র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, দামী রেস্টুরেন্ট থেকে রাস্তার দোকান, কোন খাবারে ভেজাল নাই? ব্যবসায়ীরা গরুর খাদ্য ঘোষণা দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ শিশুখাদ্য আমদানী করছেন। কিন্তু সেগুলোতে নতুন তারিখ বসিয়ে শিশুখাদ্য হিসেবেই বিক্রি করছেন। ভেজাল খাদ্য ব্যবসায়ীরা নীরব ঘাতক, আমরা তাদের ফাঁসি চাই।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বাংলাদেশ রিটেইল ফোরাম আয়োজিত 'সুপারস্টোরে পণ্যের মান রক্ষণাবেক্ষণ' শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বেনজীর আহমেদ বলেন, যখন কমিশনার ছিলাম তখন রাজধানীতে মাত্র সীসা বার শুরু করেছে। এক রাতে ৪৫টি সিসা বার বন্ধ করেছিলাম। সরকারের প্রতি রুল জারি করা হলো। জবাব না দেয়া পর্যন্ত ব্যবসা করার অনুমতি চাওয়া হলো। কোর্ট অনুমতি দিলো। এখনো সেই সিসা বারের ব্যবসা চলছে।
র্যাব কখনো রেভিনিউ'র জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে না উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, র্যাব জরিমানা করে কোনো ফায়দা পায় না। আপনার ও আপনার সন্তানের জীবনকে সুস্থ রাখতে র্যাব অভিযানে যায়।
বেনজীর আহমেদ বলেন, এবার ঈদুল ফিতরের আগে রমজানকে ঘিরে ৫ থেকে ৬শ’ কোটি টাকার ভেজাল খেজুর জব্দ ও ধ্বংস করেছে র্যাব ম্যাজিস্ট্রেট। এই খেজুর যদি মার্কেটে আসতো তাহলে আরবি হরফে নতুন করে লেখা হতো। মেয়াদ টেম্পারিং করা হতো। বিক্রি হতো আর আমরাই খেতাম।
র্যাব ডিজি বলেন, হজ্ব করবে মানুষ। সেখানেও ভেজাল। একটি চক্র দেড়শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করছিলো। সেখানে র্যাব গেছে, জরিমানা করেছে, বন্ধ করেছে। নিরীহ মানুষের পকেট কেটে কিছু মানুষ টাকা নিয়ে যাবে আর আমরা তামাশা দেখবো, তা হবে না। ইনশাল্লাহ র্যাব এবার আরও কার্যকরী উদ্যোগ নিবে।
সুপার স্টোরেজের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে র্যাব ডিজি বলেন, খাদ্যের প্রতিটি স্তরে ভেজাল হচ্ছে, জালিয়াতি হচ্ছে, বিষাক্ত খাবার বিক্রি ও খাওয়ানো হচ্ছে। আমি বিনীত অনুরোধ জানাবো, আমাদেরকে বিষাক্ত খাবার খাওয়াবেন না। বিদেশ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ বিষাক্ত খাবার আমদানি করবেন না।
আমে ফরমালিন নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, অনেক কথা আমাকে শুনতে হয়েছে। এখন কিন্তু আম বিক্রি না হলে বাজারে পঁচতেছে। ফরমালিন বিরোধী মুভমেন্টের কারণে অনেক পরিবর্তন আসছে। কখন কোন আম নামানো যাবে তা আগেই জানানো হচ্ছে। সঠিক সময়ে আম বিক্রি হচ্ছে। এবার অন্যান্য বারের তুলনায় অপরিপক্ক আম কম মিলেছে বাজারে।
র্যাব ডিজি বলেন, আসলে জেল দিয়ে জরিমানা করে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, মানুষের সচেতনতা দরকার। পরিবর্তনের মানসিকতা দরকার। আমাদের যে সীমাবদ্ধতা আছে তা পূরণের চেষ্টা থাকা দরকার। কারণ এই দেশটা আমাদের। সমস্যার সমাধান আমাদেরই করতে হবে।
অনুষ্ঠানে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সুপার স্টোরগুলোর সাপ্লাই চেইন ও অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমদানিকৃত পণ্য কিভাবে আসছে, সোর্স কী, মেয়াদ আছে কিনা, মান কেমন, তা জানা থাকতে হবে সুপারস্টোর কর্তৃপক্ষকে। বিএসটিআই এর অনুমোদন ও ছাড়পত্র রয়েছে কিনা, আমদানিতে এলসি রয়েছে কিনা, ইনভয়েস, কাস্টমস ছাড়পত্র, পণ্যের লোগো ও মেয়াদের তারিখ ঠিক আছে কিনা তা চেক করতে হবে। কারণ একাধিক অভিযানে আমি এসবের ব্যত্যয় দেখেছি।
‘অভিযানে দেখেছি, ২ থেকে ১০ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ, অনুনমোদিত, চোরাই পথে আনা বিভিন্ন পণ্য। পচা মাছ-মাংস, সফট ড্রিংস, খেজুরসহ ফলমূল, কসমেটিক্স, তরল ও গুড়ো দুধসহ নানান ভেজাল পণ্য আমদানি করে তা মজুদ ও বিক্রি করা হচ্ছে। মেয়াদ শেষ হবার পর অধিকাংশ পণ্যের ডেট নতুন করে বসানো হয়েছে।’
এক থেকে তিন মাস মেয়াদ আছে এমন গুড়ো দুধ আমদানিতে সুপারস্টোরগুলোর আগ্রহ বেশি দাবি করে সারওয়ার আলম বলেন, আমদানিকৃত গুড়ো দুধ বন্দরে আসার পর ছাড়পত্র পাবার আগেই মেয়াদ শেষ হয়। আবার বাচ্চাদের দুধ আমদানির পর মেয়াদ শেষ কিংবা এক থেকে তিন মাস মেয়াদ আছে এমন দুধ আমদানি করা হচ্ছে। আমরা শিশুদের কাছে কি অপরাধী হচ্ছি না? আমরা যারা ব্যবসা করি তারাও কনজ্যুমার। আমাদের শিশুরা তাই খাচ্ছে। শিশুদের কাছে অপরাধবোধের জায়গা থেকে হলেও এসব ভেজাল ব্যবসা সরে আসা উচিত।
তিনি আরো বলেন, ইন্টারনাল ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে সুপারসপ কর্তৃপক্ষের সতর্কতা জরুরি। মোবাইলকোর্ট পরিচালনাকালে দেখেছি, ভাল পণ্যের সাথে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য, সঠিক ও শক্ত নজরদারি নেই, অডিট নেই, পরে কেনা পণ্য আগে বিক্রি হচ্ছে আর আগে কেনা পণ্য পড়ে থাকছে। ২০ টাকার পণ্য লেখা থাকলেও বিক্রির রিসিভ কপি হাতে নেবার পর দেখানো হচ্ছে ২৪ টাকা। এটা ভোক্তা অধিকারের লঙ্ঘণ।
‘ভোক্তা কিনে নিজে ফ্রিজআপ করে ৬ মাস ধরে খেতে পারেন তাতে সমস্যা নেই, কিন্তু কোনো সুপারসপ মাছ কিংবা মাংস তিন দিনের বেশি রাখতে পারবেন না। কখন কোনটা কেনা হয়েছে, তা মাছ কিংবা মাংসের প্যাকেটের গায়ে দামসহ লেখা থাকতে হবে।’