logo
আপডেট : 31 March, 2020 22:34
এবার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান হবে না
স্বপ্না চক্রবর্তী, ঢাকা

এবার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান হবে না

বিশ্বজুড়ে করোনা আতংকে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। চীন থেকে উৎপত্তি হয়ে ভাইরাসটি তার দৌরাত্ম্য ছাড়িয়েছে ২শ টির বেশি দেশে। বিশ্বজুড়ে বাতিল হচ্ছে একের পর এক উদযাপন। ফ্যাশন শো থেকে অপেরা হাউজ, মেলা বা অন্যান্য সাংস্কৃতিক আয়োজন এমনকি পিছিয়েছে টোকিও অলিম্পিকও। সেই ধারাবাহিকতায় দেশের অন্যতম বড় উৎসব পহেলা বৈশাখেরও সব আয়োজন বাতিল করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। করোনা সতর্কতায় এ বছর আয়োজিত হবে না মঙ্গল শোভাযাত্রা বা ছায়ানটের অনুষ্ঠান। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন, লোক সমাগম না করে প্রয়োজনে ডিজিটালি পহেলা বৈশাখ উদযাপন করার। এতে করে বাংলার এত বছরের ঐতিহ্য আয়োজন এ বছরই প্রথমভাবে অনাড়ম্বর ভাবে উদযাপিত হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) গণভবনে এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলা নববর্ষ সব সময় আমরা খুব উৎসাহ ভরে উদযাপন করে থাকি। এবার যেহেতু আমরা সব অনুষ্ঠানই বাদ দিয়েছি তাই নববর্ষের অনুষ্ঠানও করা যাবে। তিনি বলেন, বিশাল জনসমাগম করে সারা বাংলাদেশে উৎসব সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। এটা আমার বিশেষ অনুরোধ। কষ্ট বেশি লাগছে জানি। কারণ অনেক সংগ্রাম ও বাধা অতিক্রম করে আমরাই নববর্ষের উৎসব শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেটা আমাকে বন্ধ রাখতে হচ্ছে মানুষের কল্যাণের দিকে তাকিয়ে। তবে এখন তো ডিজিটাল যুগ। ডিজিটাল পদ্ধতিতে গান-বাজনা, উৎসব করতে পারেন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমাদের স্কুলের ক্লাসগুলো শুরু করে দিয়েছি। এই আজ (গতকাল) যেমন ভিডিও কনফারেন্স করছি। এরকমভাবে উদযাপন করতেই পারেন।

এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন কিংবা চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রধান দুই আয়োজন বাতিল করা হচ্ছে। যদিও এর আগে বিকল্প ব্যবস্থায় আয়োজন দু'টি করার কথা জানানো হয়েছিল আয়োজকদের পক্ষ থেকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাও হচ্ছে না। ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন সাংবাদিকদের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, আমরা আয়োজন যতোই সীমিত করি না কেন, সেখানে মানুষের সমাগম ঘটবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষকে আসতে বলা বা মহড়া করতে আসতে বলাটাও সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতিটা এমন হয়ে গেছে, এটা আসলে সম্ভব হচ্ছে না এ বছর। পুরো আয়োজনটি রেকর্ড করে পহেলা বৈশাখের সকালে টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করার বিকল্প কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটিও এখন সম্ভব নয়। কেননা সেটির জন্যও জনসমাগম তৈরি হয়। আগে আমাদের নিজেদের নিয়ে ভাবতে হবে। ছায়ানট শুধু গান শেখার প্রতিষ্ঠানতো নয়, বরং যেকোনো ক্রান্তিকালে এটি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং এখনও গরিব ও দুস্থদের সাহায্যের মাধ্যমে ছায়ানট সবার পাশে থাকতে চায়।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে না সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটও। সংগঠনটি প্রতিবছর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বিষয়ে জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, কোনো অনুষ্ঠানই মানুষের জীবনের চেয়ে বড় না। মানুষকে বাঁচাতে আমরা যেকোনো উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত। তাই আমরা সঙ্গনিরোধসহ করোনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে পহেলা বৈশাখের কোনো আয়োজন এ বছর পালন করবো না। 

এ চিত্র শুধু বাংলাদেশে নয় করোনা আতংকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানও পিছিয়ে নেওয়া হচ্ছে বা বাতিল করা হচ্ছে। মে মাসে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মর্যাদাপূর্ণ ভেনিস আর্কিটেকচার বিয়েনালের আয়োজনটি তিনমাস পিছিয়ে আগস্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২৯ আগস্ট থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এটি। মার্চের ১০ থেকে ১২ তারিখ লন্ডনে বইমেলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্মীদের নিরাপত্তার খাতিরে বেশ কয়েকটি বড় প্রকাশক মেলায় অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে মেলা বাতিল ঘোষণা করা হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে সঙ্গীত বিষয়ে ইউরোপের সবচেয়ে বড় মেলা ‘ম্যজিকমেসে ফ্রাঙ্কফুর্ট’ও স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ২ থেকে ৪ এপ্রিল এই মেলা হওয়ার কথা ছিল। এবার মেলার ৪০তম বার্ষিকী উদযাপনের পরিকল্পনা ছিল। করোনার কারণে বাতিল করা হয়েছে লাইপসিশ বইমেলাও। জার্মানির দ্বিতীয় বৃহৎ বইমেলাটি আগামী ১২ থেকে ১৫ মার্চ হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া, ভ্রমণ বিষয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেলা আইটিবি ট্রাভেল ট্রেড শো (বার্লিন) আয়োজনও শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছেন আয়োজকরা। 

বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের প্যারিস ভ্রমণের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ল্যুভর মিউজিয়াম। ফ্রান্সে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর এপ্রিলে সারাবিশ্বের পেশাদার ডিজাইনার, শিল্পী ও কোম্পানি নতুন নতুন আসবাবপত্রের নকশা এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইন দেখতে যান মিলান ডিজাইন সপ্তাহে। করোনা ভাইরাসের কারণে আয়োজকরা মেলা পিছিয়ে জুনে নিয়ে গেছেন। ইটালির অভিজাত অপেরা হাউজগুলোর একটি মিলানের লা স্কালা। আগামী ৮ মার্চ পর্যন্ত যেটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর কে-পপ বয় ব্যান্ড ‘বিটিএস’ সৌল অলিম্পিক স্টেডিয়ামে তাদের চারটি কনর্সাট বাতিল করেছে। করোনার প্রভাবে প্যারিস ফ্যাশন উইকেও পড়েছে। অনেক বড় বড় ডিজাইনার অংশ নেননি। এমনকি সম্ভাষণ জানানোর ঐতিহ্যবাহী রীতিতেও পরিবর্তন দেখা গেছে।