logo
আপডেট : 29 October, 2019 02:14
ভাইয়ে ভাইয়ে কোন বিরোধ নয়
রিয়াজুল হক

ভাইয়ে ভাইয়ে কোন বিরোধ নয়

মনে করুন, আপনাদের বাবা ৬ কাঠা জমির ওপর একটা বাড়ি করেছিলেন।আপনারা দুই ভাই। একসাথে বড় হয়েছেন, একসাথে আপনাদের মা হাতে তুলে খাইয়ে দিয়েছেন, একসাথে স্কুলে গিয়েছেন, কলেজে গিয়েছেন। এখন কি এমন হল যে, বাবার সেই ৬ কাঠা জমি ৩ কাঠা করে ভাগ করে নিয়ে দুইটা বাড়ি করে আলাদা থাকতে হচ্ছে, খেতে হচ্ছে?

কিংবা মনে করুন, আপনার বাবার ২ বিঘা চাষাবাদের জমি আছে। আপনারা দুই ভাই সেই জমির অংশীদার। শহরে থাকেন। গ্রামে কেউ নেই। আপনাদের জমি অন্যের কাছে বর্গা দিতে হয়। অথচ আপনারা একসাথে বর্গা না দিয়ে, যে যতটুকু জমি ভাগে পেয়েছেন, সে তার মত একেকজনকে জমি বর্গা দিয়ে দিচ্ছেন। আপনাদের জমি আইল দিয়ে আলাদা করে চাষ করা হচ্ছে। লেখাপড়া শিখে আপনারা কত বিবেকবান হয়েছেন, সেটাই এখন সকলকে দেখিয়ে দিচ্ছেন।

পার্থিব সম্পত্তির কারণে ভাইয়ে ভাইয়ে ভুল বোঝাবুঝি হবে, সেটাই মেনে নেওয়া যায় না। সেখানে মারামারি, খুন, জখমের বিষয়তো কল্পনাতেও আনা উচিত না। অথচ সেটাই এখন হচ্ছে। ভাইদের সমস্যা সমাধানে এলাকায় সালিশ বসাতে হয়। ভাইদের নিজেদের ভুলের বিচার করে গ্রামের মাতুব্বর কিংবা পাড়ার ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গ। 

ভাইয়ে ভাইয়ে অমিল হবে কেন? সামান্য স্বার্থের কারণে এক ভাই অন্যজনের মুখ দেখা বন্ধ করে দেয়। মনে হয়, মৃত্যুর পর কবরে নিয়ে যাবে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি। একটু মেনে নেওয়ার ইচ্ছা যদি প্রতিটা ভাইয়ের মধ্যে থাকত, তবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটত না। কিছু যদি বেশি পায়, তবে সেটাতো আপনার ভাই পেল। 

একটু মনে করার চেষ্টা করুন, ছোট থাকতে এক ভাই অন্যজনের গলা ধরে ঘুমিয়ে থাকতেন। তাহলে বড় হয়ে কেন পারছেন না, বুড়ো হয়ে কেন পারছেন না? সুখে দুঃখে সবচেয়ে কাছের বন্ধু কিন্তু আপনার ভাই। 

খুব ছোট থাকতে দেখতাম, যাদের পিঠাপিঠি দুই/তিন ভাই থাকত, তাদের সাথে পাড়ার কেউ মারামারি করতে যেত না। কারণ কোন একজনকে মারলে, অন্য ভাইরা মিলে সেই ছেলেটিকে মারত। তবে সেসব মারামারি মারাত্মক কিছু ছিল না।

ভাইয়ের চেয়ে কেউ আপন হয় না। সম্পর্ক সেই আট-দশ বছর বয়সে যেমন ছিল,ঠিক সেই রকম রাখেন সারাজীবন। এক ভাই অন্য ভাইয়ের কাছে কখনো বড় হবেন না। ছোটদের মত দুষ্টুমি করুন। ভাইদের মধ্যে কোন মধ্যস্থকারী থাকতে দেবেন না। একজন অন্যজনকে বকা দেবেন, রাগারাগি করবেন, আবার একসাথে খেতে বসবেন। ভাইয়েরা এক থাকলে, পৃথিবী হাতের মুঠোয় থাকবে। কেউ চোখ রাঙিয়ে কথা বলার সাহস পাবে না।

 

 

লেখক: উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক