আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া থেকে:
বিশ্বময় সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন এবং অভিবাসন ব্যবস্থার কথা বললেও চলছে শোষন। মালয়েশিয়ায় ৬ লাখেরও অধিক অভিবাসী প্রতারনা হয়রানির শিকার হয়েছেন। ২০১৬ সালে ‘রিহায়ারিং প্রোগ্রাম’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় মালয়েশিয়া সরকার। প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৮ সালে ।
তিনটি ভেন্ডরের মাধ্যমে প্রকল্পটি পরিচালনা করে দেশটির কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। তারা প্রতি অভিবাসীর কাছ থেকে ৬ হাজার রিঙ্গিত বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা নেয়। ওই প্রকল্পে ৭ লাখ ৪৪ হাজার অভিবাসীদের কাছ থেকে টাক জমা নেয়া হলেও ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার অভিবাসীকে। বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অভিবাসীদের শোষনের কথা। প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাকী ৬ লাখ ৩৪ হাজার অভিবাসীকে ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয়নি। এমনকি পরবর্তীতে তাদের টাকাও ফেরত দেয়া হয়নি বলে ১৭ ডিসেম্বর ফ্রি-মালয়েশিয়া টুডে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। খবরে বলা হয়েছে, সংস্থাটির হিসেবে বৈধতা না পাওয়া অভিবাসীদের কাছ থেকে নেয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। ওই সংস্থার পরিচালক জোসেফ পল মালাইমফ বলেন, ‘টাকা দিয়েও এসব অভিবাসীরা বৈধতা পাওয়াত দূরের কথা তারা তাদের পাসপোর্টও হারিয়েছে। টাকা আর পাসপোর্ট দুনোটাই ভেন্ডর হজম করে ফেললেও বিষয়টি নিয়ে সরকার কোনো দায় নিতে চায় না। আবার ভেন্ডররাও সরকারের ওপর দায় চাপাচ্ছে। ফলে ৬ লাখেরও বেশি অভিবাসী হয়রানির শিকার বলে বলছেন সংস্থাটির পরিচালক জোসেফ পল মালাইমফ।
এ দিকে সংস্থাটির হিসেব অনুযায়ি ৬ লাখেরও বেশি অভিবাসী হয়রানির শিকার হলেও তাদের দায় না নিয়ে উল্টো অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরাতে গত ১ আগষ্ট থেকে শুরু করেছে ব্যাক ফর গুড কর্ম সূচী। আর কমসুচি শেষ হতে আর কয়েকদিন বাকি। গত ১ আগষ্ট থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচীর মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়া ত্যাগ করেছেন ৩৯ হাজার বাংলাদেশীসহ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯শত ১জন। যার মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ৫৩ হাজার ৩শত ২৮জন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের ৩৮ হাজার ৭শত ৩৪ জন। এছাড়াও ইন্ডিয়ার ২২ হাজার ৯শত ৬৪ ও মায়ানমারের ৬ হাজার ৯শত ২৩ জন। বাকিরা বিভিন্ন দেশের নাগরিক। ১৪ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মালয়েশিয়া অভিবাসন বিভাগের প্রধান দাতুক খায়রুল দাজাইমি দাউদ এই তথ্য প্রকাশ করেন। একবার তারা তাদের স্বদেশগুলোতে ফিরে গেলে তাদের আবার মালয়েশিয়ায় ফিরতে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। মালয়েশিয়ার এই প্রোগ্রামে তালিকাভুক্তদের কাছ থেকে ৭৮.২ মিলিয়ন রিংগিত (১৮.৭৫ মিলিয়ন ডলার) সংগ্রহ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।