logo
আপডেট : 11 October, 2019 20:23
শান্তিতে নোবেল জয় করলেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ

শান্তিতে নোবেল জয় করলেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ

শান্তিতে নোবেল জয়ী ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। ছবি-সংগৃহিত

মেইল রিপোর্ট: এবছর শান্তিতে নোবেল পেলেন আফ্রিকা মহাদেশের সর্বকনিষ্ঠ সরকার প্রধান ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলী। শুক্রবার নরওয়ের অসলোর স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় নোবেল কমিটি এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে। শান্তিতে নোবেলজয়ী অষ্টম মুসলিম তিনি।   

পাঁচ সদস্যর নোবেল ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ব্রেইট রেইস অ্যানড্রেসেন বলেছেন, এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শান্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় তার প্রচেষ্টা ও প্রতিবেশি ইরিত্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষ এড়াতে তার পদক্ষেপের জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

চলতি বছর শান্তিতে নোবেলের জন্য বেশ জোরেশোরেই উচ্চারণ হয় আবি আহমেদের নাম। সম্প্রতি তার প্রচেষ্টাতেই ইরিত্রিয়ার সঙ্গে ইথিওপিয়ার পুরনো বৈরিতার অবসান ঘটেছে। দুটি দেশ ও জাতিকে এক সুতোয় গাঁথার জন্যই তিনি নোবেল জয় করলেন। ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া সীমান্ত যুদ্ধে দু’দেশের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ নিহত হন। ২০০০ সালে শান্তিচুক্তি হলেও উত্তেজনা বহাল ছিল।

                                            

গত বছরের ২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর আফ্রিকা মহাদেশের সর্বকনিষ্ঠ এ সরকার প্রধান খুব দ্রুততার সঙ্গে এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেগুলো দেশে-বিদেশে ইথিওপীয়দের মনে আশা সঞ্চার করেছে। ক্ষমতায় এসেই তিনি হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দিয়েছেন, সেন্সরশিপের নামে বন্ধ থাকা শত শত ওয়েবসাইট চালু করেছেন, ইরিত্রিয়ার সঙ্গে ২০ বছর ধরে চলা যুদ্ধের ইতি টেনেছেন, রাষ্ট্রের জরুরি অবস্থা তুলে নিয়েছেন।

রাজধানী আদ্দিস আবাবার চিত্রটাই যেন পাল্টে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই তরুণ নেতা। আগের সরকারের চাপে পিষ্ট থাকা মানুষগুলো এখন যেন একটু বুক উঁচিয়ে হাঁটতে পারছে, মন খুলে হাসার একটা উপলক্ষ এখন তাদের সামনে আছে, কয়েক দশক ধরে যেটি তাদের জীবনে ছিল না।

ইথিওপিয়ায় ৯০টিরও বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে। সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত। দশকের পর দশক দেশটির রাজনীতি যে ঘূর্ণাবর্তে ছিল, তাতে এ বিভেদ আরও বেড়েছে। সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাম ‘ওরোমো’। দেশের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ মানুষই এ সম্প্রদায়ের। প্রধানমন্ত্রী আবিও এ সম্প্রদায়ের। ইথিওপিয়ার অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, ওরোমো থেকে কেউ প্রধানমন্ত্রী না হলে গৃহযুদ্ধ নিশ্চিত। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এখন শান্তির বার্তা ইথিওপিয়ার সর্বত্র।

আবি বিস্ময়করভাবে সব নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে সমান জনপ্রিয়। তার বাবা ছিলেন ওরোমো মুসলমান এবং মা ছিলেন খ্রিস্টান। তিনি ওরোমো, আমরাহা, টাইগারি ও ইংরেজি ভাষায় সমান পারদর্শী।  

ইথিওপিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করেছেন গত বছরের ১৬ অক্টোবর। দীর্ঘ এক মাসের রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার মধ্যে গত বছরের এপ্রিলে দায়িত্ব নেন ৪৩ বছর বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীনদের (ইথিওপিয়ান পিপলস রেভল্যুশনারি ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) দ্বারাই এ পদে অধিষ্ঠিত।

ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতেও যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন আবি। দেশটির মন্ত্রীপরিষদের অর্ধেক নারী নিয়োগ দেওয়াসহ দেশটির প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রীও এসেছে তার সময়ে।

ইথিওপিয়ার সাইবার গোয়েন্দা সংস্থা ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি এজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি সামরিক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন তিনি।