॥ শামীমুল হক ॥
অপচয় এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। যে যত বেশি অপচয় করতে পারে সে তত আধুনিক। সমাজে এমন ধারণাই এখন জন্মেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এ তালিকায় এখন যুক্ত হয়েছে প্রেম ভালোবাসাও। হ্যাঁ, প্রেম, ভালোবাসায়ও এখন অপচয় হচ্ছে। যুবক, যুবতীরা লাইন ধরে প্রেম অপচয়ে শরিক হচ্ছে। একজন যুবক বা যুবতী একাধিক প্রেমে জড়িয়ে পড়ছে। সকালে একজনের সঙ্গে প্রেমতো দুপুরে আরেকজন। বিকালে একজনের সঙ্গে ভালোবাসা বিলাচ্ছেতো রাতে আরেকজনকে দিচ্ছে প্রেম। এই যে এত প্রেমের অপচয় তা কিন্তু সমাজকে নষ্ট করে দিচ্ছে।
অন্যদিকে এত বেশি প্রেমের অপচয় তারা করছে যে এক সময় প্রেম তাদের মন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তখনই সে হয়ে উঠে প্রেমহীন কঠিন এক মানব। যার মাধ্যমে সমাজ উপকারের বদলে পায় অপকার। দেখা যায়, আগেই প্রেম অপচয়ের পর কঠিন হৃদয় নিয়ে জীবন সঙ্গী খুঁজে নেয় তারা। কিন্তু তাদের জীবনে আর প্রেম আসে না। সংসার হয়ে উঠে বিষাদময়। পরিণতি হয় ভয়াবহ। শুধু কি প্রেমে অপচয়? না! অপচয় হচ্ছে সবকিছুতে। সমাজ, সংসার, রাষ্ট্র সবকিছুতেই এখন লেগেছে অপচয়ের ছোঁয়া। এই যে রাজধানী ঢাকায় এখন চলছে পানির জন্য হাহাকার। গ্যাসের জন্যও চলছে আহাজারি। কিন্তু পানির অপচয় কি বন্ধ হয়েছে? গ্যাসের অপচয় কি বন্ধ হয়েছে? হাহাকারের মধ্যেও পানি এলে দেখা যায় অপচয়ের যে কত কসরত। টেপ ছেড়ে দিয়ে কাপড় কাঁচা। বালতি উপচে পানি পড়ছে হরদম। গোসল করার সময়ও পানি ছেড়ে দিয়ে শরীর ঘষামাজা করছে। থালা, বাসন ধোয়ার সময়তো কথাই নেই। টেপ ওপেন। ধোয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা পড়তেই থাকে। আর কাজের বুয়ারাতো বেশি পানি ছাড়া কাজই করতে পারে না। একদিকে টেপ দিয়ে অনবরত পানি পড়বে। অন্যদিকে তারা কাজ করবে। এমনটা না হলে তাদের কাজে গতি আসে না। আর গ্যাস, সেতো অফুরন্ত। কখন যে চুলা জ্বলেছিল আল্লাহ মালুম। তা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস জ্বলেই যাচ্ছে। এই যে অপচয় এর জন্য আফসোসও নেই কারও। কিন্তু যখন দেখা যায় গ্যাস পাইপে টান পড়েছে। মিটমিট করে চুলা জ্বলছে। কখনো কখনো গ্যাসের অভাবে রান্না হচ্ছে না। তখন গিয়ে শুরু হয় কান্নাকাটি। তারপরও অপচয়ের কথা মনে থাকে না। গ্যাসের লাইন যখন আছে গ্যাস থাকতেই হবে এমন একটা ধারণা সবার। কিন্তু গ্যাসের এমন অপচয়ে একদিন গ্যাসফিল্ড গ্যাস শূন্য হয়ে যেতে পারে এ চিন্তা নেই কারো। কি অবাক কাণ্ড এক পয়সার একটি ম্যাচের কাঠির জন্য কোটি কোটি টাকার গ্যাস পুড়ানো হচ্ছে এমনিতে। একেবারেই অকাজে। অপচয়ের চূড়ান্ত সীমায় গিয়ে পৌঁছেছে গ্যাস অপচয়ের বিষয়টি।
আর দেখা যায়- কোথাও দাওয়াত দিলে সেখানেও বইছে অপচয়ের প্রতিযোগিতা। কেউ খাবে না তাকে জোর করে দেয়া হচ্ছে খাবার। হাতজোড় করে মাফ চেয়েও রক্ষা পাচ্ছেন না তিনি। এ কি আশ্চর্য কাণ্ড জোর করে খাওয়াতেই হবে। একবারও ভাবে না তারা এটা শুধু অপচয়ই নয়, যাকে খাওয়ানো হচ্ছে তার শারীরিক ক্ষতিও হতে পারে। রাস্তায় বেরুলে সময়ের অপচয় বহু দিনের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে লক্ষ কোটি ঘণ্টা অপচয় হচ্ছে মানুষের। এর ক্ষতিপূরণ দেয়ার সাধ্য কারো নেই। অর্থের অপচয় দেখা যায় চারদিকে। যার কাছে অর্থ আছে তিনি অর্থ অপচয় করছেন চোখ বন্ধ করে। হোটেল, বার আর আনন্দ ফুর্তিতে দিনে যে অর্থ ব্যয় করেন তারা, তা দিয়ে একমাস চলতে পারেন একটি দরিদ্র পরিবার।
অথচ এক শ্রেণির মানুষের অর্থ অপচয় না করলে ফ্যাশন পূরণ হয় না। আবার অনেককে দেখা যায় ঋণ করে হলেও সমাজ বজায় রাখছেন। কিন্তু কেন? ঋণ করে সমাজ বজায় রাখার দরকার কি? এটাওতো অপচয়। দেখা যায় মেয়ের বিয়েতে সমাজকে দেখাতে বড় আয়োজন করতে হবে। অথচ তার কাছে অর্থ নেই। এ অবস্থায় ঋণই তার একমাত্র পথ। আর মেধার অপচয়তো হচ্ছে অহরহ। কাকে কিভাবে জব্দ করা যাবে এ নিয়ে মেধার অপচয় সমাজের প্রায় সর্বত্র চলছে। তাইতো সমাজ হয়ে উঠেছে বিষাক্ত। ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়। সংখ্যায় তারা কম। ফলে অপচয়ের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না তারা। বাধ্য হয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে তারা। শেষ কথা- অপচয়কারীরা শয়তানের বন্ধু। অপচয় করার আগে বিষয়টি ভাবলে নৈতিক অবক্ষয় থেকে বাঁচানো যেত পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে।