গত এক সপ্তাহ ধরে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে চলছে নাটকীয়তা। কবে শেষ হবে এ নাটকীয়তা কেউ বলতে পারছেন না। তবে দেশের সাধারণ জনগণ তাকিয়ে রয়েছেন ২ মার্চ অনুষ্ঠেয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দিকে। সে অধিবেশনেই ঠিক হবে কে হচ্ছেন দেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ আবারও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নিজের প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মাহাথির মোহাম্মদ দাবি করেছেন, তার পক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এমপি ও পাকাতান হারাপান জোটের সমর্থন রয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করেন মাহাথির মোহাম্মদ। তবে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ ও মন্ত্রিসভা গঠনের আগ পর্যন্ত তাকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা জারি করেছেন দেশটির রাজা।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মাহাথির এক ঘোষণায় জানান, যথেষ্ট সমর্থন পেলে আবারও প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরতে রাজি আছেন তিনি।
মাহাথিরের এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান তার জোটসঙ্গী আনোয়ার ইব্রাহিম। এর আগে জোটের পক্ষ থেকে ইব্রাহিমকেই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয়। শুক্রবার পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ আরিফ ইউসুফও মাহাথিরের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। আর মাহাথিরের নিজের দল বারসাতু চেয়ারম্যান মুহিউদ্দিন ইয়াসিনকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এতে মালয়েশিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন তা নিয়ে ধুম্রজাল দেখা দিয়েছে।
শনিবার এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনকে সমর্থনের ঘোষণায় আমি স্বাক্ষর করিনি।
মাহাথির আরও বলেন, আমি মনে করি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য পার্লামেন্টে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপির সমর্থন আমার পক্ষে রয়েছে। আমি উমনো ক্লেপটোক্র্যাটসের সঙ্গে কাজ করব না।
মাহাথিরের এই বক্তব্য শুক্রবার দেয়া তার দল পার্টি প্রিবুমি বারসাতুর একেবারে উল্টো। দলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দলীয় সভাপতি মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের প্রতি সর্বসম্মতি রয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগেও বারবার বলেছি দুর্নীতিবাজ কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সহযোগিতার পক্ষে আমি নেই। যে ক্লেপটোক্র্যাটিক প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পাকাতান হারাপান জোট কঠোর পরিশ্রম করছে সেই প্রশাসনের কারও সঙ্গে কাজ করব না।
তিনি আরও বলেন, নীতির বিষয় হিসেবে গতকাল (শুক্রবার) বারসাতু দলের এমপিদের আমি তা জানিয়েছি। কাউকে সমর্থন জানিয়ে কোনো ঘোষণায় আমি স্বাক্ষর করিনি। এমনকি আমি বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই বের হয়ে যাই। যাতে দলের এমপিরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে স্বাধীনভাবে বিতর্ক করতে পারেন। শনিবার সকালে পাকাতান হারাপান জোটের নেতাদের সঙ্গে আমি বৈঠক করেছি। আমি আত্মবিশ্বাসী যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন আমার পক্ষে রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার জন্য আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই সিদ্ধান্তটি রাজা আগংকে জানিয়ে দেয়া হবে।
এদিকে মুহিউদ্দিনসহ ছয়টি দলের নেতারা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়ে আলোচনার জন্য মালয়েশিয়ার রাজার সঙ্গে স্থানীয় সময় শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় বৈঠকে বসেছেন। বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।