logo
আপডেট : 27 June, 2019 01:52
বাবার সঙ্গে ভাসছে শিশুর লাশ
মেক্সিকো সীমান্তে আরেক আয়লান
মেইল রিপোর্ট

মেক্সিকো সীমান্তে আরেক আয়লান

রিও গ্র্যান্ডে নদীর তীরে এভাবেই পাওয়া যায় বাবা-মেয়ের নিথর দেহ

একটু উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনের প্রত্যাশায় নিজভূম ছেড়ে সপরিবারে আমেরিকায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেছিলেন এল সালভাদরের নাগরিক অস্কার আলবার্তো মার্টিনেজ রামিরেজ (২৫)।  কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না অস্কারের। মেয়েসহ নদীতে ডুবে মারা গেছেন তিনি।

মেক্সিকোর মাতামোরোসের তামালিপাস প্রদেশে নদীর ধারে গত সোমবার মিলেছে অস্কার ও তাঁর ছোট্ট মেয়ের মৃতদেহ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, মেক্সিকোর এক আলোকচিত্রী সর্বপ্রথম বাবা-মেয়ের মর্মস্পর্শী এ ছবি ক্যামেরাবন্দী করেন। এরপর দুজনের এই মৃতদেহের ছবি ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ছবিতে দেখা যায় মেক্সিকোর সাথে মার্কিন সীমান্তের অংশে রিও গ্র্যান্ডে নদীর একেবারে তীরের কাছাকাছি উপুড় হয়ে পড়ে আছে বাবা-মেয়ের নিথর দেহ। বাবার টি-শার্টির ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে রয়েছে মেয়েটি। তার একটি হাত বাবার টি-শার্টের গলার কাছ দিয়ে বেরিয়ে গলায় জড়িয়ে রয়েছে।

এই ছবিটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে তিন বছর বয়সের শিশু আয়লান কুর্দির কথা । ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশী সিরিয়ার এই শিশুটির মৃতদেহ ভেসে এসেছিল তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে। ২০১৫ সালের ওই ঘটনার ছবিটি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। সে সময় অন্য অনেকের সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল আয়লান ও তার পাঁচ বছরের ভাই। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যেতে চেয়েছিল গ্রিসে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি তারা। ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর আয়লানসহ ১২ শরণার্থীর মৃত্যু হয়। আয়লানের ভাইয়ের মৃতদেহ ভেসে ওঠে সাগরের অন্য পাড়ে।

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার প্রত্যাশায় এল সালভাদরের নাগরিক অস্কার তার দুই বছরের মেয়ে ভ্যালেরিয়া ও ২১ বছরের স্ত্রী তানিয়া ভানেসাকে নিয়ে গত রোববার বিকেলে (স্থানীয় সময় ) মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অবৈধ ও বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আর পা দেওয়া হলো না তাঁদের। রিও গ্রান্ডে নদী পার হতে গিয়ে ডুবে মৃত্যু হয়েছে অস্কার ও তাঁর মেয়ের। গত সোমবার তীরের কাছাকাছি বাবা-মেয়ের মরদেহ ভেসে ওঠে। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন অস্কারের স্ত্রী।

মেক্সিকোর একটি দৈনিক পত্রিকা সোমবার এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, রোববার মেয়েকে নিয়ে নদী পেরিয়ে আসেন অস্কার। এরপর মেয়েকে নদীর তীরে বসিয়ে রেখে স্ত্রীকে আনতে উত্তাল নদীতে নামেন অস্কার। কিন্তু মেয়ে ভ্যালেরিয়া বাবাকে ছাড়তে চাইছিল না। নদীতে ঝাঁপ দেয় ভ্যালেরিয়াও। অস্কার তখন মেয়েকে পিঠে নিয়ে তার গায়ের টি-শার্টের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু স্রোতের টানে পানিতে ডুবে যায় দুজনেই। স্ত্রীর চোখের সামনেই ভেসে যায় স্বামী-সন্তান।

এদিকে এ ঘটনায় এল সালভাদর ও মেক্সিকোতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এল সালভাদরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্দ্রা হিল বলেছেন, দেশটির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছে তাদের সরকার। এ জন্য সরকারের পাশে থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। হিল বলেছেন, ‘আমাদের দেশ শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। আমি আপনাদের কাছে নিবেদন করছি- নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলবেন না। সবকিছুর চেয়ে জীবন অনেক বেশি মূল্যবান।’