ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) নিয়ে নিজের আপত্তির কথা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আপত্তি জানানোর একদিনের মাথায় এনআরসি আতঙ্কে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন ৫২ বছর বয়সী আমেনা বেগম। তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এনআরসির চিন্তায় পুরনো দলিল খুঁজতে বাঁকুড়ায় বাবার বাড়ি গিয়েছিলেন আমেনা। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথি খুঁজে পাননি। তার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এতদিন বিড়ি বেঁধে সংসার চলত তার।
প্রতিবেশীরা বলছেন, আমেনা ভয় পাচ্ছিলেন যে, হয়তো তার সেই সংসারই আর থাকবে না।
ভিটা হারানোর এই আতঙ্ক যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, রাজনীতির এই নোংরা খেলা বন্ধ না হলে এনআরসি আতঙ্কে আরো অনেকের মৃত্যু হবে।
কিন্তু শুক্রবার নবান্নে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মানুষকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ভয়ের কিছু নেই, এ রাজ্যে এনআরসি হবে না।
কিন্তু তার আশ্বাসের আগেই রাজ্যজুড়ে দাবানলের মতো এনআরসি উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের মিলন মণ্ডল (২৭) আত্মহত্যা করেছেন। পরিবারের সদস্যরা ভিটে হারানোর ভয়ে মিলন আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছেন।
শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির বাসিন্দা ৩৯ বছরের অন্নদা রায় আত্মহত্যা করেন। তার পরিবারের সদস্যরাও একই অভিযোগ করেছেন।
তারা বলেছেন, চার বিঘা জমি বন্ধক দিয়ে চাষের জন্য টাকা ধার করেছিলেন অন্নদা। এনআরসি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় তার মনে হয়, কাগজ বন্ধক দিয়েছেন, প্রমাণ দেখাবেন কী করে! পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এই কথাই বারবার ঘুরেফিরে বলতেন অন্নদা। শেষে শুক্রবার নিকটবর্তী স্টেশনে ওভারব্রিজে তাকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলতে দেখা যায়।
এনআরসি আতঙ্কে একই দিন বালুরঘাটে রেশন কার্ড ডিজিটাল করানোর লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৫২ বছরের মন্টু সরকার। প্রচন্ড রোদে কয়েকশ মানুষের পেছনে ছিলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান।
সঙ্গে সঙ্গে বালুরঘাট হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। অনেকেই বলছেন, নোটবন্দির সময় এভাবেই লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ গেছে অনেকের।
ইটাহারের সোলেমান সরকার বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমিয়েছিলেন ১৯৬৫ সালে। এনআরসি শোনার পর থেকেই ভিটে হারানোর উদ্বেগে ছিলেন। এ দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ছেলেরা বলছেন, গত ক’দিন সমানে প্রমাণপত্র নিয়ে খোঁজ করছিলেন তিনি। উদ্বেগই কাল হলো তার!