logo
আপডেট : 12 May, 2020 20:11
শিশুটির জন্মের কারণেই অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন করোনা আক্রান্ত মা

শিশুটির জন্মের কারণেই অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন করোনা আক্রান্ত মা

বিশেষ প্রতিনিধি, নিউ ইয়র্ক:

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩২দিন ধরে হাসপাতালের ভেন্ডিলেশনে অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন এক গর্ভবতী নারী। যে কোনো সময় মৃত্যু সংবাদ শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সন্তান প্রসবের পর আকষ্মিকভাবে জ্ঞান ফেরে তার। সন্তান জন্মদানের পর ওই নারীর কেভিড-১৯ টেস্ট রিপোর্ট ও নেগেটিভ এসেছে। নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে ঘটেছে বিষ্ময়কর এই ঘটনা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গর্ভবতী ওই নারীকে বাঁচানোর সব চেষ্টাই করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। অলৌকিক ভাবে বেঁচে উঠেছেন তিনি। মাকে বাঁচাতেই শিশুটি পৃথিবীতে এসেছে। দেড়মাস হাসপাতালে থাকার পর সোমবার সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ওই বাংলাদেশি নারী। 

করোনা আক্রান্ত শাহিন নামের বাংলাদেশী ওই নারী ৩২দিন আগে নিউ ইয়র্কের কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি হন। শ্বাসকষ্টের কারণে অবস্থার দ্রুত অবণতি হলে চিকিৎসকরা তাকে প্রথমে আইসিইউ এবং পরে ভেন্ডিলেশনে নেন। তারপর থেকে কিডনিসহ একের পর এক শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হতে থাকে। ব্রেইন কাজ করছিল না এবং তিনি সম্পূর্ণ কোমায় চলে যান। দীর্ঘদিন ধরে ভেন্ডিলেশনে কোমায় থাকার কারণে চিকিৎসকরা তাঁর বেঁচে থাকার সব আশা ছেড়ে দেন। এ অবস্থায় রোগির পেটের সাড়ে ছয় মাসের অনাগত সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তার স্বামীকে ফোন করে সন্তান ডেলিভারির অনুমতি নেন। 
চিকিৎসকদের একটি বিশেষজ্ঞ টিমের আপ্রান চেষ্টায় সুস্থ্য একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন শাহিনা। শিশুটির নাম রাখা হয় রিধা। পরে হঠাৎ করেই তার হাতের আঙ্গুল নড়াচড়া শুরু করে এবং নিজে নি:শ্বাস নিতে শুরু করে ওই নারী। এ দৃশ্য দেখে চিকিৎসক নার্সরা আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেন। তারপর সবাইকে অবাক করে জ্ঞান ফিরে আসে তার। আনন্দে চোখে পানি আসে চিকিৎসকদেরও। শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ্য আছে। সংজ্ঞাহীন মা করোনা আক্রান্ত হলেও সদ্যজাত শিশুটির শরীরে করোনা বা কেভিড-১৯ এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
শাহিনার স্বামী শাহনেয়াজ জানান, চিকিৎসকরা আমার স্ত্রীর বাঁচার আশা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। এ অবস্থায় থাকলে মা ও সন্তান দুজনের জীবন বিপন্ন হতে পারে বলে জানান ডাক্তাররা। এরপর ডেলিভারির অনুমতি দেন তিনি। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য প্রতি মুহুর্তে ভয়ংকর কোনো খারাপ খবর শোনার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন মা ও সন্তানকে বাঁচাতে। আমাদের জন্য এটা অনেক বড় একটা খুশীর খবর।
মা ও শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের মাতৃভ্রুণ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কবিতা রাম সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, আমাদের জন্য এটা ছিল অনেক বড় একটা ঝুঁকি। কিন্তু এ ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। তিনি বলেন, এতদিন সংজ্ঞাহীন ও কোমায় থাকা অবস্থায় সন্তান প্রসবের পর বেঁচে উঠা একটি অলৌকিক ঘটনা। আমরা জীবনে এমন ঘটনার স্বাক্ষী হওয়া তো দুরের কথা কখনো গল্পও শুনিনি। মা ও সন্তান সুস্থ্য আছে এজন্য আমাদের খুব ভালো লাগছে। 
সোমবার হাসপাতাল থেকে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে নিজের বাসায় ফিরেছে শাহিনা। কিন্তু সদ্য পৃথিবীর আলোর মুখ দেখা শিশু রিধাকে ছাড়াই বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে। নিদ্দির্ষ্ট সময়ের অনেক আগে জন্ম নেয়ার কারণে আরো মাস খানেক হাসপাতালের ইনকিউবেটরে থাকতে হবে তাকে।