অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে জাতি। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাত ৮টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজির মধ্য দিয়ে শুরু হলো মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান ‘মুক্তির মহানায়ক’।
আলোর ঝলকানিতে স্বাগত জানানো হলো বাঙালির সর্বকালের শ্রেষ্ট সন্তান শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মক্ষণকে। ৬ মিনিটের সেই বর্ণিল আলো ছেয়ে গেল পুরো দেশের আকাশ। আর এর মাধ্যমেই শুরু হলো বছরব্যাপী কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিকতা।
মহানায়কের জন্মক্ষণে বর্ণিল আকাশ
আতশবাজি শেষে দেশের সব টেলিভিশনে শুরু হয় একযোগে ধারণকৃত দুইঘণ্টা ব্যাপী অনুষ্ঠান ‘মুক্তির মহানায়ক’। এ পর্ব শুরু হয় শিশুদের জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে। শতকণ্ঠে গেয়ে ওঠে শিশুরা ‘ধন্য মুজিব ধন্য, বাংলা মায়ের মুক্তি এলো এমন ছেলের জন্য; হাজার নেতার ভিড়ের মাঝে, কণ্ঠে তোমার বজ্র বাজে’।
এরপর জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাবার স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমার দেওয়া ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না। সত্যকে মিথ্যায় ঢেকে রাখা যায় না। তোমার কাছে আমাদের অঙ্গীকার তোমার দেখা স্বপ্ন আমরা পূরণ করব। তুমি আজ টুঙ্গিপাড়ায় ঘুমিয়ে আছ। সেখানেই তুমি ঘুমিয়ে থাকো, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরাই গড়ব। তোমার দেওয়া পতাকা বেঁচে থাকবে চিরদিন।’
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নমগেয়েল ওয়াংচুক, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, জাতিসংঘের মহাসচিব এন্টিনিও গুতেরাস এবং ওআইসি’র মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওথাইমিন-সহ বেশ কয়েকজন বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষী ভিডিওবার্তা পাঠিয়ে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
যন্ত্রসংগীতের সুরের মুর্ছনা
যন্ত্রসংগীতের সুরে মুর্ছনা শেষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ রাখেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা। পিতাকে নিয়ে শেখ রেহানার লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন শেখ হাসিনা। এরপর শুরু হয় শিল্পকলা একাডেমির একদল নৃত্য শিল্পীর পরিবেশনা। নৃত্যের সঙ্গে ফুটে ওঠে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির একঝাঁক তরুণ-শিল্পীর পরিবেশনায় ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সকল প্রেক্ষাপট ও ঘটনার সংক্ষিপ্ত ধারা বর্ণনা অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরা হয়। ৪০ মিনিটের মাঝে মাঝে দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের একক আবৃত্তির মাধ্যমে পরিবেশিত হয় গোটা পর্ব।
শিল্পকলা একাডেমির একঝাঁক তরুণ-শিল্পীর পরিবেশনায় নৃত্য অনুষ্ঠান
এরপরই আসে আর্কষণীয় পর্ব বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নৃত্য পরিচালক আকরাম খানের পরিচালনায় ছিল থিয়েট্রিক্যাল পারফরমেন্স। এই অংশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফাদার: ভিশন অব দ্য ফ্লোটিং ওয়ার্ল্ড’। চমৎকার এ নৃত্য পরিকল্পনায় সংগীতায়োজন করেছেন ভিনসেনজো লামাগনা।
নৃত্য পরিচালক আকরাম খানের থিয়েট্রিক্যাল পারফরমেন্স
মঞ্চে থিয়েট্রিক্যাল পারফরমেন্সের মূল আসরে মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, ৭ মার্চের ভাষণ, দেশাত্মবোধক গানের আবহে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরেন। এতে অংশ নেন আকরামের সঙ্গে অংশ নেন ৩০ জনের একটি দল।
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় পিক্সেল ম্যাপিং, লেজার শো ও আতশবাজি আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে সংসদ ভবন প্রাঙ্গণ। আলোর অবয়বে বাংলায় ফিরে আসেন বাঙালির মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।