logo
আপডেট : 20 December, 2019 03:10
`দাম বাড়লেও থাকবে মধ্যবিত্তের নাগালে, ভর্তুকি কমাতেই বাড়ছে বিদ্যুতের দাম'

`দাম বাড়লেও থাকবে মধ্যবিত্তের নাগালে, ভর্তুকি কমাতেই বাড়ছে বিদ্যুতের দাম'

স্বপ্না চক্রবর্তী: সম্প্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর গণশুনানির প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, দাম বাড়লেও তা মধ্যবিত্তের নাগালে থাকবে। 

মূলত বিদ্যুৎ খাতে সরকারি ভর্তুকি কমানোর জন্যই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে কোম্পানীগুলো। এতে করে দাম বাড়লেও তা নিন্মআয়ের মানুষের জন্য খুব চাপের হবে বলে আমার মনে হয় না। যদি চাপ হয় তাহলে বড় গ্রাহকদের জন্য হবে। 

নিউ ইয়র্ক মেইলকে দেওয়া একান্ত স্বাক্ষাৎকারে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এখন আমাদের সামনে দুটো চ্যালেঞ্জ। নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ জ্বালানি দেওয়া। সেই জায়গাতে পৌঁছাতে হলে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আর বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে কিছু নতুন নতুন চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হচ্ছে আমাদের। 

তিনি বলেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে কিছু অবকাঠামো দরকার। সেগুলো করার চেষ্টা করছি। 

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, নিন্ম মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষরা বিদ্যুতের যে দাম দিচ্ছে তা মূল দামের তুলনায় একেবারেই নগন্য। সেই মূল্য সমন্বয় কিন্তু কাউকে না কাউকে করতে হচ্ছে। কে করছে? সরকার করছে। বৃহৎ গ্রাহক করছে। 

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য সব গ্রামগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। কিন্তু আমাদের গ্রামগুলোর মানুষ বেশির ভাগই নিন্ম আয়ের। তাদের যে ইনকাম লেভে তা একেবারে লাইফ লেভেলের। সেই গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে যে ট্রান্সমিশন লাই করতে হচ্ছে, ডিস্ট্রিবিউশনের লাইন করতে হচ্ছে তার যে ব্যায় তা ওই গ্রামের মানুষরা যদি ১শ’ বছরও বিল দেয় তাহলেও পোষাবে না। ওই বিনিয়োগের জায়গাটা এডজাস্টমেন্ট কে করছে? সরকার করছে। বৃহৎ গ্রাহক করছে। আমাদের লক্ষ্য শতভাগ বিদ্যুতায়ন। শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে হলে জীবন মানের উন্নয়নও জরুরি। এর জন্য ১৫ লাখ গ্রাহক ২ টাকা করে বিল দেয় যার খরচ পড়ছে ৬ টাকা করে। এটিরও এডজাস্টমেন্ট জরুরি। 

তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রায় দুই কোটি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন আর গ্যাস সংকট নেই। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চার গুণ বেড়েছে। এখন ৯৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। এই সাফল্য ধরে রাখাও আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ মনে করি। আর সেই চ্যালেঞ্জকেও আমরা উতরে যাবো আশা করি। 

গ্যাস আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, যদি কয়লা, এলএনজি ও এলপিজির আলাদা আলাদা টার্মিনাল থাকতো তাহলে এসব জ্বালানি আমদানি সহজ হতো। এখন আমাদের এসব অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে চেনে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ হিসেবে। 

নসরুল হামিদ আধুনিক সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তার নির্দেশনায় দেশের গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা দূর হচ্ছে। এখন বিদ্যুতের জন্য কেউ রাস্তায় নামে না। মিছিল করে না। বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। বাসাবাড়িতে সৌর স্থাপনে বিশ্বে প্রথম। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। সবজি উৎপাদনে চতুর্থ। যথাযথ নেতৃত্বের জন্যই অল্প ভূমিতে বিপুল জনগোষ্ঠী নিয়েও এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এটাই প্রমাণ করে যে আমরা ঠিক পথেই আছি।

নিকট ভবিষ্যতে জ্বালানির দাম কমার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানির দাম অবশ্যই কমবে। যখন এইসব অবকাঠামো হয়ে যাবে। প্রাথমিক বিনিয়োগ হয়ে যাবে। তখন আর দাম বাড়ানো লাগবে না। তিনি বলেন, বিশ্বপ্রেক্ষাপট এত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে যে এক লক্ষ্যে থেকে আগানো যাচ্ছে না। আজ যে প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে দু’বছর পরেও তা থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই। আমাদের প্রযুক্তির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এখন যে তেল দিয়ে যানবাহন চলছে আগামী পাঁচ বছর পরে তা হয়তো চলবে না। সব চলবে বিদ্যুতে। যানবাহন যদি বিদ্যুতে চলে তখন তেল আমদানি কমে যাবে। প্রযুক্তি পরিবর্তনের সাথে ব্যবহারেরও পরিবর্তন হচ্ছে। এ জন্য এখন যে বিনিয়োগ তা যদি পাঁচ বছর পরে কাজে না লাগে তবে তা অপব্যয় হবে। সেটা তো আর করা যাবে না। প্রযুক্তি পরিবর্তনের সাথে যেমন তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে তেমনই নিজস্ব উৎপাদনের যোগানও বজায় রাখতে হচ্ছে। এটা আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটা ভর্তুকি থাকছেই এর থেকে বেড়োনোর উপায় হিসেবে তিনি বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে জ্বালানির দাম রাখতে চায়। সে কারণেই এই ভর্তুকি। ভর্তুকির মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। একই সাথে বড় স্থাপনাতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এই বিনিয়োগের অর্থও যদি ভোক্তাদের কাছ থেকে নেয়া হতো তবে অনেক বেশি খরচ হতো। জ্বালানিতে খরচ কম করে যে মানুষ শিক্ষায় খরচ করতে পারে, জীবনযাপন যেনো সহজ হয় সেজন্যই এই ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। নয় টাকার বিদ্যুৎ চার টাকায় দিচ্ছি। জ্বালানি খাতে দ্রুত আগানোর উপায় বের করা হচ্ছে। যদি আরও ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেশের মধ্য থেকে সরবরাহ করা যায় তবে খরচ কিছুটা কমবে।

গ্যাস সংকট কাটাতেই এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, গ্যাস আমরা আমদানি করছি। সেই সংকট নেই। সিএনজিতে আর ভর্তুকি দিচ্ছি না। এটা করা হয়েছিল পরিবেশের কথা মাথায় রেখে। বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত এখন অনেক বড়। এলএনজি ও বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। তাই সংকট আর নেই। আমাদের নিজস্ব গ্যাস দিয়ে গত এক দশক জিডিপি সাত ভাগের ওপর রাখা হয়েছে। তবে আমাদের নিজেদেরও দেশের ভেতরে খনন কাজ করতে বাড়াতে হবে। পেট্রোবাংলা এবং বাপেক্সকে নির্দেশনা দেওয়া আছে তারা ধীরে হলেও কাজ করছে। 

তিনি বলেন, আমরা নানাভাবে এই খাতে বিনিয়োগ করছি। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের সবচেয়ে ভালো সময় এখন। বিদেশিদের জন্য বিনিয়োগের উত্তম পরিবেশ। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি, স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, স্থল ও সাগরে গ্যাস-তেল অনুসন্ধান, এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গ্যাস সঞ্চালন ও ব্যবস্থাপনায় এখনই বিনিয়োগ করার সময়। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশিদের জন্য রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং কর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।


নসরুল হামিদ বিপুর জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৩ নভেম্বর। তিনি আওয়ামী লীগের একজন নেতা এবং দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

নসরুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব হার্ভার্ডের জন এফ কেনেডি স্কুল থেকে সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম অন লিডারশিপ সম্পন্ন করেন।

নসরুল হামিদ তরুণ বয়স থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি আওয়ামী লীগের তৃণমুল পর্যায় থেকে আস্তে আস্তে সাংগঠনিক পদ্ধতিতে আজকের এই পর্যায়ে এসেছেন।

১৯৯৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সহকারী সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং ১২ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন।তিনি ২০০১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ছিলেন।

ঢাকা-৩ আসন থেকে নবম জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য হন। ২০১৪ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নসরুল হামিদ একজন সফল ব্যবসায়ী ও সংগঠক। তিনি হামিদ গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি এবং আবাহনী স্পোর্টিং ক্লাব এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

নসরুল হামিদের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে। তার পিতা মরহুম হামিদুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের আগে আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুব কাছের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নসরুল হামিদের মা হাসনা হামিদও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলেন।