logo
আপডেট : 14 December, 2019 01:36
রাজ্যে রাজ্যে বিক্ষোভে অশান্ত ভারত
মেইল রিপোর্ট

রাজ্যে রাজ্যে বিক্ষোভে অশান্ত ভারত

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে উত্তাল ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয় রাজ্য। নিহত হয়েছেন পাঁচজন। কারফিউ জারিসহ মোতায়েন করা হয়েছে সেনা। সফল বাতিল করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের দুই মন্ত্রী। সর্বশেষ শিলং সফর বাতিল করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

বিক্ষোভ সবচেয়ে জোড়ালো আসামে। নিহত পাঁচজনের সবাই ওই রাজ্যটির। এদিকে গতকাল থেকে উত্তরপূর্ব ভারতের আরেক রাজ্য মেঘালয়ও উত্তাল। শিলংয়ে কারফিউ জারিসহ ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এদিকে শুক্রবার বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের দিল্লি সফর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মেঘালয় সফর গতকাল শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়। তিন দিনের সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের আজ শুক্রবার সড়কপথে মেঘালয় যাওয়ার কথা ছিল।

সফরসূচি অনুযায়ী আসাম রাজ্যের রাজধানী গোহাটিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল জাপানের প্রধানমন্ত্রীর। গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৫ থেকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মোদি-শিনজোর বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাও বাতিল করা হয়।

এদিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে কারফিউ জারির কারণে সিলেটের তামাবিল দিয়ে ভ্রমণকারীদের যাতায়াত সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় আটজন বাংলাদেশি সীমান্ত পার হতে গেলে ভারতের ডাউকি থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। আন্দোলন চলছে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে উত্তরপূর্ব ভারত অগ্নিগর্ভ রুপ ধারণ করায় অমিত শাহের শিলং সফর বাতিল করা হয়। আগামী রোববার নর্থ-ইস্ট পুলিশ অ্যাকাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতির। ওই সফরের পর তার অরুণাচল রাজ্যের সফরও বাতিল করা হয়েছে।

বিতর্কিত ওই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে উত্তাল ভারতের উত্তরপূর্বের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিসেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মেঘালয়ে ১২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ তুলে নিলে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে রাজ্য ভবনের কাছে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়লে সংঘর্ষ বেধে যায়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আশ্বাস-অনুরোধ সত্ত্বেও আসামে আগুন জ্বলছে। বিক্ষোভ সামাল দিতে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। জারি করা হয়েছে কারফিউ। সবকিছু অগ্রাহ্য করে রাজ্যটির শহরে শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। আগুন জ্বেলে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আইনের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা।

আসামে ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখ এক এমপির বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে চারটি রেলস্টেশন ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের একটা কার্যালয়। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছেন পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। পাঁচজন নিহত হওয়ার ছাড়াও আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

আইনের বিরোধিতায় পশ্চিমবঙ্গেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। কলকাতা, হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, বহরমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে রেললাইন ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাস্তায় নেমে গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। হাওড়ায় ফেরার পথেও আটকে আছে একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন। স্থানীয় ট্রেন চলাচলও বন্ধ। রেললাইনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পাথর ছুড়ে হামলা চালানো হচ্ছে আটকে থাকা ট্রেনগুলোতে।

উত্তরপূর্বের রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ওপর লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। বিক্ষোভকারীরা বাঙালি অধ্যূষিত এলাকায় ভাঙচুর চালিয়েছেন বলেও খবরে জানানো হয়েছে। বিক্ষোভ চলছে ত্রিপুরা আর মণিপুরেও। আসামের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১ হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।