logo
আপডেট : 21 August, 2019 23:37
বিএনপি-জামায়াতের মদদেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা অফিস

বিএনপি-জামায়াতের মদদেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদ ছাড়া ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, আসামি করা না হলেও তখনকার সরকার প্রধান হিসেবে খালেদা জিয়া এ ঘটনার দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।

বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার স্মরণে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ২১ আগস্ট হামলায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

শেখ হাসিনা জানান, ওই হামলায় তাঁর বেঁচে থাকার কথা ছিল না এবং এমনকি তখনকার সরকারও সেটাই মনে করেছিল। ‘আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। তারাও (সরকার) ধারণা করেনি যে আমি বেঁচে যাব। আমি অনেক কিছু জানি। যারা হামলা চালিয়েছিল তারা এক জায়গায় আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে ফোন করে জানতে চেয়েছিল যে আমি মারা গেছি কি না।’

‘খালেদা জিয়াও (তখনকার প্রধানমন্ত্রী) সম্ভবত শোক বার্তা তৈরি করে রেখেছিলেন যাতে আমার মৃত্যুর পরই তা দিতে পারেন,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ভয়াল ঘটনার স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি কখনো ভাবতে পারিনি একটি রাজনৈতিক সমাবেশে এই ধরনের হামলা হতে পারে। আমরা কখনো ভাবতে পারিনি। কোনো রাজনৈতিক দলের সমাবেশে এভাবে গ্রেনেড হামলা হবে। গ্রেনেড ব্যবহৃত হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। ১৩টি গ্রেনেডের মধ্যে ১২টি সেইদিন বিস্ফোরিত হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম মুক্তাঙ্গনে। কিন্তু সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি চিঠি পাঠানো হয় কার্যালয়ে, অনুমতির। রাত সাড়ে ১১টা-১২টার দিকে কে দেখবে সেই চিঠি। হয়তো আল্লাহ বাঁচাবে বলেই সেখানে মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করা হয়নি। আমরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যখন মিটিং করতাম তখন পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিজস্ব ভলেন্টিয়ার আশপাশে বিল্ডিংয়ের ছাদেও থাকে। সেই দিন কোনো বিল্ডিংয়ের ছাদে কাউকে উঠতে দেওয়া হয়নি। রমনা হোটেল থেকে শুরু করে যতগুলো বিল্ডিং আছে, কাউতে উঠতে দেয়নি। আমাদের সমাবেশগুলোতে সাধারণত পুলিশ দিয়ে বাধা দেওয়া হতো। কিন্তু ওই দিন সেই ধরনের তৎপরতা দেখা যায়নি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বক্তব্য শেষ করলাম। শেষে ফটোগ্রাফার গোর্কি এসে আমাকে বলল, আমি ছবি নিতে পারিনি। যেহেতু গোর্কির বাবাকে আমি চিনতাম, তাই আমি দাঁড়ালাম। এই কয়েক সেকেন্ড সময় সেখানে আমার দাঁড়াতে হলো। এরই মধ্যে গ্রেনেড হামলা শুরু হয়ে গেল। হানিফ ভাই আমাকে ট্রাকের ওপর বসিয়ে দিল। আমাকে চারপাশে মানবঢাল রচনা করল পাশে থাকা সবাই। যখন একটার পর একটা গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছে....আসলে আমরা কী বুঝতে পেরেছিলাম যে সেই আর্জেজ গ্রেনেড যেটা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় সেটি একটি জনসভায় মারবে। আমরা ভেবেছিলাম, বোমা হামলা হচ্ছে। কিন্তু গ্রেনেডের স্প্লিন্টারগুলো হানিফ ভাইয়ের মাথায়, গায়ে লাগছে। আর সেখান থেকে তাঁর গায়ের রক্ত আমার গায়ে পড়ছে। তিনটি গ্রেনেড মারার পর একটু বিরতি। আমার সঙ্গে যারা ছিল তারা ভাবল, আমি বুঝি আহত হয়েছি। আমি ওদের বললাম, আমি ঠিক আছি। শুধু চশমাটা পড়ে গেছে। একটার পর একটা গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছে। এই ধরনের একটা ঘটনা দিনেদুপুরে কীভাবে ঘটতে পারে? বিএনপির-জামায়াত জোট সরকার তখন ক্ষমতায় ছিল, তাদের মদদ ছাড়া এটা হতে পারে না।’

‘এই ঘটনার পর তাদের ধারণা ছিল, আমি নাই। মারা গেছি। যখন আমি নিচে নেমে গাড়িতে উঠতে যাব, ঠিক সে সময় আবার গুলি করা হলো। সেখানে মাহবুব ছিল, তাঁর গায়ে গুলিটা লাগল, আমার গাড়িতেও গুলি লাগল। গ্রেনেড ট্রাকের ভেতরে পড়তে পারত। কিন্তু সেটি ট্রাকের সাইডে বাড়ি খেয়ে বাইরে পড়ে যায়। যদি ট্রাকের ভেতরে পড়ে তাহলে সেখানে আমরা সবাই শেষ হয়ে যাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাধারণভাবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশ করলে যেখানে সাধারণত ট্রাকটি রাখা হয়, ওইদিন তার চেয়ে একটু সামনে রাখা হয়েছিল। আমি মায়াকে (মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া) জিজ্ঞাসা করি, ট্রাকটি এত সামনে এনেছ কেন? সে বলল, ট্রাকটি ব্রেক কষতে কষতে সামনে চলে গেছে। এজন্য ওই রমনা হোটেল থেকে টার্গেট করে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেটি কার্যকর হয়নি। এটাও একটা আল্লাহর ইশারা।’

সেদিন হামলার পর পুলিশ সাহায্য না করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়েছিল উল্লেখ করে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘হামলার সময়ে চশমাটা পড়ে যাওয়ার কারণে দূরের জিনিস ভালো করে দেখতেও পাচ্ছিলাম না। আমি গাড়িটি নিয়ে যখন বের হলাম স্টেডিয়ামের কাছে, সাথে সাথে টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ। আওয়ামী লীগের নেতারা যখন আহতদের সাহায্য করতে ছুটে গেছে, তখন একটা বিভৎস দৃশ্য তারা তৈরি করল। কোথাও যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে, পুলিশের দায়িত্ব থাকে নির্যাতিতদের সাহায্য করা। এখানে ঘটল উল্টো ঘটনা। মূলত ঘাতকরা যাতে সেখান থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যেতে পারে সেজন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’

জেলখানায় গ্রেনেড পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের দিয়ে আক্রমণ করিয়েছিল, সেই ক্রিমিনাল জেলখানা থেকেও নিয়ে এসেছিল। তাদের চিকিৎসার নাম করে অ্যাম্বুলেন্সে করে জেলখানা থেকে নিয়ে এসেছিল। আবার জেলখানায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের সাথেই একটা গ্রেনেড থেকে যায়। পরে যেটি সেখানে ফেলে দেওয়া হয়। তাহলে কত গ্রেনেড ছিল তাদের?’

‘সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আলামত রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়নি। এই ঘটনার কোনো আলামত যাতে না থাকে বিএনপি-জামায়াত সরকার সেই কাজ করেছিল। সিটি করপোরেশনের পানির গাড়ি দিয়ে আলামত নষ্ট করা হয়। পরের চেষ্টা, জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকেই বারবার হামলার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে।

বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে তাদের জীবন উন্নত করাই একমাত্র লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মৃত্যুর ভয় তিনি পান না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে সেই দীক্ষা তিনি পেয়েছেন।

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও সাহারা খাতুন, সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বি এম মোজাম্মেল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় দলের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। অল্পের জন্য বেঁচে যান বতর্মান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তবে গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ হামলায় তিন শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।

গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের অধীনে একটি এবং হত্যার জন্য আরেকটি মামলা।

সব প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর গ্রেনেড হামলার দুই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।