সঞ্জয় চক্রবর্ত্তীর দু’টি কবিতা
এ তুমি কেমন তুমি
-সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী
তুমি ছিলে না বলে শত্রুর কোন অভাব ছিল না
তুমি আসবে বলে শত্রুরা মুখ টিপে হেসেছিল।
তুমি ছিলে না বলে আশার প্রদিপে তেলও ছিল না
তুমি এসেছ বলে এখন সেখানে কালি জমে গেছে।
শত্রুদের ভরসা করিনা, তুমি ব্যতিত উপায় জানিনা
বৃহন্নলার বেশে তুমি কেন এলে ,আশার প্রদিপ জলে ভাসে।
তুমি নারী- মমতাময়ী না ছিন্নমস্তা মহিষোমর্দিনী
নাকি পুরুষ বেশে হারকিউলিস কিংবা পরশুরাম।
রক্তপ্লাবন ঝড়ে যায় বোধহীন বোধগম্য পিটুইটারীর খেলায়
অগস্ত্য যাত্রার আগে আবার তুমি এসো।
তুমি অভিশপ্ত অশ্বত্থামা নাকি ট্রয় নগরীর হেলেন
নাকি বোকা বাক্সতে টকশো করা অকাটমূর্খ বুদ্ধিজীবি।
বয়োঃসন্ধির স্বপ্নে এসেছিলে ঘোড়সওয়ার হয়ে ঢাল তলোয়ার হাতে
এখন প্লেন ওঠা-নামা করে, তবু তোমায় দেখিনা।
তুমি হিটলার নও, চেঙ্গিস নও, নও কোন উগ্রপন্থী জঙ্গি
তবু ফন্দি এঁটে অর্ঘ্য বানিয়ে তোমাকেই সাজা দেয় ওরা।
নির্বোধ বিশ্বাসে যে সূর্য ডুবেছিল, ফিরে এল ত্রিখন্ড সাম্প্রদায়িক ভূমি
যার স্বপ্ন বোস, মাওলানা আজাদ কখনো দেখেনি।
তুমি বায়ান্নর ঢাকা আর একশট্টির শিলচর, দুয়ে মিলে কেঁদে ফেরার
এমন বাংলা ত্রিধারায় অধোবদনে নিশ্চুপ নগ্নপ্রায়।
সাতই মার্চে যার সূচনা হয়েছিল , ডিসেম্বরে আবার একটা বাংলা পেলাম
বাংলা নামের দেশ, লাল-সবুজের দেশ - বাংলাদেশ।
তুমি ক্র্যাচে ভর করে বৈজ্ঞানিক বিপ্লব আনতে চেয়েছিলে
পনেরই আগষ্ট এল, উর্দি পেল পতাকা - হায়না শকুন আবার ফিরে এল।
রক্ত -রক্ত-রক্ত, ছোট -বড় বেহায়া আন্দোলনে রক্ত
ক্ষমতার পালা বদলে তুমি রক্তাক্ত ত্রিধারা।
তুমি বদলে যাও হাত থেকে হাতে
সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারনা।
লাশেদের শহর
- সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী
শহরটা অচেনা হয়ে গেল
কেউ আর বেঁচে নেই।
হাত কাটা
পা-কাটা
কান কাটা
কবন্ধ
গলিত লাশ...
সব মাড়িয়ে অস্ফুট যন্ত্রনা নিয়ে
ঘিনঘিন করা পাদুটোকে ঠেলে চলছি।
এ এক বিচিত্র শহর
ভবিষ্যৎ লাশেরা কাঁদা ছড়ায়
কিডনী খুলে খায় জীবন্ত পিশাচ;
চোখ তোলা - চোঁয়াল ভাঙা লাশেরা
মিছিলে -সমাবেশে - পিকেটিং এ।
পার্কে দোকানে হৃৎপিন্ড বিহীন;
স্থির চোখ আর শুকিয়ে যাওয়া রক্তাশ্রু
নিয়ে হেঁটে চলে কবিদের লাশ !
অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে
আজ থেকে আমিও জীবন্ত লাশ........