সোমবার (২৬ আগস্ট) ফ্রান্সের দ্বীপশহর বিয়ারিজে তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের ইতি টানা হয়। এর আগে শনিবার ( ২৪ আগস্ট) এ সম্মেলন শুরু হয়।
বিশ্ব বাণিজ্য ও ইরান ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ব নেতাদের আলোচনায় স্থান পায় ইউক্রেন, লিবিয়া, হংকং, জলবায়ু ও ব্রেক্সিট ইস্যু। এছাড়া জি-৭ এ রাশিয়ার ফের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবও আলোচনায় আনেন বিশ্বনেতাদের কেউ কেউ।
এবারের বৈঠকে গত রোববার (২৫ আগস্ট) আকস্মিক উপস্থিত হয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ সবাইকে চমকে দেন।
ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা, তেহরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের ভেস্তে যাওয়া পরমাণু চুক্তি এবং এ অবস্থায় ইউরোপের করণীয় নিয়ে সম্মেলনের ফাঁকে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে সম্মেলনে উপস্থিত হন তিনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, বৈঠক শেষে বাণিজ্য বিষয়ে মতানৈক্যের কারণে কমিউনিকউ বা যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এর আগে বৈঠক শুরুর পরদিন রোববার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানান, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে- এটি নিশ্চিত করার ব্যাপারে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়েছে।
এদিকে জি-৭ এ পুনরায় রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে প্রস্তাব তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ইউরোপ ও কানাডা এ ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখায়। আপত্তি হিসেবে তারা ‘অবৈধভাবে’ রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের বিষয়টি সামনে আনে। ২০১৫ সালে এ কারণেই জি-৭ থেকে বহিষ্কৃত হয় রাশিয়া।
অন্যদিকে রোববার সকালে ব্রেক্সিট ইস্যু ও নতুন বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বরিসকে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য খুব দ্রুত ‘অভূতপুর্ব বিশাল এক বাণিজ্য চুক্তিতে’ পৌঁছাতে পারবে।
এর কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেন, যেহেতু কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে যুক্তরাজ্যের কোনো বাধা নেই, সেজন্য এটি সম্ভব হবে। এ ধরনের বাধা আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ক্ষেত্রে।
ট্রাম্পের এ ধরনের মন্তব্যকে ইইউর সমালোচনা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
ব্রেক্সিট ইস্যুতে বরিসকে কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ব্যাপক উচ্ছ্বাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, বরিসের কোনো পরামর্শের দরকার নেই। এ কাজের ব্যাপারে তিনি যোগ্য ব্যক্তি।
অন্যদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে দহরম মহরম দেখা গেলেও ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইউরোপের মিত্র দেশগুলোকে হতাশ করেছেন বরিস জনসন।
বরিস বলেন, আগামী ৩১ অক্টোবর তার দেশ যদি কোনো চুক্তি ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তিনি ব্রেক্সিট বিলবাবদ কোনো টাকা-পয়সা দিতে পারবেন না।
এবারের সম্মেলনে বাণিজ্যযুদ্ধ ও জলবায়ু নিয়ে আলোচনা হয় সম্মেলনে। এসব প্রসঙ্গেও ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয় বাকিদের। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক ইরান, চীন, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের ওপর বাণিজ্যকর, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেই চলেছেন। এ ব্যাপারে তারা কোনো লাগাম টানার লক্ষ্মণও দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে জলবায়ু প্রশ্নেও বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির ব্যাপারটিকে তিনি তেমন বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন না বলে নানা সময়ে বলেছেন। ফলে এ ব্যাপারে তার দিক থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
এছাড়া ফেসবুক, গুগলের মতো ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে করারোপ করার ব্যাপারে ফ্রান্সের প্রস্তাব থাকলেও সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে ট্রাম্পের দেশ।
তবে আমাজনে দাবানল ইস্যুসহ দু-একটি ব্যাপারে কর্মপন্থা নির্ধারণের ক্ষেত্রে একমত হয়েছেন বিশ্ব নেতারা।
এছাড়া বৈষম্য বিশেষ করে লিঙ্গ বৈষম্য, জি-৭ ও আফ্রিকার যৌথ অংশীদারিত্ব, জীববৈচিত্র্য ও ডিজিটাল মাধ্যমের মুক্ত, অবাধ ও নিরাপদ রূপান্তরের বিষয়েও একমত হন তারা।
এবারের জি-৭ সম্মেলন শুরুর আগে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক বিশ্বনেতাদের এই বৈঠককে অনেক জরুরি বিষয়ে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন। কিন্তু প্রত্যাশিত সেসব সাফল্যের মুখ না দেখেই পর্দা নামলো সম্মেলনের।
জি-৭ এর সদস্য দেশগুলো - যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান ও যুক্তরাজ্য।