logo
আপডেট : 18 February, 2020 00:39
আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক শহীদ মিনার
আব্দুল আজিজ

আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক শহীদ মিনার

আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক শহীদ মিনারের ডিজাইন। ডিজাইনার: লেখক (আব্দুল আজিজ)

একটি জাতির প্রথম পরিচয় তার ভাষা। আর একটি ভাষার মধ্যমে একটি জাতির দেশ-রাষ্ট্র, গোষ্ঠী- গোত্র, ধর্ম-বর্ণ, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, দৈহিক আকৃতি-প্রকৃতি, দৈনন্দিন জীবন-যাপন ইত্যাদির পরিচয় অতি সহজেই ফুটে উঠে। যে জাতির ভাষা যত উন্নত সে জাতি তত ক্ষমতাশীল। যে জাতির লিখিত কোন ভাষা নেই বলতে গেলে সে জাতির কোন পরিচয়ই নেই। তারা ভিন জাতির সাথে ভাব আদান-প্রদান করতে পারে না। তাদের সে ভাষা নিজেদের গোত্র গোষ্টী বা জাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তারা কখনো মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে না। মূল কথা একটি ভাষার লিখিত বা সুনির্দিষ্ট প্রামাণ্য দলিল ছাড়া কোন জাতি টিকে থাকতে পারে না, পারেনি বা পারবেও না। কোন জাতিকে টিকে থাকতে হলে তার ভাষা লিখিত, সুনির্দিষ্ট এবং সার্বজনিন হওয়া উচিৎ। ভাষা আইনের এ পরিধি কবেই সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমান ভাষা আইনে যে কোন ভাষাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও মানসম্পন্ন হতে হয়। বিশ্বে যে কয়টি ভাষা টিকে আছে সবগুলোই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। অন্যথায় এ ভাষা বেশি দিন স্বমহীমায় টিকে থাকতে পারে না। ফলে ভাষার সাথে ঐ ভাষভাষি মানুষের জাতি সত্তাকেও চিরতরে হারাতে হয় এবং হচ্ছেও।

বাঙ্গালী হিসাবে আমাদেরও রয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট লিখিত সার্বজনিন ভাষা। যে ভাষার জন্যে আমরা আজ বিশ্বের দরবারে বাঙ্গালী জাতি হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। সে প্রাণের ভাষা আমার মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলতে পেরে আজ আমি এক গর্বিত বাঙ্গালী। তেমনি নিজের মাতৃভাষার মতই বিশ্বের অন্যান্য প্রতিটি ভাষার প্রতিও রয়েছে আমার সমান শ্রদ্ধা।


আমাদের বাংলা ভাষার উৎপত্তি, রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতিলাভ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ পর্যন্ত বাংলা ভাষার ইতিহাস কারও অজানা নেই। আমি সে ইতিহাস লিখে বৃথা সময় নষ্ট করতে চাই না। আমার এ লেখার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে ‘একটি আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক শহীদ মিনার’। আমার এ লেখনীতে সে অভিপ্রায়টি একটি প্রস্তাবনা আকারে আজ সচেতন মহলের কাছে আমি ব্যাক্ত করতে চাচ্ছি। পাঠক কুলও আমার এ লেখা পাঠে বিষয়টি আমলে এনে নতুন কোন পস্তাবনার ছাপ ফেলতে পারেন।

প্রথমে আসা যাক শহীদ মিনারকে নিয়ে আমার এ ধরনের চিন্তার উদ্ভব কখন থেকে? উত্তরে বলব – ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় শোক দিবসটি ১৯৯৯ সালে যে দিন থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে জাতি সংঘের সদর দপ্তর ‘ইউনেস্কো’ কতৃক স্বীকৃতি পেল সে দিন থেকে। এর পর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস এলেই এ চিন্তাটি আমার মাথার ঘুরপাক খেতে থাকে। ভাষার প্রতি পরম শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধের কারণই আমাদের শহীদ মিনারকে ঘিরে আমার সে মুক্ত চিন্তার প্রতিফলন ঘটানোর প্রয়াস যোগিয়েছে।

প্রশ্ন জাগতে পারে – আমাদের বর্তমান শহীদ মিনারটি কি আধুনিক শহীদ মিনার নয়? উত্তরে বলব – আমাদের বর্তমান শহীদ মিনারটি একটি আত্যাধুনিক আদর্শ শহীদ মিনার। এর রূপকার ও পরিকল্পনাকারি ভূয়সি প্রশংসার দাবিদার। এ বিষয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শহীদ মিনারটিও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হওয়া উচিৎ ছিল বলে আমার ব্যাক্তিগত আভিমত। যদি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি প্রতিষ্ঠা না পেত তাহলে আমাদের শহীদ মিনারকে ঘিরে এ ধারনা আমি মনে কখনো পোষণ করতাম না। আমাদের বর্তমান শহীদ মিনারটিই সঠিক ও যথার্ত ছিল।

এবার আসা যাক– আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক শহীদ মিনার কেমন হবে? হ্যাঁ এটি হবে আমাদের বর্তমান শহীদ মিনারের মতই। শুধু একটু নতুন সংযোজন, নতুন বর্ণিলায়ন এতটুকোই। এটিকে ভেঙে নতুন করে গড়ার কোন দরকারই নেই। নিম্নে প্রদত্ত আমার নিজের নক্সা করা ‘আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক শহীদ মিনার’র চিত্রগুলি থেকে স্পষ্ট ধারনা ফুটে উঠবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক শহীদ মিনারের বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
১। সবুজ স্তম্ভ ও লাল সূর্য বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং পতাকার মাথা নত আবস্থায় উপরের সবুজ অংশ ভাষা শহীদদের প্রতি সমগ্র দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রতীক। ২। সাদা স্তম্ভ স্বর্গীয় প্রশান্তি বা শান্তির প্রতীক। ৩। হলুদাভ হৃদয়ে ধারণকৃত অ, আ, ক, খ সোনালী বর্ণগুলো স্বর্গীয় প্রশান্তি থেকে ভাষা শহীদদরা অমরত্বের জ্যোতি ছড়াছে। ৪।সবুজাভ হৃদয়ে ‘মা’ শব্দটি মাতৃতূল্য সবুজ বাংলা যা বাংলাদেশকেই হৃদয়ে ধারণ করে আছে। ৫। সূর্যের ৭টি রশ্মি বিশ্বের ৭টি মহাদেশের চিহ্ন স্বরূপ।

১৯৯৯ সালের পর থেকে প্রতি বছরই আমরা ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছি। একই সাথে সারা বিশ্বও আমাদের সাথে পালন করছে। তাই দেশে-বিদেশে আমাদের শহীদ মিনারটি একটি মডেল হিসাবে গ্রহণযোগ্যতা পাক, সেটাই আমরা সবাই চাই। তাই সূর্যের সাথে ৭টি রশ্মি সংযোজনের মাধ্যমে শহীদ মিনারটি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হতে পারে বলে আমার ধারনা। এ ৭ টি রশ্মি দ্বারা শুধু ৭টি মহাদেশকেই বুঝাবে না, ৭টি মহাসাগরকেও বুঝাবে। এছাড়া সূর্যে ৭টি বর্ণের রশ্মি ব্যবহার করলে সূর্যের ৭টি রঙকেও বুঝাবে। তবে রশ্মিগুলো শুধু লালও হতে পারে। রশ্মিগুলোর বর্ণের তারতম্য এর বৈশিষ্টের কোন পরিবর্তন ঘটাবে না। এ থেকে কোমলমতি শিশুরাও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। আর যেহেতু লাল সূর্য রাখতেই হবে; সেহেতু মাঝের স্তম্ভগুলিকে সবুজ রঙ করে বাংলাদেশের পতাকা বানিয়ে ফেললে কোন ক্ষতি হবে না। এ ক্ষেত্রে শুধু রঙের দরকার। যেহেতু মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ শহীদ মিনার। তাই পতাকার নোয়ানো মাথায় শহীদদের নামে সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে লিখে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এছাড়া সবুজের বুকে লাল সূর্য দেখে বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে আরও সহজেই চিনতে পারবে। সামনে হৃদয় বৃত্তে রাখা বর্ণগুলির মাধ্যমে এর শ্রী আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠার যুগপূর্তি ছাড়িয়ে গেলেও এ বিষয়ে সরকারি বেসরকারি বা সংশ্লিষ্ট মহলের কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। শেষমেষ অপেক্ষার তর সইতে না পেরে আমার এ লেখাটি গণসচেতনতা সৃষ্টি কল্পে এবং সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টিগোচরের জন্যে গণমাধ্যমে আমার চিন্তার পরিস্ফুটন ঘটালাম মাত্র। আশা করি আমার এ মুক্ত চিন্তার সাথে অগণিত দেশপ্রেমিক সচেতন পাঠক মহলও ভেবে দেখার সুযোগ পাবেন।


 

লেখক: কবি ও ছড়াকার। (নিউ ইয়র্ক প্রবাসী)