টানা তিন মেয়াদ সরকার গঠন করে রেকর্ড গড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। শুধু বাংলাদেশই নয় বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্য এটি বড় ঘটনা।
ক্যাসিনো-জুয়াকান্ড, ঋণখেলাপী, ব্যাংকের তারল্য সংকট থাকলেও ২০১৯ সালকে ব্যবসায়ী বান্ধব বছর ছিলো বলে দাবি করেছেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। তবে বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি ছাড়ার সরকারের প্রথম বছরে তেমন কোনো বড় সাফল্য আসেনি বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। কিন্তু বছরটিতে ক্যাসিনোকান্ডসহ নিজ দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গিয়ে আওয়ামীলীগ সরকার সুশাসন নিশ্চিতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরটি সুশীল সমাজের কাছে কেমন ছিলো জানতে চাইলে নিউ ইয়র্ক মেইলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তারা।
শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলো। এর ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের রূপকল্পে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। টানা ১১ বছর বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এর ফলে মাথাপিছু আয় ও জিডিপি বৃদ্ধিসহ অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠেছে। সবচেয়ে বড় কথা আমরা যারা ব্যবসায়ী তাদের জন্য ২০১৯ সালটা ছিলো স্বপ্নের মতো।
তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা অবশেষে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। রূপালী ব্যাংক ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকই এখন সিঙ্গেল ডিজিট সুদে দীর্ঘমেয়াদি বৃহৎ ঋণ বিতরণ করছে। একইভাবে ডজনখানেক বেসরকারি ব্যাংকও সিঙ্গেল ডিজিট সুদে দীর্ঘমেয়াদি বৃহৎ ঋণ বিতরণ করছে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে এতদিন শুধু উৎপাদনখাতেই সিঙ্গেল ডিজিট সুবিধা থাকলেও আশা করছি আগামী এপ্রিল থেকে আমদানি-রপ্তানিতেও এই বিষয়টির বাস্তবায়ন হবে।
পোশাক খাতের রপ্তানি কমে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসেও তৈরি পোশাক রপ্তানীর হার এর আগের বছরের চাইতে ২.৯৪ শতাংশ বেশি ছিলো। কিন্তু জানুয়ারীতে কিছুটা রপ্তানী কমেছে। এর কারণ বৈশ্বিক বাজার। বিশ্ব বাজারের কারণেই এমনটা হয়েছে। তবে পোশাক খাতে নগদ প্রণোদনাসহ সরকার যেসকল সুবিধা প্রদান করছে এতে করে খাতটিতে উত্তোরত্তর সাফল্য আসবে বলে দাবি করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
তবে অর্থমন্ত্রী নিজে একজন ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন বলে দাবি করেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
সরকারের এক বছর পর্যালোচনায় তিনি বলেন, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের জন্য কিছু বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দিতেই এমনটি ঘোষণা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এতে করে যারা নিয়মিত ঋণ শোধ করছেন তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মানুষের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৮৬। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা ৮.১৫ তে উন্নীত হয়েছে। যা সত্যিই সুখের খবর। তবে গত বছরের প্রায় পুরোটা সময় দেশের শেয়ার বাজার ছিলো স্পন্দনহীন।
তিনি বলেন, রাজস্ব আয়েও গতি নেই, রপ্তানি খাতও ভালো অবস্থায় ছিল না। তবে অর্থনীতির প্রাণশক্তি প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত ছিলো, প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। তবে নেতিবাচক কিছু বিষয়ও ছিলো যার মধ্যে প্রবাসী নারী শ্রমিক নির্যাতনের মতো করুণ চিত্র এসেছে আমাদের চোখের সামনে।
সরকারের প্রথম এই বছরটিতে অবকাঠামোগত উন্নতির বছর ছিলো উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যানশাল বাংলাদেশের(টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ ছিলো চোখে পড়ার মতো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনোটার কাজই শেষ না হলেও যা হয়েছে তাও কম নয়। হয়েছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প আরও বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্প। তবে এসময়টায় সরকারী কর্মকর্তাদের দুর্নীতির চিত্রও ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বালিশ কান্ড, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের পর্দা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয়ে দুর্নীতি। এতে করে প্রমাণিত হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা যতই বাড়ানো হোক না কেনো তাদের দুর্নীতি বন্ধ করা খুবই কঠিন চ্যালেঞ্জ সরকারের জন্য। তবে সরকার প্রধানের হুঁশিয়ারিও ছিলো আশাব্যাঞ্জক। বিশেষ করে ক্যাসিনোকান্ডে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী নিজের দলের নেতাদেরকেও ছাড় না দেওয়ার মতো ঘটনা আমাদের আশান্বিত করে তুলেছে।