বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা:
নবগঠিত রাজনৈতিক দল ”আমার বাংলাদেশ পার্টি“ মূলত জামাতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের লেখা বই ”আমার বাংলাদেশ“ এর নামেই নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে ঢাকার আধুনিক প্রকাশনী থেকে এই বই প্রকাশিত হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরে যোগদানের পর গোলাম আযমের লেখা যে বইগুলো পড়া বাধ্যতামূলক ছিল এই বইটি তার অন্যতম।
জামায়াত ও শিবিরের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত দলটি শক্তির জানান দিতে আগামী সেপ্টম্বরে ঢাকায় বিশাল শো-ডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তা পিছিয়ে যেতে পারে। ঈদের পরে রাজনীতিতে বড় ধরনের চমক দেখাতে পারে এই দলটি এমন খবরও পাওয়া গেছে একাধিক সূত্রে।
যে বইয়ের নামে দলের নামকরণ সেই বইটিতে গোলাম আযম নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ১৯৭১ সালের ২২ নাভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রিয় কর্মপরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে তিনি পাকিস্তানের লাহোরে গিয়েছিলেন। আর ফেরেননি। এরপর লন্ডন যান। বইয়ে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন যে, ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর তার জন্য দেশে আসার সম্ভাবনা উজ্বল হয়ে উঠে। ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
জন আকাঙ্খাকার বাংলাদেশ নামে নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠনের ঠিক এক বছর পর নাম পরিবর্তন করে জামায়াতের কথিত ‘সংস্কারপন্থিরা” গত ২ মার্চ “আমার বাংলাদেশ পার্টি” এবি পার্টি-নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে।
এ দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে পদত্যাগকারী জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে সূরা সদস্য এএফএম সোলায়মান চৌধুরীকে। যিনি একসময় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন। পরে জামায়াতে যোগ দেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কুমিল্লা-৯ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন।
আর সদস্য সচিব ”সংষ্কারপন্থি” তকমা দিয়ে বহিষ্কৃত জামায়াতের মজলিশে সূরা সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আইনি লড়াই চালানো ব্যারিস্টার তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমদ ভুঁইয়া, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেয়া অনেকেই আছেন এই কমিটিতে ।
২২২ সদস্য বিশিষ্ঠ আহ্বায়ক কমিটির বেশিরভাগই জামায়াত ও শিবিরের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত মুখ। দলটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থাকছেন জামায়াতের সাবেক নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। জামায়াতে ইসলামীর এই সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল লন্ডনে চলে যাওয়ার পরও ২০১৫ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন।
২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি লন্ডন থেকে এক ই-মেইল বার্তায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভুমিকার জন্য জামায়াতকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন রাজ্জাক। দুই দশকেরও বেশি সময় এই দলের রাজনীতি করার পর তার পদত্যাগ নিয়ে জামায়াত ছাড়াও বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। তাকে অনুসরণ করে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা দলত্যাগ করেন সে সময়। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই পদত্যাগ এবং বহিষ্কারের “নাটক” জামায়াতের বিশেষ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। লন্ডন থেকে ব্যারিস্টার রাজ্জাকই নতুন এই দলের সব ধরনের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। দিনে-রাতে জুম এ্যাপের মাধ্যমে কনফিারেন্স মিটিংয়ে নির্দেশনা ও পরামর্শ দেন তিনি।
বিএনপির পর আরো একটি রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং পরামর্শ আসবে লন্ডন থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা টেলিফোনে নিউ ইয়র্ক মেইলকে বলেছেন, এবি পার্টি মূলত জামায়াতে ইসলামীর “বি টিম”। যুদ্ধাপরাধের সাজা এবং জাতির ঘৃণা মাথায় নিয়ে জামায়াতের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। ভিন্ন নামে মাঠে নামার এবং সরকার বিরোধী তৎপরতা চালানোর জন্য নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ও সরকার নতুন এই দলের কর্মকাণ্ড সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষন করছে।
নতুন এই দলটি জামায়াতের আশির্বাদপুষ্ট নয় বা জামায়াতের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না বলে দাবি করা দলটি গোলাম আযমের বই “আমার বাংলাদেশ” নামে কেন নামকরণ করা হয়েছে ? এমন প্রশ্নের জবাবে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-কারো বইয়ের নামে নয়, সারা দেশে আমাদের সমর্থকদের মতামতের ভিত্তিতেই এই নামকরণ।
এবি পার্টির আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী টেলিফোনে নিউ ইয়র্ক মেইলকে বলেছেন, আমরা মনে করি, একাত্তর সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় আমাদের জাতীয় ঐক্যের অন্যতম পাটাতন। এবি পার্টি সেই পাটাতনকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে বদ্ধ পরিকর। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর্মকৌশলের কারণে জামায়াতে ইসলামী এতবছরেও গণমানুষের দল হিসেবে মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারেনি। আর বর্তমান গঠনতন্ত্র যদি রাখে তাহলে সেটা কখনও সম্ভব হবে না এমনকি তাদের রাজনৈকি অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে জামায়াত।