সাংবাদিকগণ হচ্ছেন জাতির জাগ্রত বিবেক। আর সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাই সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনে। বলছিলেন সাংবাদিকতায় অধ্যয়ন করা একসময়ের সাংবাদিক, পেশাদার কূটনীতিক মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ.শহীদুল ইসলাম।
সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় দেশটিতে কর্মরত ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সাংবাদিকতার বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর মো: জহিরুল ইসলাম, কাউন্সিলর (শ্রম ২) মো: হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল, শ্রম শাখার দ্বিতীয় সচিব ফরিদ আহমদ।
সংবাদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তুলে ধরে হাইকমিশনার মহ.শহীদুল ইসলাম বলেন, সংবাদ সাজানোর বা উপস্থাপনার ক্ষেত্রে তথ্যের সত্যতা, শব্দ প্রয়োগ এবং বস্তুনিষ্ঠতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দিন চলে যাবে সংবাদের শব্দগুলি বাসি হতে পারে কিন্তু সংবাদের আবেদন অন্তরের গভীরে রয়ে যাবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ”র যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের রাষ্ট্রের প্রতি দায় দায়িত্ব অনেক বেশি। এ দায় শোধ করতে হয় জনগণকে বিভ্রান্ত না করে, সার্বভৌম ক্ষতি না করে, নিরাপত্তা বিঘ্নিতনা করে এবং শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে। তাহলেই উত্তম সাংবাদিক হওয়া যায়।
তিনি সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে খুব সচেতনতার সাথে উপস্থাপন করার অনুরোধ করেন।
তিনি মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সকল সম্পর্কে চিড় ধরবে যদি সংবাদে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয় এর ফলে মালয়েশিয়ায় বসবাসকারি বাংলাদেশের নাগরিকরা বিপদে পড়তে পারে। প্রবাসে থেকে সংবাদকর্মী হওয়া খুব কঠিন কাজ। অন্তরের টান না থাকলে তা সম্ভব নয়। দেশে রেমিটেন্স পাঠানো আর আশাবাদী সংবাদ দেশে পাঠানো প্রায় অনুরূপ অর্থ বহন করে। কারণ আশাবাদী সংবাদে দেশে থাকা মা বাবা ভাই বোন সান্তনা পায়। অপরদিকে মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত বা সত্যের বিকৃতি মানুষের মাঝে হতাশা ও বিভ্রান্তি ছড়ায়। এসব ক্ষতি করে সমাজের।
হাইকমিশনার বলেন, আপনাদের দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি প্রবাসীরা। তাদের অবদান ভুলার নয়। প্রবাসীরা দেশ ছেড়ে থাকলেও তারা সবসময় দেশ ও মানুষের কল্যাণ নিয়ে ভাবেন। পরবাসীদের পাঠানো অর্থে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ। তাই সরকারও প্রবাসীদের সবসময় সম্মান দেখিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ করে রীহায়ারিং এর সময় ব্যাপক প্রচার করেছে ফলে ৬ লাখ লোক এর আওতায় এসেছে, তেমনি ব্যাক ফর গুডের সময় প্রচার করেছে ফলে ৫১ হাজারের অধিক বাংলাদেশি সুবিধা নিতে পেরেছে বাংলাদেশেও পজিটিভ ইমেজ বৃদ্ধিতে সহায়ক হোয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, প্রবাসীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা, অসুবিধা ও সমস্যা সমাধান করার জন্য হাইকমিশন কাজ করছে। সরকার প্রবাসীদের জন্য আলাদা সার্ভিস ভবন দিয়েছে যেখানে একসাথে ৩ হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা আছে। হাইকমিশন থেকে গিয়ে মোবাইল টিমের মাধ্যমে পেনাং ও জহুর বারু, ক্যামেরুন হাইল্যান্ড ও ক্লাং এ সেবা দিচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে সেবা প্রদানের পদ্ধতিতে যোগ হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতির। ফলে সেবা প্রদানের সক্ষমতা বেড়েছে আগের থেকে বেশি। ক্ষতিপূরণ আদায়ের হার বেড়েছে উল্লেখ করে বলেন গত বছর প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতপূরণ আদায় করে দেশে প্রেরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সাথে মালয়েশিয়ার বানিজ্য বৃদ্ধি পেয়ে গত তিন বছরে ৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হোয়েছে। বাংলাদেশে সরাসরি মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতেছে এখন ৯ ম বিনিয়োগকারী দেশ হয়েছে। তিনি প্রবাসীদের মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী পণ্যের আমদানি করার সুযোগ নিতে অনুরোধ করেন।
সরকার প্রবাসীদের কল্যাণ করছে, প্রবাসীর পরিবারের জন্যও কল্যাণ এর ব্যবস্থা করেছে। তিনি দেশে ফিরে গিয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার আলোকে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে নিজেই কারখানা বা ব্যবসা করতে বলেন।
তিনি বৈধ পথে দেশে অর্থ প্রেরণের জন্য আহবান জানিয়ে বলেন, বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর জন্য সরকার ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে।
হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশন ইচ্ছুক অবৈধ প্রবাসীদের দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য দীর্ঘসূত্রিতা ও হয়রানিমুক্ত সহজ পদ্ধতি প্রবর্তন এবং জেল জরিমানা ব্যতিরেকে দেশে ফেরার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মালয়েশিয়া সরকারের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে আসছিল। ফলশ্রুতিতে মালয়েশিয়া সরকার বি-ফোর-জি কর্মসূচি চালু করে। কেননা বিদ্যমান পদ্ধতিতে গ্রেফতার, জরিমানা ও কারাবরণ শেষে ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে অবস্থানের পর দেশে ফেরত যেতে হয়; আত্মসমর্পণকারীদের স্পেশাল পাশ বা বহির্গমন অনুমতি পেতে ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হত এবং ৩১০০ রিংগিত বা তার বেশি জরিমানা দিতে হত যা তাদের জন্য কষ্টকর।
এ কর্মসূচির সুফল প্রাপ্তির জন্য হাইকমিশন ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করে। এ সময় বিশেষ করে উল্লেখ ছিল ট্রাভেল পারমিটের আবেদন করলে একদিনেই ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করা যা দূতাবাস করেছে। একইভাবে বিশেষ বাস সার্ভিসের ব্যাবস্থা করে একই দিনে পাশ সংগ্রহ করে দিয়েছে। সরকারকে অনুরোধ করে ১৬ টি অতিরিক্ত ফ্লাইট এবং ভর্তুকি মূল্যে বিমানের টিকিট এর ব্যাবস্থা করেছে।
তিনি বলেন প্রবাসীদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল প্রবাসে ভোটার হবার এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঢাকায় সভা করে সেখানে হাইকমিশনার মহ শহীদুল ইসলাম এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। তার ফলশ্রুতিতে বহির্বিশ্বে সর্বপ্রথম মালয়েশিয়াতে জাতীয় পরিচয় পত্র ও ভোটার তালিকা নিবন্ধন এর কাজ শুরু করে।
উল্লেখ্য, বর্তমান হাইকমিশনার মালয়েশিয়ায় যোগদানের পর থেকে বাংলাদেশ কান্ট্রি স্বীকৃতি পায় স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে নতুন করে লোক নিয়োগ শুরু হয়। বর্তমানে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।