ঘর পেয়ে খুশি রামপাল উপজেলার অসহায় গৃহহীন পরিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ‘যার জমি আছে ঘর নাই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের ২২ টি অসহায় পরিবার এসব ঘর পেয়েছেন।
শনিবার (৭ মার্চ) সকালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এর উপস্থিতিতে রামপাল উপজেলা অডিটোরিয়ামে ২২ টি ঘরের সুবিধাভোগী এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অংশগ্রহনে গনশুনানি আকারে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ ব্যাপারে রামপাল উপজেলা চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান,আমরা উপকারভোগীদের কাছে অনৈতিক আর্থিক লেনদেন এর বিষয় সহ সকল বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তারা বলেছেন, আমরা কারো সাথে উৎকোচ বা আর্থিক লেনদেন করিনি। আমাদের ঘরগুলো খুব ভালো হয়েছে। পরিবহন বাবদ কোনো টাকা দিয়েছেন কিনা উল্লেখ করে আমরা জানতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ওই পত্রিকায় যেসব ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা তা সম্পূর্ন অস্বীকার করেছেন। আর্থিক উৎকোচ গ্রহন করে তা ফেরত দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তারপরও আমরা বলেছি কেউ যদি আর্থিক উৎকোচ গ্রহন করে থাকে তা আমাদের জানালে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেবো। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ও উপজেলার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে কিছু সংখ্যক লোক উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে রামপালের হুড়কা ইউনিয়নের চাড়াখালী গ্রামের আজহার আলী শেখ বলেন, ঘূর্নিঝড় বুলবুলের সময় গাছ পড়ে পিলারের কিছু অংশ ফেটে গিয়েছিল। তিনি ওই গাছ সাংবাদিকদের দেখিয়ে বলেন,আমাদের ঘরের কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি।
মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের কবীর রাঢ়ী বলেন,প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরগুলো আমরা যথাসময়ের মধ্যেই পেয়েছি। আমাদের চেয়ারম্যান নাজমুল কবীর ঝিলাম সরকারী টাকার পাশাপাশি আমার ঘর সহ আরও ৪টি ঘরে তার ব্যাক্তিগত টাকায় কাঠের বদলে লোহার এ্যাগেংল ও উন্নত দরজা জানালা দিয়েছে। তিনি নিজের পকেট থেকে প্রতিটি ঘরে অন্তত ৫০/৬০ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত খরচ করেছেন।
মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের ছোট সন্নাসী গ্রামের রমেশ মন্ডল বাড়িতে না থাকায় তার স্ত্রী জানান, ইট বালি বাবদ আমরা কাউকে ১৫০০ টাকা দেয়নি। আমার ঘরে নিন্মমানের কাঠ ব্যাবহার করা হয়েছে এমন কথা আমি কাউকে বলিনাই। আমাকে থাকার ব্যাবস্থা করে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।
গৌরম্ভা ইউনিয়ন এর আকরাম শেখ এবং তার স্ত্রী আফরোজা বেগম বলেন,আমাদের ঘরের কোথাও কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি এখনও দেখা যায়নি। আমি কাউকে কোনো টাকা পয়সা দেয়নি।
গৌরম্ভা ইউনিয়নের আদাঘাট গ্রামের মোঃ জাবের শেখ বলেন,আমাদের প্রোজেক্ট চেয়ারম্যান ঘরের সবকিছু ঠিকভাবে সম্পন্ন করেছেন। আমার এখানে কাজ করার পরও অনেক ইট উদ্বৃত্ত থেকে গেছে। আমি কাউকে ঘরের জন্য কোনো ধরনের টাকা দেয়নি। আপনার দেয়া টাকা ফেরত পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকা দিলে তো ফেরত পাবো।
এছাড়া একাধিক উপকারভোগী ঘরমালিক জানান,তাদের ঘর পেতে কোনো টাকা পয়সা খরচ করা লাগেনি এবং ঘরে বিগত এক বছরে নির্মানজনিত ত্রুটির কোনো আভাস দেখা যায়নি। আমরা ঘর পেয়ে সুখে আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারী বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ায় যে এখানে ঘরের কাজে নানা অনিয়ম হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকজন উপকারভোগীর নামও উল্লেখ করা হয়। ঘটনা উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। এরপরপরই সাংবাদিকরা ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধানে নামে। তারা বিভিন্ন ইউনিয়নের এসব বাড়িতে গিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান করে। দেখা গেছে, এসব ঘরের মেঝে পাকা, সামনে খোলা বারান্দা, আরসিসি পিলার, উন্নত টিনের ছাউনিতে ঘেরা। এসব ঘরের কোথাও চোখে পড়া ফাটলের অস্তিত্ব নেই।