রাজধানীর কেরানিগঞ্জের প্লাস্টিক কারখানায় আগুনের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। তাদের মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১০ জনের মধ্যে শতভাগ পোড়া রোগীরা মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। আইসিইউয়ের সামনে দু:সংবাদের আশঙ্কায় সময় পার করছেন স্বজনরা।
তবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি ২২ জন রোগী শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শুক্রবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের লাইফ সাপোর্টে থাকা অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে এমন পোড়া রোগী রয়েছে যাদের মুখ চেনা যাচ্ছে না। শ্বাসনালীও খুব খারাপভাবে পুড়ে গেছে। এই ১০ রোগীর মধ্যে ৯ জনের ৬০ থেকে ৮০ ভাগ এবং আবদুর রাজ্জাক নামে একজনের শতভাগ পোড়া। ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীনরা এখন কিছুটা শংকামুক্ত রয়েছে। তাদের শরীরের ৫ থেকে ২০ শতাংশ পুড়েছে।
তিনি বলেন, লাইফ সাপোর্টে থাকা প্রত্যেকেরই শ্বাসতন্ত্র পোড়া (ইনহ্যালেশন বার্ন)। এমনভাবে পুড়েছে যেখান থেকে সুস্থ হওয়া দুরূহ ব্যাপার। অবস্থা এমন যে, গত ৪০ বছরের অভিজ্ঞতায় এত ভয়াবহ রোগী আমি দেখিনি। গতকাল এখানে একজন মারা গেছে যাকে তার স্ত্রী চিনতে পারেনি। মুখমন্ডল এমনভাবে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। পরে তার হাতের কাটা দেখে শনাক্ত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, শতভাগ পুড়ে যাওয়া আবদুর রাজ্জাক অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছেন। যেকোনও সময় তার অবস্থার অবনতি হতে পারে। বিশ্বের কোথাও শতভাগ পোড়া রোগী বাঁচানো সাধারণত সম্ভব হয় না। আমরা চেষ্টা করছি, বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা।
সরেজমিনে দেখা যায় শুক্রবার সকাল থেকেই শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউয়ের সামনে স্বজনদের ভিড় দেখা যায়। পুরো করিডোর জুড়েই স্বজনদের অপেক্ষা। আবার কেউ একপাশে নির্জন জায়গায় গিয়ে বসে আহাজারি করছেন, কেউ সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন।
শতভাগ পুড়ে যাওয়া রোগী আবদুর রাজ্জাকের শ্যালক ওয়াহিদ জানান, রাজ্জাকের ১৩ বছরের একটি মেয়ে আছে। নাম টুম্পা। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত পরিবার। শোকার্ত বোনকে খুব কষ্ট করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। রাজ্জাকের স্ত্রীও সেখানে অপেক্ষা করছেন। দরজা খুললেই তাকিয়ে থাকছেন সেদিকে।
তিনি বলেন, ডাক্তাররা বলেছেন যেকোনও সময় মৃত্যুর খবর আসতে পারে। শতভাগ পোড়া রোগী নাকি বাঁচে না। গতকাল একজন পোড়া রোগী দেখেছিলাম। তার কান পুড়ে শক্ত হয়ে গেছে। অক্সিজেন মাস্কের ফিতা লাগিয়ে রাখলেও তা বারবার পড়ে যাচ্ছিল।
এদিকে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯ জনের লাশ তাদের স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ১০০ ভাগ পোড়া। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হতাহতদের চিকিৎসার ব্যয় সরকার বহন করবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
প্রসঙ্গত, ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অবস্থিত প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্লাস্টিকসামগ্রী তৈরির কারখানায় বুধবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে এ অগ্নিকান্ড ঘটে। ঘটনার সময় শ্রমিকরা কাজ করছিলেন।