logo
আপডেট : 12 February, 2020 23:44
করোনার প্রভাব: শিডিউল থাকলেও পেছালো বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন
স্বপ্না চক্রবর্তী, ঢাকা

করোনার প্রভাব: শিডিউল থাকলেও পেছালো বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন

ফাইল ছবি

দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলোতে কর্মরত বেশিরভাগ শ্রমিকই চীনের। সম্প্রতি দেশটিতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রায় সবকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। পদ্মা সেতুর পরেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। সবচেয়ে বড় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা এবং বড়পুকুরিয়ার কয়লা খনিতে জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। শুধু পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রেই কর্মরত আছে প্রায় ৩ হাজার চীনা নাগরিক। এর মধ্যে দেশে আছে মাত্র ১ হাজার ২৮৫ জন শ্রমিক। ফলে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পায়রার ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে বিশেষ সতকর্তা জারি করা হয়েছে। এই দুই স্থাপনায়ই অনেক চীনা নাগরিক কর্মরত। এতে বিরূপ প্রভাব পড়া শুরু করেছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে। নির্দিষ্ট সময়ে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। 

বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উৎপাদনের শুরুতে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার কথা চীনা প্রকৌশলী-কর্মীদের। যারা এখন আছে তাদের দিয়ে সম্ভব কি না বা বিকল্প কোনো উপায় বের করা যায় কি না তা ভাবা হচ্ছে। ধাপে ধাপে বাংলাদেশি প্রকৌশলী-কর্মীদের যুক্ত হওয়ার কথা। হঠাৎ বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা এই কেন্দ্র পরিচালনা করতে পারবেন না। এখন যারা আছেন তাদের দিয়ে কেন্দ্রটি চালু করা যেতে পারে কিন্তু কতদিন তা চালিয়ে নেয়া যাতে তা অনিশ্চিত।

এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কর্মরত পাঁচজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখানে প্রায় ৩০০ জন চীনা নাগরিক কর্মরত আছে। একই সাথে পদ্মাসেতুর কাজও নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

করোনা ভাইরাস উদ্বেগে পদ্মা সেতুর চীনা শ্রমিকদের জন্য স্থিতি অবস্থা জারি করেছে সেতু বিভাগ। অর্থাৎ কোনও শ্রমিক বাংলাদেশ ছাড়তে পারবে না আবার যারা চীনে রয়েছেন তাদেরও আপাতত ফিরতে মানা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পে বিপুল সংখ্যক চীনা শ্রমিক কর্মরত থাকায় একই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 

জানা গেছে, করোনা ভাইরাস চীনে ছড়িয়ে পড়ায় সচেতনতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে কর্মরত চীনা শ্রমিকদের এবং তাদের সঙ্গে কাজ করা বাংলাদেশি শ্রমিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চীনা নববর্ষের ছুটি উপলক্ষে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে কর্মরত প্রচুর চীনা শ্রমিক ও কর্মকর্তা নিজেদের দেশে ফিরে গেছেন। 

চলতি মাসের প্রথমার্ধে তাদের ছুটি শেষ হলেও করোনা প্রতিরোধে তাদের কাউকে দেশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে করোনায় জ্বালানি খাতে খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে নি বলে দাবি করেছেন মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা নির্মাণ করছেন প্রায় ৩ হাজার চীনা নাগরিক। নিয়মিতই তারা চীনে যাতায়াত করেন। কিন্তু নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ছুটিতে থাকা দেশটির নাগরিকদের আমরা বাংলাদেশে আর প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। আর যারা এখানে রয়েছেন তাদের সম্পর্কে অবলম্বন করছি সর্বোচ্চ সতকর্তা। তাই এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলে আমি মনে করি। খুব শিগগীরই পায়রার ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জানা যায়, শুধু পায়রা নয় দেশের আরও কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং পরিচালনায় চীনা শ্রমিকের সংখ্যা কম নয়। শুধু কেন্দ্র নির্মাণই নয় বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি এবং সঞ্চালন কোম্পানিতে অনেক চীনা নাগরিক কাজ করছেন। এছাড়াও দেশের জ্বালানিখাতে বড়পুকুরিয়ার কয়লা উত্তোলন এবং মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে কাজ করছেন চীনা নাগরিকরা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বাইরেও সরকারি-বেসরকারি আরও কিছু প্রকল্পে দেশটির শ্রমিকরা কর্মরত। 

করোনা ভাইরাস বিষয়ে সতর্ক থাকার বিষয়ে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মাওলা সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি চীনা নাগরিক কাজ করেন। আমাদের এখানে তাই সতর্কতাও বেশি নিতে হচ্ছে। নববর্ষের ছুটি থাকায় অনেক চীনা শ্রমিক চীনে থাকায় তাদের দেশে প্রবেশের বিষয়ে কড়াকড়ি করা হয়েছে। আর যারা এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করছেন দেশি-বিদেশি সবার ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে বক্সে করে আমরা মুখের মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাচ্ছি। পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আলাদা করে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।