logo
আপডেট : 31 July, 2019 21:00
শয়তানের তাড়নায় ধর্ষণ !

শয়তানের তাড়নায় ধর্ষণ !

॥ নাজমুন নাহার রহমান ॥

হঠাৎ করেই দেশে শয়তানের তাড়না শুরু হয়েছে। কেন বললাম? কারণ পুলিশ যখনই কাউকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে, তখনই আসামী স্বীকারোক্তি দেয়- শয়তানের তাড়নায় এ কাজ করেছি। 
আজকের বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে। বিশেষ করে মাদ্রাসা ও স্কুল শিক্ষক দ্বারা এ নির্যাতন বেশি হচ্ছে। যা গণমাধ্যমে প্রতিদিনই ছাপা হচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে আগাছার মতো মহিলা মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্ডেনের অনুমতি দেয়া এবং ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি সরকারের নজরদারি না থাকাতে এসব ঘটনা বেশি ঘটছে। 
নিন্ম মধ্য আয়ের মানুষের আবাস এলাকায় হরহামাশায় চোখে পড়বে মহিলা মাদ্রাসা অথবা এতিমখানার সাইনবোর্ড। হঠাৎ করে মনে হচ্ছে দেশে মহিলা মাদ্রাসা  প্রতিষ্ঠার প্রবণতাও বেড়ে গেছে। এ প্রবণতার নেপথ্যে শিশুদের শিক্ষা প্রদানের চেয়ে লালসা চরিতার্থ করার কুমতলব কাজ করছে কি বেশি? এ প্রশ্ন নতুন করে অভিভাবকদের ভাবাচ্ছে।

মহিলা মাদ্রাসা খোলার সুযোগে কিছু বিকৃত ধর্ষক তাদের হাতের কাছে মেয়ে শিশুদের পেতে সহজ করেছে। এটা তাদের একটা কুমতলব। আর এভাবে  ঘটাচ্ছে একের পর এক লোমহর্ষক শিশু নিপীড়নের ঘটনা।
গণমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত দুই মাস ধরে যত ধর্ষণের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার সিংহভাগই ঘটিয়েছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতা।
গত ২৭ জুলাই নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের কারণে অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান(৩৪) কে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এই বর্বর লোকটি এ পর্যন্ত তার মাদ্রসার একাধিক শিশুকে ধর্ষণ করেছে। তার প্রতিষ্ঠানের নাম দারুল হুদা আল ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানা। মোস্তাফিজুর রহমান এ পর্যন্ত পাঁচজন শিশুকে ধর্ষণ করেছেন, যাদের বয়স ১০ থেকে ১১। এ ছাড়াও ১৬ বছরের একটি কিশোরীকে সে একাধিক বার ধর্ষণ করেছে বলে র‌্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে। ওই অধ্যক্ষ স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছেন, আমি শয়তানের তাড়নায় এ কাজ করেছি। 
মনে করা হচ্ছে, তার নিপীড়নের শিকার আরো অনেক শিশু হয়েছে। যারা লোক লজ্জা ও হেনস্তার ভয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে না। ইনি অধ্যক্ষ নামের কলঙ্ক। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের মনগড়া শিক্ষা সে শিশুদের দিতেন। তিনি শিশুদের মাদ্রাসার নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করতেন। কখনো ঘুরতে যাওয়ার নামে লঞ্চে বা আবাসিক হোটেলেও নিয়ে নির্যাতন করতেন। 
আমি খেয়াল করেছি, আমাদের নি¤œ আয়ের লোকেরা তাদের সন্তানদের কিছুটা নিরাপত্তা বলয়ে রাখার জন্য ও শিক্ষিত করার মানষে এ সকল মাদ্রাসায় মাত্র এক হাজার বা দেড় হাজার টাকায় পড়তে পাঠায়। এ মায়েরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে তাদের আদরের সন্তানকে মাদ্রাসা ও স্কুলে পাঠায়। কিন্তু এ পশুগুলো নির্বিচারে বাচ্চাগুলোকে ব্যবহার করে। আর ধরা পড়ার পর নিজের কুকর্ম স্বীকার না করে শয়তানের উপর দোষ দেয়। বলে শয়তানের তাড়নায় এ কাজ করেছি। আমার তাদের কাছে জিজ্ঞাসা, তাদের কাছে মহান আল্লাহ’র চেয়ে শয়তান কিভাবে বেশি পছন্দের হল? তা হলে কি সে শয়তানের অনুসারী। আর শয়তানের অনুসারী হলে শিক্ষা দেয়ার মহান ব্রতে কেন এলেন?
খবরে প্রকাশ, একাধিক ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী ও তিন সন্তান তার সাথে একই মাদ্রাসায় থাকতো। তাহলে প্রশ্ন ওঠে না, এ কুকর্মের সাথে তার স্ত্রীরও যোগসাজশ বা সম্মতি আছে? কেন না এ মহিলা একই বিল্ডিং এ উপস্থিত থাকা স্বত্ত্বেও তার স্বামী এ অপরাধ দীর্ঘ দিন ধরে কীভাবে করে? এ মহিলার কি স্বামীর বিরুদ্ধে কিছুই করার ছিল না?
এর আগে ৪ জুলাই এই নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বায়তুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল আমিনও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি মাদ্রাসা ছুঁিটর পর ছাত্রীদের মিথ্যে কথা বলে নিজের বাসায় এনে অশ্লীল ভিডিও দেখাতেন ও ধর্ষন করতেন। এ সময় তার স্ত্রীও বাসায় অবস্থান করতেন।  বাহ কি কৌশল! আমার প্রশ্ন এ পশুর স্ত্রী তখন কি ভূমিকা রাখতেন?
আমি মনে করি, এ সকল ধর্ষকদের স্ত্রীদেরও গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। তাহলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে, তারা স্বামীর কুকর্মের সহযোগী কিনা? যদি সে নিরপরাধী হতো তাহলে কেন তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেননি?
গত ২৯ জুন পটুয়াখালীর হাদিউল উম্মা মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ফরাজি (৪০) নিজের বাসায় ডেকে এনে ১১ বছরের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। খেয়াল করার মতো বিষয় এখানেও শিশুটিকে বাসায় ডেকে এনে ধর্ষণ করা হয়েছে। ফারাজি বিবাহিত এবং তার স্ত্রীও একই বাসায় বসবাস করতেন। আমার জানার খুব আগ্রহ ফারাজির স্ত্রী স্বামীর কুকর্মের কথা জানতেন কিনা? না জানলেও জানার পর তিনি এ ধর্ষকের বিরুদ্ধে কি ভূমিকা নিয়েছেন?
গত ২৭ জুন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফুল ইসলামকে (৩০) পিটুনি দিয়ে র‌্যাবে সোপার্দ করেন এলাকাবাসী। কারণ গত পাঁচ বছর ধরে অন্তত ২০জন শিক্ষার্থীকে ধর্ষন করেন এ শিক্ষক। মনে করা হচ্ছে এ সংখ্যা ২০ এর থেকেও বেশি হতে পারে। তিনি এক শিক্ষার্থীর মাকেও ধর্ষণ করেছেন।
এসব ধর্ষকের হাতে থেকে নিজের সন্তানকে বাঁচাতে সকলকে সচেতন হওয়া উচিত। রাষ্ট্রকে আরো কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। মেয়ে শিশুদের মাদ্রাসায় ও স্কুলগুলোতে মনিটরিং বাড়াতে হবে। নয়তো এ ব্যাধি সমাজ থেকে দূর হবে না। 
আশা করি আপনারা কেউ-ই সেই হতভাগ্য ফেনির মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে ভুলে যাননি। তার হত্যা মামলাটি বর্তমানে কোর্টে উঠেছে। নুসরাতের পক্ষে রয়েছে সরকারের পক্ষে একজন আইনজীবী। অপরদিকে আসামীর পক্ষে ১৬ জন আইনজীবী । তাহলে ভাবুন আমরা কেমন বিবেকবিবর্জিত সমাজে বাস করি। আমি এসব আইনজীবীদের অনুরোধ করবো শুধু মাত্র টাকার জন্য আপনি জেনে শুনে কোনো ধর্ষকের পক্ষ নিবেন না। কেন না এরাই একদিন আপনার আদরের সন্তানকে ক্ষত বিক্ষত করে দেবে। তখন আপনিও বিচার পাবেন না। 
আসুন আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলকে সচেতন করতে চেষ্টা করি। রাষÍায় কোনো শিশুকে বিব্রত অবস্থায় বা এ ধরণের পশুদের শিকার হতে যাচ্ছে দেখতে পেলে পুলিশের সহায়তা নেই। অপরাধী যত ঘনিষ্ট হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেই। নতুবা শয়তানের এই তাড়না থামবে না। সর্বশেষ রাষ্ট্রের কাছে দাবী রইল, এসব ধর্ষকদের ত্রিশ কার্য দিবসের মধ্যে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি কার্যকর করা হোক। স্থাপন করা হোক কঠোর দৃষ্টান্ত। এর মধ্য  দিয়ে  দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যত শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

.............................................................
নাজমুন নাহার রহমান- শিল্পী ও চিত্রশিল্পী।