তুহিন সানজিদ, নিউ ইয়র্ক:
ভারতীয় গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহউদ্দীন এখন বাংলাদেশের গোয়েন্দা হেফাজতে আটক। কয়েকদিন আগে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়া ক্যাপ্টেন(বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদের গ্রেফতার হবার খবর শুনেই নিজের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে এলাকা থেকে অন্যত্র গা-ঢাকা দিয়েছিলেন মোসলেহউদাদীন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর শেষ রক্ষা হয়নি। ভারতীয় গোয়েন্দাদের জালে ধরা পড়ে সে। পালিয়ে থাকা ডেরা থেকে পুনরায় অন্যত্র পালানোর সময় সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে ইতিহাসের জঘন্যতম এই খুনী।
১৯৭৫ সালেও ১৫ আগস্ট ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় খুব ভোরে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। যে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এই হত্যাকা-ের মিশনে অংশ নেয় তার মধ্যে রিসালদার মোসলেমউদ্দিন অন্যতম। গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজহাতে বুকে গুলি করে হত্যা করে এই মোসলেহউদ্দীন। এরপর দীর্ঘ বছর ধরে সে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকে। এক সময় ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙ্গার ঠাকুরনগর এলাকায় বসবাস শুরু করে। এলাকায় সে ইউনানী চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত ছিল।
ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়া ক্যাপ্টেন(বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ ৬ এপ্রিল গ্রেফতার হবার পর গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে সে রিসালদার মোসলেহ উদ্দীন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। মাজেদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মোসলেহউদ্দীনের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদও করে গোয়েন্দারা।
ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্র কলকাতার প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজারকে মোসলেহউদ্দীনের ঢাকার গোয়েন্দাদের হাতে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গোয়েন্দা সূত্রটি পত্রিকাটিকে জানিয়েছে-”লকডাউনের সময় এ দেশ থেকে মোসলেহউদ্দীনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে বলে ঢাকা বিষয়টি ভারতের গোয়েন্দাদের জানায়। ভারতীয় গোয়েন্দারা এই খুনীকে কার্যত তাড়িয়ে সীমান্তের কোনও একটি অরক্ষিত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছেন”। ”মুজিবের আর এক খুনিও কি এই বঙ্গে” শিরোনামে আনন্দবাজার পত্রিকা সোমবার এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
তবে ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র পত্রিকার কাছে স্বীকার করলেও সরকারিভাবে এখনও কোনো কিছুই বলা হয়নি। এমনকি পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। কলকাতার গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করলেও বাংলাদেশ সরকার এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছুই বলেনি। বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে।
তবে যে কোনো সময় জাতির সামনে এই সুখবর আসতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে রোববার রাতে নিউ ইয়র্ক মেইল এ ”বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে হত্যাকারী রিসালদার মোসলেমউদ্দীন ভারতে আটক” শিরনামে একটি এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্ট প্রকাশের পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। ফেসবুক পেইজে হাজার হাজার শেয়ার হতে থাকে। বাংলাদেশ ও ভারতের মিডিয়াকর্মীরা চারিদিকে খোঁজ খবর নিতে থাকেন বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য। তবে দু’দেশের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করায় অনেকেই রিপোর্ট করতে পারেনি রাতে। বিভিন্ন স্তরের অনেক সরকারি কর্মকর্তাও নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন তথ্যটি নিশ্চিত হবার জন্য। নিউ ইয়র্ক মেইলের কাছে অসংখ্য ব্যক্তি ফোন করে ঘটনার সত্যতা জানতে চেয়েছেন।