে লড়াই করেছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী। ভারতের সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালে পরপর দুইবার এবং ভিপি সিং ১৯৮০ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ পরপর তিনবার জয়ী হয়ে পার্লামেন্ট গেছেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা মুরলি মনোহর যোশী। এবার লড়াইয়ে আছেন বিজেপির রিতা বহুগুনা যোশী, সমাজবাদী পার্টির রাজেন্দ্র সিং প্যাটেল ও কংগ্রেসের যোগেশ শুক্লা। ২০১৪ সালে সমাজবাদী পার্টির কুনওয়ার রেওয়াতিকে হারিয়ে আসনটি দখল করেন বিজেপির শ্যামা চরণ গুপ্তা।
আজমগড়, উত্তরপ্রদেশ : উত্তরপ্রদেশে আরেক গুরুত্বপূর্ণ আসন আজমগড়। আসনটিতে মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে আছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। লড়ছেন বিজেপির প্রার্থী ভোজপুরি সিনেমার আলোচিত অভিনেতা দ্বিনেশ লাল যাদব। ২০১৪ সালে লড়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন অখিলেশের বাবা সমাজবাদীর পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব।
সোনিপাত, হরিয়ানা : জাট অধ্যুষিত আসনটিতে ত্রিমাত্রিক লড়াই জমে উঠেছে। লড়ছেন হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা ভুপিন্দার সিং হুদা, বর্তমান বিজেপি সংসদ সদস্য রমেশ কৌশিক ও জননায়ক জনতা পার্টির দিগ্বিজয় সিং চৌতালা। লড়াইয়ে আছেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদলের সুরিন্দর কুমার চিকারা। ১৫ লাখ ভোটারের এই আসনে ২০১৪ সালে বড় ব্যবধানে কংগ্রেসের জগবীর সিং মালিককে হারিয়ে দেন বিজেপির কৌশিক।
বাকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ : পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম আলোচিত আসন বাকুড়া। ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, বিজেপির ড. শুভাস সরকার ও সিপিআইএমের অমীয় পত্রের মধ্যে ত্রিভুজ লড়াইয়ের হাঙ্গামা দেখতে পাবে ভারত। ২০১৪ সালে এই আসনে সিপিআইএমের বাসুদেব আচার্যকে পরাজিত করেন সিনেমার নায়িকা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া মুনমুন সেন। এবার তার জায়গায় সুব্রত মুখার্জিকে মাঠে নামিয়েছেন তৃণমূল প্রধান মমতা ব্যানার্জি।
ধানবাদ, ঝাড়খণ্ড : ঝাড়খণ্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবসতিপূর্ণ ধানবাদ ষষ্ঠ ধাপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে হাজির হয়েছে। এখানে লড়াইটা হবে দ্বৈত। লড়াইয়ে মাঠে আছেন বিজেপির বর্তমান সংসদ সদস্য পশুপতি নাথ সিং ও কংগ্রেসের প্রার্থী ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক কীর্তি আজাদ। পরপর দুই বারের এমপি পশুপতি তৃতীয়বারের জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। ২০১৪ সালে কংগ্রেসের অজয় কুমার দুবেকে ধরাশায়ী করেছিলেন। তবে এবার তার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন কীর্তি আজাদ।
সিওয়ান, বিহার : বিহারের সিওয়ানে দ্বিত লড়াইয়ে রয়েছেন রাষ্ট্রীয় লোকদলের (আরজেডি) কারাবন্দি নেতা এমপি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দীনের স্ত্রী হেনা সাহাব ও জেডিইউ প্রার্থী কবিতা সিং। ২০১৪ ও ২০০৯ সালে আসনটিতে লড়াই হয়েছে বিজেপির প্রার্থী ওম প্রকাশ ও আরজেডির সাহাবুদ্দীনের মধ্যে। দুই সাহাবকে পরাজিত করেছেন ওমপ্রকাশ।
গোয়ালিয়র, মধ্যপ্রদেশ : মধ্যপ্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে গোয়ালিয়র সিটি মেয়র বিবেক শেজওয়াকারকে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। তার বিরুদ্ধে অশোক সিংকে ফের আরেকবার প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। ২০১৪ সালে আসনটির জয় ছিনিয়ে নেন বিজেপির নরেন্দ্র সিং তোমার।
হিসার, হরিয়ানা : হরিয়ানার এ আসনটিতে তিমাত্রিক লড়াই দেখা যাবে। লড়াইয়ের মাঠে আছেন জননায়ক জনতা দলের বর্তমান সংসদ সদস্য দুষ্মন্ত চৌতালা, বিজেপির ব্রিজেন্দ্র সিং ও কংগ্রেসের ভব্য বিসনয়। গত পাঁচ বছরে নিজের যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি দেখিয়ে আরেকবার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দুষ্মন্ত। নতুন নতুন প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে মূলধারায় ফেরায় চেষ্টা করছেন অন্যরা।