logo
আপডেট : 5 August, 2019 21:07
কাশ্মীর আর ভারতের রাজ্য নয়
মেইল রিপোর্ট

কাশ্মীর আর ভারতের রাজ্য নয়

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সম্প্রতি অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছিল। সর্বশেষ রোববার দিন ও রাতব্যাপী বিভিন্ন ঘটনায় সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ১৪৪ ধারা জারি করায় স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা কাশ্মীর। এমন অবস্থায় কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে এমনটি মনে করছিলেন সবাই। তবে কাশ্মীরের ভাগ্যে ঠিক কী ঘটছে তা সোমবার সকালেও আঁচ করা যায়নি।

সোমবার (৫ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একান্ত বৈঠকের পর দেশটির রাজ্যসভায় কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সম্বলিত সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদের প্রস্তাব দেন। এরপর তা সংসদে পাস হওয়ার পর ওই প্রস্তাবে সই করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এর মাধ্যমে দেশটির রাজ্যের মর্যাদা হারিয়েছে কাশ্মীর। এছাড়া গোটা কাশ্মীরকে দুই ভাগে ভাগ করে কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে।

বিজেপি সরকারের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধীতা করেছেন কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো। আজকে দিনকে গণতন্ত্রের কালো দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কাশ্মীরের প্রধান রাজনীতিবীদরা। এছাড়া সংসদে সংবিধান ছিঁড়ে ফেলার কারণে আটক করা হয়েছে দুই মুসলিম সাংসদকে। প্রস্তাবের সময় সংসদে তুমুল হট্টগোল শুরু হলে অধিবেশন সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়।


‘বিশেষ সুবিধা’ বাতিল
নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার কাশ্মীরের বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ সুবিধা সম্বলিত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বা ৩৫-এ ধারা বাতিল করেছে। একইসঙ্গে জম্মু-কাশ্মির থেকে ভেঙে আলাদা করে দিয়েছে লাদাখকে।

সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করতে সংসদে প্রস্তাব পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই সংবিধানের প্রতিলিপি ছিঁড়ে ফেলেন দুই পিডিপি সাংসদ মীর ফৈয়াজ ও নাজির আহমেদ। সঙ্গে সঙ্গে তাদের আটক করা হয়। সেই সঙ্গে মেহবুবা মুফতির দলের ওই সাংসদদের রাজ্যসভা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দেন উপরাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। তারা সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যসভার বাইরে বেরিয়ে এসেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।

এদিকে রাজ্যসভায় বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘আজ গণতন্ত্রের কালো দিন। স্বাধীনতার পর থেকে যে আত্মত্যাগ ও বলিদান সেনা ও রাজনৈতিক নেতারা দিয়েছেন তার চরম অবমাননা করা হল। তবে পিডিপি সাংসদ মীর ফৈয়াজ ও নাজির আহমেদ সংবিধান ছেঁড়ার যে চেষ্টা করেছেন তার তীব্র নিন্দা করছি। আমরা সবসময়ই সংবিধানের সঙ্গেই আছি। সংবিধান রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের প্রাণও বিসর্জন দিতে পারি আমরা। তবে আজ সংবিধানকে হত্যা করেছে বিজেপি।’

কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, ‘আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে কালো দিন। কাশ্মীরের মানুষ কোনওদিনই এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না’।

৩৭০ ধারাবলে জম্মু-কাশ্মিরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত রাখা হয় এবং ওই রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়। এই ধারাবলে ওই রাজ্যে সংসদের ক্ষমতা সীমিত। ভারত ভুক্তিসহ কোনো কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ রাখার জন্য রাজ্যের মত নিলেই চলে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে রাজ্য সরকারের একমত হওয়া আবশ্যক।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতকে ভারত ও পাকিস্তানে বিভাজন করে ভারতীয় সাংবিধানিক আইন কার্যকর হওয়ার সময়কাল থেকেই ভারতভুক্তির বিষয়টি কার্যকরী হয়। ভারতভুক্তির শর্ত হিসেবে জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় সংসদ প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ- এই তিনটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাধর।

অন্যদিকে ৩৫-এ ধারা অনুযায়ী, রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া কেউ সেখানকার সম্পত্তি বেচাকেনা করতে পারবে না। স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য সরকারি চাকরি এবং স্কলারশিপ সংরক্ষিত। কোনো কাশ্মিরি নারী অন্য রাজ্যের কাউকে বিয়ে করলে তিনি রাজ্যে বিষয়-সম্পত্তির মালিকানার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।


কাশ্মীরজুড়ে আতঙ্ক আর স্তব্ধতা
কাশ্মীরজুড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্তব্ধতা নেমে এসেছে গোটা রাজ্যে। রোববার রাতে রাজ্যটিতে ১৪৪ ধারা জারি করার পাশাপাশি প্রধান রাজনীতিবীদদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। স্কুল-কলেজ, মোবাইল ও ইন্টারনেটসহ সকল প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।

মাঝে মধ্যেই বেজে উঠছে সাইরেন আর ভারী বুটের শব্দে কেঁপে উঠছে উপত্যকা। গত কয়েকদিন আগে অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দিয়ে হঠাৎই কাশ্মীরে বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। সম্ভাব্য জঙ্গি হানার খবর পেয়েই কি এই ব্যবস্থা,  নাকি অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে সরকারের তা নিয়ে ইতিমধ্যে জল্পনা তৈরি হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাশ্মীর থেকে ফেরানো হচ্ছে পর্যটকদের। এই অবস্থায় আতঙ্ক আরও বাড়ছে।

রোববার মধ্যরাতে হঠাৎ করেই গৃহবন্দি করা হয় দুবারের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাকে। শুধু তাই নয়, গৃহবন্দি হন প্রাক্তন বি‌ধায়ক সাজ্জাদ লোনও। গ্রেফতার সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামি এবং কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদ।

হঠাৎ করে কেন এমন সিদ্ধান্ত সরকারের তা নিয়ে আরও জল্পনা-আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এরপরেই উপত্যকা জুড়ে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। অনির্দিষ্ট কালের জন্য জারি করা হয়েছে কার্ফু। আগামী নির্দেশ দেওয়া না পর্যন্ত কার্ফু জারি থাকবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। কোনো জায়গায় জমায়েত দেখলেই প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে ১৪৪ ধারা বলবৎ হয়েছে। সকাল থেকে থেকে শুনশান গোটা কাশ্মীর। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, হঠাৎ করে কাশ্মীর এতটাই শান্ত হয়ে গিয়েছে এখন সেখানকার রাস্তায় একটা পিন পড়লেও শব্দ শোনা যাবে। সকাল থেকে সেখানকার দোকানপাঠ সব বন্ধ। স্থানীয় মানুষকে রাস্তাতেই দেখা যাচ্ছে না। যতদূর চোখ যাচ্ছে শুধুই নজর পড়ছে নিরাপত্তারক্ষীদের।

১৪৪ ধারার কারণে থাকায় স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হল অনির্দিষ্টকালের জন্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে পড়াশুনা করা পড়ুয়াদের নিরাপদ জায়গায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে গোটা রাজ্যের ইন্টারনেট পরিষেবা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কেবল পরিষেবাও।