তুহিন সানজিদ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে আর কখনো ওয়ান ইলেভেন আসবে না। যা করার আমিই করবো। এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে না আসে সেজন্যই এই দুর্নীতি বিরোধী অভিযান। দুর্নীতিবাজ ধরতে আর ওয়ান ইলেভেন দরকার হবে না। এই অভিযানে অনেকেই অখুশী হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাতে সরকারের কিছু করার নেই। এই অভিযান চলবেই। দুর্নীতি করে কেউ ছাড় পাবে না। রোববার স্থানীয় সময় বিকেলে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেয়া চিঠি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, খুনিদের আশ্রয় দেবেন না। তাহলে বঙ্গবন্ধুর খুনীরা কী করে এখানে অবস্থান করে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছি। খুনিদের একজন কানাডায় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুনিদের যারা আশ্রয় দিচ্ছে সেটা তাদের জন্যও তো মঙ্গলজনক নয়। তাই খুনিদের ফেরত দেয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট সব দেশকেই আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।
দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক শ্রেনীর মানুষ হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। দামী দামী গাড়ি চড়ছে। এরা দামী গাড়ি কেনার পর কেউ সে গাড়ি স্পর্শ করলে মারতে আসে। ব্যবসা করলে মানুষ সম্পদশালী হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা শো অফ করে সমাজকে প্রশ্নের সম্মুখীন কেনো করবে? যদি সৎভাবে আয় করতো, তাহলে এমন হতো না। আর যারা সততার সাথে জীবনযাপন করছে তাদের সন্তানদের উপর এর প্রভাব পড়ছে। সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের চলমান উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আর এজন্যই অভিযান শুরু করেছি।
তিনি বলেন, বিচার করতে গেলে প্রথমে নিজের ঘর থেকেই বিচার শুরু করতে হয়। দুর্নীতির বিচার করতে আর ওয়ান ইলেভেনের প্রয়োজন হবে না। দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেনো কেউ পার পাবে না।
তিনি বলেন, নিজের দলের লোকদের আগে ধরছি, মিডিয়া এটা একটু বড় করে দেখাবে এটাই স্বাভাবিক। ঘুষ-দুর্নীতি করবেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করবেন, আবার হালাল মাংস খুঁজবেন এটা কেমন করে হয়? দেশের এই অবস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন একটি আঘাত প্রয়োজন ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে কেউ যদি অনেক সম্পদের মালিক হয়ে যায়, তাহলে ‘মুই কী হনুরে’ ভাব চলে আসে। অসৎ উপায়ে উপার্জন করে সম্পদের শো অফ করবে এটা হতে পারে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্যে, জনগণের সঙ্গে আমাদের মিশে চলতে হবে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কুপ্রভাব যাতে দল বা সমাজে না পড়ে সেটা আমাকে দেখতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং চলবে। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে কমিটির সভা করে সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছি। কখন কোথায় অভিযান চলবে। আমরা ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি করেছি। আমি নিউইয়র্কে বসেও সব দিক নির্দেশনা দিচ্ছি। তিনি বলেন, সবার জীবনমান উন্নত হোক এটা আমি চাই কিন্তু অবৈধ পথে কাউকে সম্পদশালী হতে দেয়া যাবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার যতোই বিতর্ক করুক রোহিঙ্গা তাদের নাগরিক। এই সমস্যা তাদের সৃষ্টি। সমাধানের পদক্ষেপও তাদেরকেই নিতে হবে। তাদের নাগরিক অন্যদেশে রিফিউজি হয়ে আছে এটা তো তাদের লজ্জা। জাতিগত সংঘাত তারাই তৈরি করেছে এজন্য সমাধান তাদেরই করতে হবে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা যাতে দেশে ফেরত যেতে পারে সে অবস্থা মিয়ানমারকেই তৈরি করতে হবে।
ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, স্পোর্টসকে প্রমোট করার জন্য আমরা নানা সুযোগসুবিধা দিয়েছি। কিন্তু এসব সুবিধা ব্যবহার করে এরা যে ক্যাসিনো নিয়ে আসবে ভাবতেও পারিনি। এসব অবৈধ কর্মকান্ড গ্রহণযোগ্য নয়। তাই পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসছে। আরো কী বের হয় দেখুন। অপেক্ষা করুন একবার যখন ধরেছি তখন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে কনসার্ট করা যায় কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীরা এমন উদ্যোগ নিলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করবো।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রী প্রেস সেক্রেটারি এহসানুল করিম ও জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নুর এলাহী মিনা।