logo
আপডেট : 12 February, 2020 23:48
আশা-নিরাশায় দুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া

আশা-নিরাশায় দুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

আশা-নিরাশায় দুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। কেউ কেউ বলছেন, এ বাজার নেপালের দখলে। আবার কেউ কেউ বলছেন, বাজার চলে যাচ্ছে পাকিস্তানের দখলে। কোন দিকে মোড় নিচ্ছে বাজারটি কেউ বলতে পারছেননা। তবে অনেকেই চলতি মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি উভয় দেশের কারিগরি কমিটির বৈঠকের দিকে নজর দিচ্ছেন।

এ দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতি মালয়েশিয়া সফর শেষে  পাকিস্তানের সাথে নতুন চুক্তি। পাকিস্তান থেকে বছরে ১,৫০,০০০ শ্রমিক আনবে মালয়েশিয়া। মার্চ থেকে মালয়েশিয়াকে দক্ষ শ্রমিক দেয়ার আশ্বাস ইমরানখানের। এমন সংবাদ চড়াও হলে। এই পদক্ষেপকে পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রেড ইউন (এমটিইউসি)।

দেশটির ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেস (এমটিইউসি) বলছে, মালয়েশিয়া এবং পাকিস্তান এই বিষয়ে একটি চুক্তি করেছে। সেটি মানব সম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারন বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছে ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসের নেতারা
১২ ফেব্রুয়ারি এমটিইউসির সেক্রেটারি-জেনারেল জে সলোমন মালয়েশিয়ার নিউ ষ্ট্রিট টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলছিলেন, বিদেশী কর্মী নিয়োগে বর্তমান আইনী পদ্ধতি অনুসারে, মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিক আনতে চাইলে যে কোনও ব্যক্তির পক্ষে প্রথম পদক্ষেপ হ'ল অনুমোদনের জন্য মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা।

“এটাও অবাক করে দেওয়ার মতো বিষয় যে মন্ত্রিসভা অবহিত হওয়ার আগেই পাকিস্তানি কূটনীতিক এই ঘোষণা করেছিলেন। স্পষ্টতই, কোনও স্টেকহোল্ডারের সাথে পরামর্শ না করেই এটি তাদের একটি নিজস্ব সিদ্ধান্ত। ”মালয়েশিয়ায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার আমনা বালুচ গত রবিবার বলেছিলেন যে অন্যান্য দেশ থেকে স্বল্প দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করার পর মালয়েশিয়ায় নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগের জন্য পাকিস্তানের সাথে আলোচনা করছে।

পাকিস্তানের ‘দ্য নেশন’ পরিচালিত একটি প্রতিবেদনে তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যদিও নিয়োগের প্রক্রিয়াটি আনুষ্ঠানিক করার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

“পাকিস্তানের কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদন উদ্বেগজনক। যদি এটি সত্য হয় তবে এটি মালয়েশিয়ায় স্বল্প বেতনের চাকরী নিয়ে বিদেশী অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার সমস্যাগুলিকে সরাসরি আরও খারাপ করবে, ” বলে মালয়েশিয়ার বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সলোমন বলেছিলেন, বিশেষত নিরাপত্তা প্রহরীর মতো সংবেদনশীল চাকরির জন্য পাকিস্তানিদের আগমন সাধারণ মালয়েশিয়ানদের জন্যও উদ্বেগজনক এবং কম দক্ষ বিদেশিদের পক্ষে এই জাতীয় চাকরি ক্রমশ বাড়িয়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, অনেকেরই আবার এই ধরনের কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।

“মালয়েশিয়ায় বিদেশী কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প দক্ষ অভিবাসী শ্রমিকের উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা মোকাবেলায় সঠিক নীতিমালার অভাবে কম মজুরি এবং শোচনীয় জীবনযাপনের শিকার হয়েছে।

“বারবার এই শ্রমিকদের অসাধু নিয়োগকর্তা এবং এমন একটি সরকার কর্তৃক শোষণ করা হয়েছে যারা তাদের দুর্দশার বিষয়ে নির্বিকার ছিলো।

"বিদেশী অভিবাসীদের আর্থ-সামাজিক প্রভাব মালয়েশিয়ার জনগণকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে এবং ২০১৮ সালের মে মাসে নতুন সরকার শপথ করার পরেও পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে,"  বলেছিলেন সলোমন।

তিনি আরও যোগ করেন যে কয়েক হাজার নিম্ন দক্ষ পাকিস্তানিকে  ন্যূনতম ১২০০ রিংগিত মজুরি প্রদান করা হবে এবং সরকারী ও বেসরকারী ভবন এবং ব্যাংকগুলির সুরক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করা একটি উদ্বেগজনক চিন্তাভাবনা ছিল।"যেমন এমটিইউসি মন্ত্রীর কাছে আমাদের সরকারী নেতাকর্মী এবং পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের উভয়কেই এই বিরক্তিকর প্রতিবেদনটি যাচাই করার জন্য মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানায় যাতে জনসাধারণ ও শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা যায়।

যেসব কারণে বারবার ঝুলে যাচ্ছিল শ্রমবাজারটি এবার অনেকটা একমত হয়েছে উভয় দেশ। বলছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা। এবারের বৈঠকে কর্মী নেয়ার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার চাওয়াকে গুরুত্ব দেয়া হবে। এই বৈঠকেই সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন তারা।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলছেন, এবার অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধান হলে, দ্রুতই চূড়ান্ত বৈঠকে ঢাকায় আসবেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী।

কারিগরি বৈঠকে চূড়ান্ত হতে পারে কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় এবং কতগুলো রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেছেনন, কর্মী নেবে মালয়েশিয়া, এক্ষেত্রে তারা কী চায় সেটিকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

২০১৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রম রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এরপর বাজারটি উন্মুক্ত করতে কয়েক দফা বৈঠক ও চিঠি চালাচালির পরেও বাজারটি উম্মুক্ত হয়নি। গেলে বছরের ৬ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঠিক হয় ২৪ ও ২৫ নভেম্বর ঢাকায় হবে যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠক। কিন্তু হঠাৎ বাতিল হয়ে যায় বৈঠকটি।

সম্প্রতি দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারান বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে শূন্য ব্যয়ে কর্মী নিয়োগ করতে শিগগিরই চুক্তি করা হবে। নেপালের সাথে যেভাবে চুক্তি হয়েছে ঠিক একই চুক্তি বাংলাদেশও চাচ্ছে।

তিনি বলেন, শূন্য ব্যয়ে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা বেশ খানিকটা অগ্রগতি হয়েছে এবং শিগগিরই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। কর্মী নিয়োগের সার্ভিস চার্জ, যাওয়া-আসার বিমান ভাড়া, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুরক্ষা স্ক্রিনিং এবং শুল্ক চার্জগুলি দেবে নিয়োগকর্তারা।

তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক শ্রম নির্মূল করতে এবং আমদানিকারক দেশগুলি থেকে সম্ভাব্য বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য আরেকটি শূন্য মূল্যের নিয়োগ চুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। প্রায় সমস্ত বিষয় নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এবং আমরা এটি চূড়ান্ত করার খুব কাছাকাছি এসেছি।