বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে বৈঠক শেষে আন্দোলন স্থগিত করে মাঠে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্রিকেটাররা।
বুধবার রাতে বিসিবি কার্যালয়ে আলোচনা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান। একই সঙ্গে শুক্রবার থেকে ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমকে বিসিবি প্রধান বলেছেন, ‘আমরা আগের দিনই বলেছিলাম সব দাবিই মেনে নেবো। আজও (বুধবার) আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের ৯টি দাবি মেনে নিয়েছি।’
ক্রিকেটাররা আগের ১১ দাবির সঙ্গে আরও দুটি যোগ করে ১৩ দফা দাবি পেশ করেছিলেন গুলশানের সংবাদ সম্মেলনে। যদিও নাজমুল নতুন দুটি নিয়ে পরে আলোচনার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘নতুন দাবি নিয়ে আমরা আলোচনা করিনি। এগুলো আইনগত ভাবে দেখা হবে। এক নম্বর দাবিতে আমাদের কিছু করার নেই।’
শুক্রবার ভারত সফরের ক্যাম্প শুরু হচ্ছে। এই ক্যাম্প দিয়েই মাঠে ফিরছেন ক্রিকেটাররা। আর শনিবার থেকে শুরু হবে জাতীয় ক্রিকেট লিগের তৃতীয় রাউন্ড। আন্দোলন স্থগিত করায় প্রথম শ্রেণির এই ক্রিকেটও মাঠে গড়াচ্ছে সূচি অনুযায়ী।
বুধবার বিসিবি কার্যালয়ে রাত সাড়ে ৯টার পর শুরু হয় এই বৈঠক। গুলশান থেকে মিরপুরে অবস্থিত বিসিবি কার্যালয়ে বোর্ডের সঙ্গে এই আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, ইমরুল কায়েসদের মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররা।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করেন ক্রিকেটাররা। সেখানে তাদের মুখপাত্র হিসেবে কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। ১৩ দফা দাবি পেশের পাশাপাশি তিনি জানিয়েছিলেন, বোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি ক্রিকেটাররা। আজই (বুধবার) বোর্ডে যাবেন তারা।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর বিসিবিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনে নামা ক্রিকেটাররা। রাত ৯টার দিকে গুলশান থেকে মিরপুরে অবস্থিত বিসিবি কার্যালয়ে পৌঁছান তামিম। এরপর একে একে ভেতরে গেছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, ইমরুল কায়েসরা।
মানা হলো ক্রিকেটারদের ১৩ দাবির ১০টি:
ক্রিকেটারদের উত্থাপিত ১৩টি দাবির ১০টি মেনে নেওয়া হলো। এর মধ্যে বিসিবি ৯টি ও কোয়াব ১টি দাবি মেনে নিয়েছে।
ক্রিকেটারদের দাবিগুলোর মধ্যে প্রথমটি হলো ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) কোনও কার্যক্রম না থাকায় বর্তমান কমিটিকে অবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে। একইসঙ্গে কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদত্যাগ করতে হবে।
বিসিবি ৯টি দাবি মেনে নেওয়ার পর কোয়াবও তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে ক্রিকেটারদের দাবি মেনে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পাপন বলেন, ‘কোয়াব আমাদের অধীনে নেই। তাই এক নম্বর দাবি নিয়ে বিসিবির কিছু করার নেই।’ যদিও সাকিব শুনিয়েছেন আশার কথা, ‘আমরা দুর্জয় (কোয়াব সভাপতি নাইমুর রহমান দুর্জয়) ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের সঙ্গে একমত। আমাদের একটা নির্বাচন করতে হবে। জাতীয় লিগের পর ফাঁকা সময়ে আমরা বর্তমান ক্রিকেটারদের নিয়ে নতুনভাবে কমিটি গঠন করবো।’
বিসিবির জন্য প্রযোজ্য ক্রিকেটারদের বাকি ১২টি দাবির মধ্যে ৯টি মেনে নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো:
২. ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আগের মতো আয়োজন করতে হবে। নিজেদের মতো করে আয়োজন করতে হবে।
৩. এ বছর না হলেও পরের বছর থেকে আগের মতো বিপিএল আয়োজন করতে হবে। স্থানীয় ক্রিকেটারদের ভিত্তিমূল্য বাড়াতে হবে।
৪. প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ফি ১ লাখ করতে হবে। গোটা বছর কোচ-ফিজিও দিতে হবে। জাতীয় ক্রিকেট লিগে প্রতি বিভাগে অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো মানের বল দিতে হবে। ডিএ ১৫০০ টাকায় কিছু হয় না; তাই বাড়াতে হবে। ট্রাভেলে বিমানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ভালো মানের হোটেল হতে হবে।
৬. চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা ও বেতন বাড়াতে হবে।
৭. দেশি সব স্টাফের বেতন বাড়াতে হবে। কোচ থেকে গ্রাউন্ডস ও আম্পায়ার, সবার বেতন বাড়াতে হবে।
৮. ঘরোয়া ওয়ানডে বাড়াতে হবে। বিপিএলের আগে আরেকটি টি-টোয়েন্টির টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে।
৯. ঘরোয়া ক্যালেন্ডার নির্দিষ্ট করতে হবে।
১০. বিপিএলের পাওনা টাকা সময়ের মধ্যে দিতে হবে।
মেনে না নেওয়া ১১ থেকে ১৩ নম্বর পর্যন্ত দাবি তিনটি নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে বলে জানান বিসিবি সভাপতি। এগুলো হলো:
১১. ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ দুটোর বেশি খেলা যাবে না, এই নিয়ম তুলে দিতে হবে। সুযোগ থাকলে সবাই খেলবে।
১২. ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনায় আমরা স্বচ্ছতা চাই। এর একটা ভাগ আমরা চাই।
১৩. বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল ভালো করছে। নারীদের ক্ষেত্রেও তাদের ন্যায্য হিসাব দিতে হবে।
বিসিবির সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলন স্থগিত করেছেন ক্রিকেটাররা। শনিবার থেকে মাঠে ফিরছেন তারা। দুই দিন পিছিয়ে ২৫ অক্টোবর শুরু হবে জাতীয় ক্রিকেট লিগের তৃতীয় রাউন্ড। ওইদিন থেকে শুরু হচ্ছে ভারত সফরের জন্য জাতীয় দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্প।
গত ২১ অক্টোবর ১১টি দাবি জানিয়ে ধর্মঘট শুরু করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এরপর জরুরি বোর্ড সভা ডাকে বিসিবি। কিন্তু তাতে সমাধান হয়নি।
আজ বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিসিবি সভাপতি। এরপর সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে আগের ১১ দাবির মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এনে আরও দুটি যোগ করেন ক্রিকেটাররা। সবশেষে বিসিবির সঙ্গে তারা বৈঠকে বসলে চলমান সংকটের সমাধান হয়।