রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে মিয়ানমারের প্রতি নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন (ইউএনজিএ)।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এ প্রস্তাব পাস করা হয়।
প্রস্তাবে রোহিঙ্গা ও অন্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণায় উস্কানি দেয়া বন্ধ করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। কয়েক দশকের এমন অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। তবে বরাবরই মিয়ানমার বলে আসছে, তারা সন্ত্রাসীদের হুমকি মোকাবিলায় অভিযান পরিচালনা করেছে।
এ মাসের শুরুর দিকে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়ান দেশটির নেত্রী অং সান সুচি।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে নৃশংসতা চালিয়েছে, তার পক্ষে তিনি সেনাবাহিনীর পক্ষাবলম্বন করেন। এক সময়ে সারা বিশ্বে মানবাধিকার, শান্তির আইকন হিসেবে দেখা হতো যে সুচিকে, তাকে এই ভূমিকায় দেখতে পেয়ে বিস্মিত মানুষ।
গত চার দশক ধরে চালানো অত্যাচার, নৃশংসতার কারণে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে শুক্রবার জাতিসংঘ ওই প্রস্তাব পাস করে। এতে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক মিশনের তথ্যপ্রমাণকে জোরালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। দেখানো হয় কিভাবে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন করা হয়েছে ভয়াবহভাবে। এসব অপরাধ করেছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। এই পরিস্থিতিকে মিশন বর্ণনা করেছে ‘আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ’ হিসেবে।
জাতিসংঘে গৃহীত ওই প্রস্তাবনায় মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় সব ধর্মীয় গ্রুপকে সুরক্ষা দিতে এবং সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুবিচার নিশ্চিত করতে। ওই প্রস্তাবটি ১৩৪ ভোটে পাস হয়। ১৯৩ সদস্যের পরিষদে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয় ৯টি দেশ। ভোট দানে বিরত থাকে ২৮টি দেশ। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রস্তাবনা বা রেজ্যুলুশন আইনগতভাবে মানতে বাধ্য নয় মিয়ানমার। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব জনমতের প্রতিফলন ঘটবে।
ওদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাউ ডু সুয়ান নতুন এই রেজ্যুলুশনকে আরেকটি দ্বিমুখী নীতির উদাহরণ এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের ওপর অনাকাঙ্খিত রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির জন্য এই প্রস্তাবনা আনা হয়েছে। কিন্তু এতে রাখাইনের জটিল পরিস্থিতির কোনো সমাধান আসবে না।