করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোতে অবস্থানরত প্রবাসীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে সরকার। বিদেশস্থ প্রবাসী কর্মীদের খাদ্য, আবাস , ঔষধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকার এ অর্থ সহায়তা প্রদান করবে। শনিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ঠেকাতে লকডাউন অব্যাহত রয়েছে। প্রবাসীদের কাজ বন্ধ। নিজ গৃহে বসবাস করতে হচ্ছে। অনেকের নিয়োগকর্তা বেতন, খাদ্য বাসস্থান, মেডিসিন ইত্যাদি প্রদান করছে। কিন্তু যাদের নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তা নেই, এখানে সেখানে কাজ করছে তাদের আয় নেই, করোনা সংক্রমিত হবার ভয়ে বাইরে যেতে পারছেন না। তারা মূলত দিন যতই যাচ্ছে তাদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে। তারা না পারছে দেশে যেতে, না পারছে আয় করতে। সরকারের এ ঘোষণা তাদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্থি ফিরে এসেছে। তবে সরকারের পাশাপাশি কমিউনিটির হিতৈষী ব্যাক্তিরা এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন প্রবাসীরা । মালয়েশিয়া অবস্থানরত প্রবাসীদের কত টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে মন্ত্রণালয় বলছে দূতাবাস চাহিদা দেওয়ার পর নির্ধারন হবে বলে জানা গেছে।
গত বুধবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার তথ্যানুযায়ী প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোতে থাকা লেবার উইংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিনই সংশ্লিষ্ট দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও প্রবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্যগত অবস্থার প্রতিবেদন আসছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রবাসী কর্মীদের প্রধান গন্তব্য দেশের মধ্যে সৌদি আরবে ১ জন, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩ জন বাংলাদেশী আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, ইরাক, গ্রিস, লেবানন, জাপান, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, হংকং ও বাহরাইনে এখ নপর্যন্ত কোনো প্রবাসী বাংলাদেশীর আক্রান্তের খবর পায়নি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবাসীদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা এই মন্ত্রণালয় বলছে, করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার প্রেক্ষিতে সবচাইতে অসুবিধায় আছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা। তাদের ভালমন্দ দেখভাল করে থাকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবাসীদের জন্য ১২টি কার্যক্রম বা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে গত বুধবার করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির সভায় উল্লেখ করা হয়।
তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো- প্রবাসী ও বিদেশগামী কর্মীদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায়র বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জিসিসিভুক্ত (মধ্যপ্রাচ্যের) দেশগুলোর দূতালয় প্রধানদের সাথে বৈঠক করে ভিসার মেয়াদ বর্ধিত করার আশ্বাস দেন; সকল শ্রম কল্যাণ উইংকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির বিষয়ে নিয়মিত আপডেট প্রদান এবং সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের চাহিদা অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগীতা প্রদানের নির্দেশ; অতিরিক্ত সচিবকে (মিশন ও কল্যাণ) করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কার্যক্রমের ফোকাল পারসন মনোনয়ন এবং তার নেতৃত্বে বিভিন্ন অংশীজনের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন। মিশন ও কল্যাণ অনুবিভাগ কর্র্তৃক সংশ্লিস্ট সকল অংশীজনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, বায়রা ও এনজিওসমূহের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রচারণা এবং শ্রম কল্যাণ উইং, টিটিসি,আইএমটি, সাপোর্ট সেন্টারকে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ; করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গন্তব্য দেশে বাংলাদেশী কর্মী এবং দেশে ফেরত আসা কর্মীদের সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় কীভাবে কী ধরনের সহযোগীতা প্রদান করা যায় এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের (প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ সংস্থা) সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং মিশনের চাহিদা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সব রকম সহযোগিতার জন্য আর্থিক বরাদ্ধ করবে। এছাড়া প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ গত ২৩ মার্চ আইওএম-এর মিশন চিফের নেতৃত্বে একটি টিমের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গন্তব্য দেশে বাংলাদেশী কর্মীদের সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ সহযোগিতার প্রদানের বিষয়ে আইওএম প্রস্তুত আছে বলে মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন আইওএম-এর বাংলাদেশ মিশন চিফ।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদেশস্থ মিশনগুলো করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবেলা বিষয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থারত বাংলাদেশীদের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও গ্লাভস বিতরণ করছে। এছাড়া মালয়েশিয়া কাতার, ইরাক, হংকংসহ বিভিন্ন দূতাবাসে এ বিষয়ে হটলাইনসেবা চালু করা হয়েছে বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ধৈর্য্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।’ তিনি বলেন, একক ভাবে সম্ভব নয় সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর নেই। এখানকার পরিস্থিতি। ‘দূতাবাস থকে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা দেয়া হচ্ছে। দূতাবাস কর্মকর্তারা পালাক্রমে ডিউটি দিচ্ছেন। আমরা রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে অবস্থানরত সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। যে সমস্যা নিয়ে ফোন করছেন তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, আমি নিজেই প্রতিদিন শত শত প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের খোজঁ খবর নিচ্ছি।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশজুড়ে ভাইরাসে দুই হাজার ৩২০ জন আক্রান্ত হয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩২০ জন।
এদিকে করোনায় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-স্বাস্থ্য সেবায় গৃহিত ব্যাবস্থা সম্পর্কে জাতিকে অবহিত করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন শনিবার এক ভাষণে বলেছেন, মালয়েশিয়া বর্তমানে অদৃশ্য শক্তির সাথে যুদ্ধ করছে। বর্তমান পরিস্থিতি ইতিহাসে নজিরবিহীন। তিনি বর্তমান সংকটময় মুহুর্তে সরকারকে সহযোগিতা করার আহবান জানান। তার সরকার ইতোমধ্যে দেশীয় ও বিদেশি কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য নিয়োগকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে ইমিগ্রেশন বলেছে, এ জরুরি অবস্থায় যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হবে তারা এই অবস্থার অবসান হলে ভিসা রিনিউ করে নিতে পারবেন। অপরদিকে মহিউদ্দিন সরকার বিদেশি সকল বৈধ ও অবৈধদের জন্য করোনা চিকিৎসা ফ্রি করেছেন। অনুরোধ করেছেন চুপ না থেকে চিকিৎসা নিতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মোকাবেলায় মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সকল গৃহীত পদক্ষেপ প্রবাসীদের মেনে চলতে, যাতে মালয়েশিয়া অনুভব করে বাংলাদেশি প্রবাসীরা তাদের সহযোগিতা করছে।