logo
আপডেট : 8 September, 2019 03:12
বিজেপি বাদে এনআরসি বিরোধী বিল পাশে সর্বসম্মত তিন দল
শুভজিৎ পুততুন্ড, কলকাতা থেকে

বিজেপি বাদে এনআরসি বিরোধী বিল পাশে সর্বসম্মত তিন দল

এনআরসি ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা আলোচনা, বিজেপি বাদে এনআরসি বিরোধী বিল পাশে সর্বসম্মত তিন দল। শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের আনা এক আলোচনা প্রস্তাবে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) কোনমতেই করতে দেওয়া হবে না। 

এদিন আলোচনার প্রস্তাবের শুরুতেই এনআরসির স্বপক্ষে স্লোগান রেখে বিধানসভা ভোট করে বিজেপির চার বিধায়ক। এদিকে  সরকারের তরফে আনা এনআরসিি বিরোধী বিল পাস এর স্বপক্ষে এই আলোচনার প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে  বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস।

বিধানসভায় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে ১৮৫ ধারায় আলোচনার সময় কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে এদিন মমতা জানান ‘বাংলায় কোনভাবেই এনআরসি চালু করতে দেওয়া হবে না।’ 

মমতার কথায় ‘আপনি (নরেন্দ্র মোদি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল-কে ম্যানেজ করতে পারেন কিন্তু বাংলাকে পারবেন না।’ 

মুখ্যমন্ত্রীর অভিমত এনআরসি বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ছাড়া কিছুই না। মমতা আরও জানান দেশজুড়ে চলা আর্থিক মন্দার থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরাতেই বিজেপি সরকার এনআরসি খেলায় মেতেছে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান দেশের মধ্যে অসমই একমাত্র রাজ্য যেখানে এনআরসি লাগু করা হয়েছে। গত ৩১ আগষ্ট অসমে প্রকাশিত হয়েছে এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা। অথচ গোটা দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে কারও একটা কথা বলার সাহস নেই। 

এনআরসি নিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সাথে কথা হয়েছে বলেও এদিন জানান তিনি। মমতা বলেন ‘আমি নীতীশজির সাথে কথা বলেছি। উনি তার রাজ্যে এনআরসি করতে দেবেন না বলে আমায় জানিয়েছেন।’  

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগষ্ট আসমে প্রকাশিত এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হয়েছে ৩ কোটির কিছু বেশি নাম। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখের বেশি নাম। এরপরই ট্যুইট করে প্রতিবাদ জানান মমতা। 

যদিও আসমের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি চালুর দাবি জানিয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও জানিয়ে দিয়েছেন ‘এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে এখানেও এনআরসি চালু করা হবে।’ 

এমন অবস্থায় বাংলায় নাগরিক পঞ্জি রুখতে রাজ্য বিধানসভায় এই ইস্যুতে প্রস্তাব আনে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকার। শুক্রবার রাজ্য বিধানসভায় ওই প্রস্তাবের ওপরই আলোচনা হয়। এনআরসি বিরোধী প্রস্তাব পেশ করেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেখানেই বক্তব্য পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। 

রাজ্য সরকারের এই প্রস্তাবে সমর্থন জানায় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। যদিও প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বিজেপি। এদিন আলোচনার চলাকালীন সময়েই অধিবেশন ওয়াকআউট করে বিজেপির বিধায়করা। 

পরে সংবাদ সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিক্কা জানান ‘এনআরসি ইস্যুতে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল দ্বিচারিতা করছে। একসময় মমতা এই এনআরসি-র পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তখন সংসদে তিনি বলেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার অবৈধ ভাবে বাংলাদেশিদের রাজ্যে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। অনুপ্রবেশ ইস্যুতে লোকসভায় স্পিকারের মুখের দিকে কাগজও ছুড়তে দেখা গিয়েছিল। অথচ সেই মমতা ব্যনার্জি আজ মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসে এনআরসির বিরোধিতা করছেন। 

কংগ্রেস ও বামদেরকেও এক সারিতে বসিয়ে বিজেপি বিধায়কের অভিযোগ রাজনৈতিক স্বার্থেই তৃণমূল-বাম-কংগ্রেস একযোগে এই ইস্যুতে বিরোধিতা করছে।’ 

তবে এনআরসি ইস্যুতে কেবলমাত্র বিধানসভায় প্রস্তাব এনেই থেমে থাকছে না রাজ্য সরকার। নাগরিক পঞ্জির বিরোধিতায় আগামী ১২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মিছিল করবে তৃণমূল কংগ্রেস।