মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের আটক অভিযান চলছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে চলছে আটক অভিযান। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের দেড় হাজারের বেশি বিদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে অভিবাসন বিভাগ। করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলমান রকডাউন সময়ে ইমিগ্রেশনের অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দেশটির কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। সংকটময় সময়ে অবৈধ বিদেশিদের আটক না করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা।
দেশটির ম্যানুফ্যাকচারিং এবং বেসরকারী সংস্থাগুলি অনিবন্ধিত বিদেশি কর্মীদের কোভিড -১৯ স্ক্রিনিংয়ে যেতে উৎ্সাহিত করার জন্য একটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
১৩ মে বুধবার ফেডারেশন অফ মালয়েশিয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স (এফএমএম) সভাপতি তান শ্রী সোহ থিয়ান লাই বলেছেন, অনিবন্ধিত বিদেশী কর্মীদের আটক হওয়ার আশঙ্কা ছাড়াই পরীক্ষার জন্য এগিয়ে আসার সুযোগ করে দিতে হবে এবং গভার্নমেন্ট টু গভার্নমেন্ট একটি চুক্তি হওয়া উচিত। যার আলোকে বিদেশীরা জরিমানা ছাড়াই নিজ দেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
থিয়ান লাই দেশটির জাতীয় দৈনিক ষ্টার অনলাইনে একটি সাক্ষাত্কারে বলেন, চলমান লকডাউনে অনিবন্ধিত কর্মীরা জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে বসবাস করছে। যা বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম আবাসন মান পূরণ করে না। এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।"
মার্সি মালয়েশিয়ার সভাপতি দাতুক ডাঃ আহমদ ফয়জাল পারদৌস বলছেন, অনিবন্ধিত প্রবাসী শ্রমিকরা সরকারী স্বাস্থ্যসেবাতে এগিয়ে আসার সম্ভাবনা কম। “এটি এ কারণে নয় যে তারা পরীক্ষা করতে চান না, তবে তারা গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে রয়েছেন।
তিনি বলেন,"বৈধ এবং অবৈধ উভয় প্রবাসী শ্রমিক রয়েছেন, যাদের পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং লক্ষণাত্মক ও চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়েছিল। তবে হালকা বা লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিরা সম্ভবত এগিয়ে আসবেন না।
যদিও এই মুহুর্তে বিদেশী কর্মী এবং শরণার্থীদের উপর ব্যাপক স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজন ছিল না।
মালয়েশিয়ায় প্রায় ছয় মিলিয়ন বিদেশী কর্মী এবং ১ লাখ ৯০ হাজার শরণার্থীর কথা উল্লেখ করে ডা. আহমাদ ফায়জাল বলেন, "সম্ভবত এখনও বিদেশি কর্মীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়নি।"
এ দিকে চলমান সংকটময় সময়ে শুরু থেকেই অবৈধ বিদেশিদের আট অভিযানের বিরুধিতা করে আসছে তেনাগানিতা। তেনাগানিতার পরিচালক ও পরামর্শক জোসেফ পল ম্যালিয়ামাউভ বলছেন, দরিদ্রতায় বসবাসকারী সুবিধাবঞ্চিত মালয়েশিয়ানদের মতোই অনিবন্ধিত বিদেশী কর্মীদেরও পরীক্ষা করা উচিত।
তিনি বলেন,"সরকারের একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠানো উচিত যে, সাধারণ ক্ষমার সময় তারা নিরাপদ থাকে এবং যদি তারা অসুস্থ বোধ করে তবে তাদের পরীক্ষা করা যেতে পারে।
তেনাগানিতার নির্বাহী পরিচালক গ্লোরিনি এ দাস বলছেন, গত “রি-হায়ারিং প্রোগ্রাম” চলাকালীন সময়ে কয়েক হাজার অভিবাসী কর্মী যারা কেডিএনকে কয়েক লক্ষ রিঙ্গিত প্রদান করেছে তাদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য কিনা? আজ অবধি, সরকার (যদিও সরকারগুলি পরিবর্তিত হয়েছে, তবে একই ব্যক্তিরা আজ নেতারা) প্রোগ্রামটির ব্যর্থতা এবং অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার জন্য দায়বদ্ধ হতে অস্বীকার করেছে।
যে সকল অভিবাসী শ্রমিকরা তেনাগণিতার সহায়তা চেয়েছিলেন তাদের প্রতিবেদন অনুসারে, পুরো রি-হায়ারিং প্রোগ্রামটি অদক্ষতা ও দুর্নীতির সাথে হয়েছিল। ফলস্বরূপ, এর শিকার হওয়া প্রায় অর্ধ মিলিয়ন অভিবাসী শ্রমিকের কাছ থেকে অর্থে আদায়ের জন্য সরকার-স্পনসরিত কেলেঙ্কারী হিসাবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে । তারা কেবল তাদের অর্থ এবং পাসপোর্ট হারায় নাই, তাদের নিজের কোনও দোষ না থাকলেও তারা অবৈধ থেকে যায় এবং তাদের আটকে রাখা হয়, আদালতে অভিযুক্ত করা হয় এবং নির্বাসিত করা অব্যাহত থাকে।
তিনি বলেন, ” যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং আটক হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকে বৈধ হিসাবেই এই দেশে এসেছেন কিন্তু তারা অবৈধ এবং প্রশাসনিক অপরাধের জন্য ইমিগ্রেশন আইনের অধীনে অপরাধী হিসাবে বিবেচিত হবে, যার জন্য আমরা খুব সুপরিচিত। এবং একথা আবার আমাদের মনে রাখা উচিত যে “কোনও মানুষ ‘অবৈধ’ হতে পারে না।”
এদিকে, রি-হায়ারিং প্রোগ্রামের শেষের দিকে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ.শহিদুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, রি-হিয়ারিং প্রোগ্রাম চলাকালে বাংলাদেশি অবৈধ কর্মীরা সরকারের এ আহবানে সাড়া দিয়ে বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন করেও প্রতারণার শিকার হয়েছে। তাদের বৈধ করে নেয়ার আহবান জানালে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পটপরিবর্তনে আর কিছুই হলনা।
এছাড়া মহামারি করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলমান মুভমেন্ট কন্ট্রোল সময়ে বৈধ অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীদের চিকিৎসা নিশ্চিত ও অবৈধদের গ্রেফতার না করতে মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ ও জানিয়েছিলেন হাইকমিশনার মহ. শহিদুল ইসলাম।