বিশেষ প্রতিনিধি: জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানকে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হতে পারে এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকাতে হবে এবং এই ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের নাক গলানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শিমলা চুক্তি সমুন্নত রাখার আহবান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিবের এ আহ্বানের কথা তুলে ধরেছেন তাঁর মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি। তাঁর দাবি ছিল, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ আসলে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব লঙ্ঘনের শামিল। সেই চিঠির বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি জাতিসংঘ।
সোমবার ভারতের বিজেপি সরকার দেশটির সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করে। এতে জম্মু ও কাশ্মীর আলাদা রাজ্য না থেকে দ্বিখণ্ডিত হলো। জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ এখন থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হবে।
যদিও জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, তাঁর সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এতে কাশ্মীরে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। সেখানে শিল্পায়ন, পর্যটন ও সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো হবে না। এখানে বিধানসভা থাকবে, নির্বাচন হবে, মুখ্যমন্ত্রী থাকবে, থাকবে মন্ত্রিসভাও। ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, এ অনুচ্ছেদ স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। এই বিচ্ছিন্নতা ও সন্ত্রাসবাদের কারণে গত তিন দশকে কাশ্মীর অঞ্চলে ৪২ হাজার নিরীহ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
ভারতের এ পদক্ষেপকে ‘একতরফা ও বেআইনি’ উল্লেখ করে বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে তুলবে বলে আগেই জানিয়েছিল পাকিস্তান।
এনডিটিভি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক বলেছেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব উদ্বেগের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীর পরিস্থিতি নজরে রাখছেন এবং তিনি (ভারত ও পাকিস্তানকে) সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।’
স্টেফানে দুজারিক বলেছেন, মহাসচিব বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ব্যাপারে ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ওই চুক্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের চূড়ান্ত অবস্থা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের কথা বলা আছে। খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিব কাশ্মীর সংকট সমাধানে কোনো প্রস্তাব দেননি বা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতারও কোনো প্রস্তাব দেননি। এর পরিবর্তে তিনি শিমলা চুক্তির কথা তুলে ধরেছেন। যে চুক্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করার কথা বলা আছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব জম্মু ও কাশ্মীরের চূড়ান্ত অবস্থানে প্রভাব ফেলতে পারে—এমন যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে সব পক্ষকেও বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।