logo
আপডেট : 31 October, 2019 09:33
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, মনুষত্বের স্খলন, রাষ্ট্র যন্ত্র ও আওয়ামী লীগ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, মনুষত্বের স্খলন, রাষ্ট্র যন্ত্র ও আওয়ামী লীগ

এনসি রায়:
আমাদের দেশ, আমাদের জলবায়ু, আমাদের দেশের মানুষ স্বাভাবিক অর্থেই অতীব সুন্দর, অতীব শান্ত, ও শান্তিপ্রিয়। বহুকাল ধরে এই দেশ যে অনেক গৌরবময় ঐতিয্য বহন করে চলেছে সেকথা অনশ্বীকার্য। এই দেশের অনেক অনেক সুখ্যাতি শুধু এদেশের বৃহৎ অসাম্প্রদায়িক, স্বাধীনচেতা, প্রগতিশীল মানুষের জন্য। অসাম্প্রদায়িক সেই বৃহৎ জনগোষ্ঠির প্রতি পূর্ণ মর্যাদা ও শ্রদ্ধা জানাই।
আমার প্রিয় দেশ, আমার অহংকারের বাংলাদেশ, আমার গর্বের মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা।  এই প্রানের বাংলাদেশকে আমাদের অনেক মূল্য দিয়ে পেতে হয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম, ৭কোটি মানুষের অনেক অনেক কিছু ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের কষ্টার্জিত এই গৌরব গাঁথা। আমাদের স্বাধীনতা আমাদের অহংকার যেনো আমরা খুন্ন হতে না দেই।
সকল অসাম্প্রদায়িক শক্তির নিকট উদাত্ত্ব আহবান, যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম করে দেশের স্বাধীনতা এনেছিলাম তা যেনো আমরা পদদলিত না করি। 
আমি শংকিত, আমি স্তম্ভিত, উদ্বেলিত, আমি উৎকন্ঠিত। আজ বাংলাদেশে, আমার স্বাধীন বাংলাদেশে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় কি নেমে এসেছে! স্বাধীনতা আন্দোলনের সফলতা অর্জনকারী এই দলটি আজ ক্ষমতায়। তাঁরা যে চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে বা নির্ভর করে এই দেশের ৯৮% মানুষকে একত্রিত করেছিলন তা আজ কোথায় এসে দাড়িয়েছে। যারা তৎকালীন সময় আমাদের বিপক্ষে ছিলো তথা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলো, শুধু তাই নয়, মুক্তি যুদ্ধের বিপক্ষে গিয়ে হানাদার বাহিনীর সাথে যোগসাজস করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো, স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোকেদের নির্মম ভাবে হত্যা ও হত্যার সহযোগিতা করেছিলো, মা বোনদের সম্ভ্রমহানী করেছিল। হানাদারদের রসনা বিলাসে তাদের নিকট সোপর্দ করেছিল, হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর অমানবিক অত্যাচার সহ তাঁদের সম্পদ লুন্ঠন ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল তাঁদের ঘরের নারীদের নিয়ে পাক বাহিনী ক্যাম্পে দিয়েছিল। আজ আবরন পাল্টে তারা কি করে এই স্বাধীনতা আন্দোলনের একমাত্র মূখ্য দলটির উপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁদেরকে  যথেচ্ছা ব্যবহার করে চলেছে?  তারা অজুহাত তৈরী করে বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের উপর অমানবিক অত্যাচার, দমন পীড়ন, জবর দখল ইত্যাদি ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। অথচ ১০০% সংখ্যালঘুদেরই সমর্থন তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রতি ছিলো। 
মানবিকতা আর অমানবিকতা, মনুষত্ব ও পশুত্ব (Humanity ও Animality) সকল মানব মানবীর মধ্যে বিদ্যমান। এই জন্য লোকে আশীর্বাদ বা দোওয়া পার্থী হয়ে প্রার্থনা করে  বলে আমার অমুক “যেনো মানুষের মত মানুষ হয়” । মানুষকে অর্থাৎ এই দুই পা বিশিষ্ট প্রানীকে মা-নু-ষ  হতে হয়। কারণ একটি কুকুর অনায়াসে সে  কুকুর, একটি পাখী অনায়াসে সে পাখী, একটি মাছ অনায়াসে সেটি মাছ, এমনি ভাবে একটি কীট বা পতঙ্গ অনায়াসে সেটি কীট বা পতঙ্গ, একটি জানোয়ার অনায়াসে সেটি একটি জানোয়ার। কিন্তু একজন মানুষ অনেক প্রানপণ চেষ্টার বিনিময়ে, অনেক ত্যাগ তিতীক্ষার বিনিময়ে, অনেক সাধনার বিনিময়ে  তিনি একজন মানুষ! মানুষের মধ্যে  মনুষত্ববোধ যদি বেশী থাকে বা যার মধ্যে যত বেশী মনুষত্ব বোধ জাগ্রত তিনি ততো ভালো মানুষ। শুধু মানুষ কে ‘মানুষ’ হ’তে হয় । তো, সকলেই তো মানুষের মত মানুষ নয় বা মানুষ হ’তে পারে না, এটাই হচ্ছে মানুষের সমস্যা।

কোথায়ও ধান বা খাবার ছিটালে কাক বা কবুতরেরা দলে দলে এসে এক সাথে খেতে দেখা যায়। এটি ওদের ধর্ম। কিন্তু মানুষের বেলায় তেমনটি হয়না, এমন যদি কিছু হয় তবে মানুষের লাশের উপর দিয়ে মানুষ নামের  জন্তুরা আখের গোঁছাবে। কিন্তু এই মানুষ, স্কুলে যায়, কলেজে যায়, মাদ্রাসায় যায়, গুরুকুল বিদ্যালয়ে যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, পি এইচ ডি করে ইত্যাদি ইত্যাদি কত কিছু করে। অনেক বই পুস্তক পড়ে অনেক সঙ্গ করে, মজলিশ করে, সমাবেশ করে, ধর্মীয় প্রার্থনাগারে যায়, যেতে যেতে শরীরের বিভিন্ন অংগে অনেক দাগ চিহ্ন পড়ে যায় তার পরেও হুঁশ হয়না অনেকের। আসল চিন্তার উন্মেষ ঘটেনা এই বেহুঁশগুলির! আর এদের জন্যই পরিবেশ পরিস্থিতি জ্বলে পুড়ে ছার খাঁর হয়ে যায়। রক্তের বন্যা বয়ে যায়, মানুষ নামের হতভাগারা গৃহহীন হয়, ভিটে ছাড়া হয়, দেশ ছাড়া হয়, ও এমন কি দুনিয়া ছাড়া হয় । 
আমরা  কি একবার ভেবেছি, আমরা কোত্থেকে এসেছি, কতদিন এই পৃথিবীতে থাকবো, আর তারপর কোথায় চলে যাবো ? আমাদের কি কোন গ্যারান্টি আছে বলতে পারেন ?  তবে আমারা কেনো এত বাড়াবাড়ি করি?  আমরা  কি পারিনা অন্যকে ভালোবাসতে? আবু বিন আদমের কথা মনে পড়ে গেলো, তিনি বলেছেন “to love man is to love god “  মানুষকে ভালোবাসার নামই খোদাকে ভালবাসা। 
“আত্মার শান্তিই পরমাত্মার শান্তি” কারণ আত্মা ই তো পরম আত্মার অংশ। মানুষ তো মানুষের জন্য ! তবে কেনো এই মানুষ অমানুষ হয়ে যায়?
আমাদের জনপদ, আমাদের আবাসস্থল, আমাদের পূর্বপুরুষের ঐতিয্য, আমাদের পরম্পরা, আমাদের সহমর্মীতা, আমাদের ভালোবাসা, আমাদের সহাবস্থান, জাতী, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলেরই জন্য এক গৌরবময় দৃষ্টান্ত । এই গৌরবগাঁথা মাঝে মধ্যে যে হোঁচট খায়নি সেকথাও সঠিক নয়, কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়ে থাকেনি। আবার পথ চলেছে, সামনে অগ্রসর হয়েছে। মাঝে মধ্যে ভয়ানক ঝড় আসে সব কিংছু যেনো তছনচ করে ফেলে তারপর থেমে যায় । কিন্তু কেনো এই ঝড় আসবে? আর এই ঝড়কে আমরা যারা রুখতে পারি তারা কেনো রুখি না? কেনো বন্ধ করে দেই না? কেনো আমরা খেলা দেখি? এখেলা তো জীবন মরনের খেলা !
হ্যাঁ আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলছি। মাঝে মধ্যে দুষ্ট চক্রেরা তাদের লীপ্সা, তাদের হীন লালসা চরিতার্থ করার জন্য অনেক নিষ্ঠুর, পাশবিক, জঘন্য পথ অবলম্বন করে নিরীহ সংখ্যালঘুদের ও দুর্বলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর তখনি হয় সমস্যা! সম্প্রীতি তখন দুমড়ে মুচড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে কাঁদে। মনুষত্বের দাবীদার মা-নু-ষ  তখন নীরব দর্শক হয়ে গেলে সম্প্রীতি থেকে প্রীতি পালিয়ে যায়।

সরকার ও প্রসাশন তামাসা দেখলে নির্মম, করুণ অবস্থার অবতারণা হয়। কিন্তু সমাধানের পথও আছে, সরকারের উচিত তখন শক্ত হস্তে এটি দমন করা। সেটি না হলেই সমস্যা ঘনিভূত হয় । যারা এই জঘন্য কাজে অংশগ্রহন করে তারা সংখ্যায় খুবই সামান্য। কোন শতকরা নাম্বার দিয়ে তাদের সনাক্ত করা যায়না অথচ তারা এতটা প্রভাব বিস্তার করে যে সেটা ক্যানসারের মত অবস্থা ধারন করে। এটাকে সারাতে হ’লে সরকারকেই সার্জারীর ভূমিকা নিতে হবে। সাথে থাকবে সচেতন বিশাল শান্তিপ্রিয় অসাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠি। তাহলেই  সোনার দেশে সোনার মানুষ হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতী হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে।