বিশেষ প্রতিনিধি:
ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে দেশ আর দেশের চিকিৎসকদের জন্য কাঁদলেন নিউ ইয়র্কের আলোচিত মানবিক চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকার। দেশের জন্য তার এই আবেগ আর চোখের পানি হৃদয় ছুঁয়েছে লাখো মানুষের। অশ্রুসিক্ত এই ফেসবুক লাইভ মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।
গত আড়াই মাস ধরে তার ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে বাংলাদেশ আর বিশ্বের বিভন্ন প্রান্তের লাখ লাখ প্রবাসী করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে আসেন ”মানবতার দূত” খ্যাত এই চিকিৎসক। ”ভালোবাসার অপর নাম বাংলাদেশ” শিরোনামে লাইভ অনুষ্ঠানে ঘুর্ণিঝড় আর করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে সচেতন এবং ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করার পরামর্শ দেন। দেশের চিকিৎসক ও নার্সদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে করোনা রোগিদের চিকিৎসা সেবায় অসামান্য অবদানের কথা বলতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। তিনি দেশের চিকিৎসকদের প্রয়োজনের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার অঙ্গীকার করে বলেন-দেশ আর দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত।
ফেসবুক লাইভে অশ্রুসিক্ত ডা. ফেরদৌস খন্দকার
তিনি জানান, অনেক কষ্ট করে বাংলাদেশের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী ও পুলিশের জন্য অত্যাধুনিক কেএন-৯৫ মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভসসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনে রেখেছিলেন। কিন্তু তা দেশে পাঠাতে পারছিলেন না সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে। গত ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের দেশে ফিরিয়ে নিতে একটি চ্যাটার্ড ফ্লাইট ভাড়া করে সরকার। এ তথ্য জানতে পেরে কয়েকজন যাত্রীর সাথে যোগাযোগ করেন তিনি। তারা লাগেজে করে ওইসব চিকিৎসা সামগ্রি দেশে নিতে সহায়তা করতে রাজি হন। গত শুক্রবার বিকেলে নিউ ইয়র্ক থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে ওয়াশিংটন এয়ারপোর্টে গিয়ে বাংলাদেশী যাত্রীদের কাছে ওই লাগেজগুলো পৌঁছে দেন। এসময় তিনি যাত্রীদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেন। ইতিমধ্যে এসব অত্যাধুনিক মাস্ক ও চিকিৎসা সামগ্রী বাংলাদেশের চিকিৎসক ও নার্সদের কাছে পৌঁছে গেছে। দেশের চিকিৎসকদেরকে ”মুক্তিযোদ্ধা” আখ্যায়িত করে ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ”আপনার দেশের মানুষের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের জন্য আমার সাধ্যমত কিছু মাস্ক ও সরঞ্জামাদি পাঠিয়েছি। ভবিষ্যতে আরো যা কিছু প্রয়োজন তার সব ধরনের সহযোগিতা দিতে আমি প্রস্তুত।
অনেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এবার পরিবারের সাথে ঈদ করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ”আপনাদের জন্য আমার মন কাঁদে”। আমার এই প্রয়াসে সম্মুখ যোদ্ধাদের সাহস যদি কিছুটা বাড়ে। তিনি বলেন, ” আমি সম্মুখ যোদ্ধা ভাই-বোনদের বলতে চাই-আপনারা মাঠ ছেড়ে যাননি। অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করে গেছেন। লড়াই থামিয়ে যাননি। আপনাদের জন্য আমার খুবই খারাপ লাগে। এরই মধ্যে আমি বাংলাদেশে প্রায় ৩০ হাজার মাস্ক ও গ্লাভস পাঠিয়েছি, আরো পাঠাবো। আপনাদের পাশে হয়তো শারিকিভাবে আমার উপস্থিতি নেই কিন্তু মানসিকভাবে আছি সবসময়। এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। তার দু’চোখ বেয়ে পড়তে থাকে অশ্রু। তিনি চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ”কখনো যদি আপনারা মনে করেন আমার সহযোগতিা প্রয়োজন তাহলে জানাবেন। আমি সবকিছু পৌঁছে দেব।
করোনার এই দু:সময়ে ঘরে বসেই করোনা যুদ্ধে জয়ি হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেনডা. ফেরদৌস খন্দকার। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মানবসেবার অনন্য নজির গড়েছেন তিনি। লকডাউনের পর থেকে তিনি নিউ ইয়র্কের শতশত প্রবাসী বাংলাদেশীকে চাল,ডাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি নগদ অর্থ ও দিয়েছেন। বিশেষ করে কাগজপত্রহীন ৫শতাধিক প্রবাসী খাদ্য সহায়তা ছাড়াও একশ’ ডলারের গিফট কার্ড দিয়েছেন। দুই শ’ নেপালী শিক্ষার্থীদের খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ দিয়েছেন। আর বাংলাদেশে ৫০ হাজার পরিবারের ১ মাসের খাবারের দায়িত্ব নিয়েছেন “মানবতার দূত” খ্যাত এই চিকিৎসক। এজন্য শুধু বাংলাদেশের মিডিয়ায় নয়, আমেরিকার মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় ও ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে নিয়ে হইচই পড়ে গেছে।
দেশের চিকিৎসক, নার্স আর স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য তার এই অশ্রুসিক্ত লাইভ অনুষ্ঠান মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। তিনি বলেন, সবার উপরে আমাদের দেশ, প্রিয় মাতৃভূমি। দেশের মানুষের জন্য সাধ্যের সবটুকু করতে চাই। প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত।