করোনাভাইরাস বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে মহামারী ঘোষণা করেছে। চলছে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা। চীনের হুবেই থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশে।
স্থবির হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। চীনের পর ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ফ্রান্সে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি তীব্র। ইতালিজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। সবাই কোয়ারেন্টিনে, অর্থাৎ দেখা-সাক্ষাতে সীমাবদ্ধতা। ভ্রমণ ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশেও প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। সর্বত্র সতর্কতা। করোনা প্রতিরোধে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চলাফেরায়ও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। রাস্তায় লোক চলাচল কমে গেছে। স্থগিত করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সম্মেলন ও নানা আচার-অনুষ্ঠান। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
করোনাভাইরাসের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকায় মানুষের মনে আতঙ্ক যেমন বেড়েছে, তেমনি এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কিছু ব্যবসায়ী বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি একটি বড় অনৈতিক কাজ। মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়লেও পাপ কাজ থেকে বিরত হয়ে স্রষ্টার আনুগত্য বৃদ্ধি এবং সামাজিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ভালো কাজের সংখ্যা তেমন চোখে পড়ে না। বরং বেড়ে চলেছে বেপরোয়া আচরণ ও পাপ কাজের সংখ্যা।
দেশে করোনা সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই নিরাপদ থাকার জন্য রাজধানী ছেড়ে মফস্বলের দিকে যাওয়ার কথা ভাবছেন। এ প্রসঙ্গে নবী করিমের (সা.) একটি হাদিস আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ‘যখন কোনো এলাকায় মহামারী (সংক্রামক ব্যাধি) ছড়িয়ে পড়ে তখন যদি তোমরা সেখানে থাক, তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর যদি তোমরা বাইরে থাক তাহলে তোমরা আক্রান্ত এলাকায় যাবে না’ (বুখারি ও মুসলিম)।
করোনার মতো প্রাণঘাতী রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব কর্মসূচি নেয়া হয়েছে এবং বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো সবাইকে মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরামর্শ- সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় ধরে হাত ধুতে হবে। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করা যাবে না। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় বাহু, টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে। অসুস্থ পশু-পাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে একটি সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে : খাবারের আগে ও পরে হাঁচি-কাশির পর বা হাত ময়লা হলে সাবান পানি দিয়ে ধুতে হবে। গণপরিবহন বা জনবহুল স্থানে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। জনসম্মুখে হাঁচি বা কাশিতে টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে অথবা হাত দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে।
জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ বা নাকে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ডিম, মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তির খুব কাছে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় সতর্কতার পাশাপাশি এ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতে হবে : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি, ওয়া মিন সায়্যিইল আসক্বাম (বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট ধবল, কুষ্ঠ ও উন্মাদনাসহ সব ধরনের কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে পানাহ চাই) [আবু দাউদ]।
রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য আরেকটি দোয়া : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি (অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার কাছে খারাপ চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগবালাই থেকে আশ্রয় চাই) [তিরমিজি]।
কেউ কেউ বলছেন, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব। আবার কেউ বলছেন, এটি মানবজাতির জন্য একটি সতর্কবার্তা, মুমিনদের জন্য ইমান বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ আর যারা সৃষ্টিকর্তার নির্দেশকে উপেক্ষা করে চলেছেন, তাদের সঠিক পথে ফিরে আসার সময়। আল্লাহর গজব থেকে বাঁচার জন্য তার দেয়া ফরজ ইবাদতগুলো যথাযথ পালনের পাশাপাশি সব ধরনের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। হয়তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর মাধ্যমে আমাদের যন্ত্রণাদায়ক রোগ-ব্যাধি ও বালা মুসিবত থেকে রক্ষা করবেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে এ ভয়াবহ ভাইরাস থেকে হেফাজত করুন।
লেখক : ব্যাংকার।