রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্ত প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের ঘটনায় আন্তর্জাতিক চাপে থাকার পরেও মিয়ানমার আইসিসির তদন্তকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আদালতের এ তদন্ত প্রত্যাখ্যান করে সরকারের মুখপাত্র জানান, রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কোনো অন্যায় হলে তার তদন্ত মিয়ানমার সরকার নিজস্ব তদন্ত কমিটি দিয়ে করবে। প্রয়োজনে যে কোনো ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
আইসিসির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘এটা বিশ্বাস করার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে যে, রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপকভাবে এবং পদ্ধতিগতভাবে সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকতে পারে, যা মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পাড়ির পেছনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকতে পারে। চেম্বার তাই বাংলাদেশ-মিয়ানমারের পরিস্থিতি তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে।’
চেম্বারের বক্তব্য হচ্ছে, ‘আদালত সদস্য দেশের ভূখণ্ডে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে হওয়া অপরাধ এখতিয়ারভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।’
মিয়ানমার সদস্য দেশ না হলেও, বাংলাদেশ সদস্য। ২০১০ সালে আইসিসির রোম সনদ অনুস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
২০১৭ সালের আগস্টে সেনাবাহিনীর অভিযানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। অভিযানের নাম করে সেনাবাহিনী মূলত গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালিয়েছে।
জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এই অভিযানকে জাতিগত নিধনের চেষ্টা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার।
বৃহস্পতিবার প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন তদন্তের অনুমতি দিয়ে আইসিসির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
এদিন সন্ধ্যায় নেদারল্যান্ডসের হেগেতে আইসিসির প্রাক-বিচারিক আদালত-৩ এক ঐতিহাসিক রায়ে এই অনুমতি দেন। এর ফলে আইসিসির কৌঁসুলি তদন্ত শুরুর সবুজ সংকেত পেয়েছে।
এর আগে সোমবার আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। এর পরেই আইসিসি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি দিল।