তীব্র আন্দোলনের পর জনসম্মুখে নারীদের আচরণ ও পোশাক নিয়ন্ত্রণে প্রণীত জনশৃঙ্খলা আইন বাতিল করেছে সুদান সরকার। এর পর বিক্ষোভকারীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদোক।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাতভর দেশটির রাজধানী খার্তুনে আইন বাতিলের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিজয় উদযাপন করেছে নারীরা।
ওমর আল বশির সরকারের পতনের পর থেকে সেখানে তার দল ভেঙে দেওয়া ও জনশৃঙ্খলা আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। এর ফলে বৃহস্পতিবার আইনটি বাতিল করে কর্তৃপক্ষ।
১৯৮৯ সালে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসেন ওমর আল বশির। প্রায় ৩০ বছর শাসনের পর চলতি বছরের এপ্রিলে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। বর্তমানে সেনা ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের একটি কাউন্সিল দেশটির নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন আবদাল্লাহ হামদোক।
জনশৃঙ্খলা আইনটি নারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হতো। এই আইনে নারীরা কী পরবে, কার সঙ্গে কথা বলতে ও দেখা করতে পারবে, চাকরি গ্রহণ করতে পারবে কীনা এমন সব নিয়ম ছিল। এমনকি প্রকাশ্যে ট্রাউজার পরার কারণে নারীদের ৪০টি দোররা মারা হতো। সুদানের সমাজে উত্তেজনা ও বিভাজন সৃষ্টি করতে এমন আইন প্রয়োগ করা হতো। মূলত সমাজে বৈষম্যের জন্য এনসিপিকে দায়ী করে অধিকারকর্মীরা।
সুদানের বিক্ষোভকারীদের অন্যতম দাবি ছিল জনশৃঙ্খলা আইন বাতিল ও বশিরের রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) ভেঙে দেওয়া। দাবি পূরণের খবরে রাজধানীর রাস্তায় নেমে রাতধর উল্লাস করে বিক্ষোভকারীরা।
সুদানের নতুন সার্বভৌম কাউন্সিলের দুই নারী সদস্যের একজন হলেন আয়েশা মুসা। তিনি বলেন, সাবেক শাসকদের মনোযোগ ছিল নারীরা কোন পোশাক পরলো আর তাদের আচরণ কেমন। এ সময় নারীদের ট্রাউজারও পরতে দেওয়া হতো না- আর অবহেলা করা হতো তাদের শিক্ষা আর স্বাস্থ্যসেবাকে। তিনি বলেন, ‘এইসব দুর্নীতি বন্ধের সময় এসেছে, এর মাধ্যমে নারীদের প্রতি এমন আচরণ বন্ধ করবে সুদান।’
মানবাধিকারকর্মী হালা আল কারিব বলেছেন, আইনটি বাতিল ছিল দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই আইনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল গরীব, যুদ্ধকবলিত এলাকা ও রাজধানীর বাইরের নারীরা। তিনি এই বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন, এমন একটি বৈষম্যমূলক আইনি কাঠামো শেষ করার জন্য আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন।