মেইল ডেস্ক:
তুরষ্কে সৌদি দূতাবাসে নৃশংস হত্যার শিকার সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন তার ছেলেরা। শুক্রবার পরিবারের পক্ষ থেকে টুইটারে এ বিবৃতি দেন খাসোগির ছেলে সালাহ খাসোগি। সালাহ টুইটারে লিখেছেন, "পবিত্র রমজানের মহিমান্বিত রাতে আমরা আল্লাহর একটি কথা স্মরণ করছি। আল্লাহ বলেছেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ক্ষমা করে দেয়, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।’ সুতরাং আমরা শহীদ জামাল খাসোগির ছেলেরা ঘোষণা করছি-যারা আমাদের বাবার হত্যাকারী আমরা তাদের ক্ষমা ও মার্জনা করছি।" সৌদি রাজপরিবার এখনও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে সালাহর এ ধরনের মন্তব্যের পেছনে রাজপরিবারের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের ব্যাপার থাকতে বলে কানাঘুষা রয়েছে। যদিও সালাহ তা অস্বীকার করেছেন। রাজপরিবারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সালাহ সৌদিতেই বসবাস করছেন বলে বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাবার হত্যাকাণ্ডের পর যুবরাজের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন সালাহ।
গত বছর ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল হয়েছিল যে, বাবার মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসাবে জামাল খাসোগজির সন্তানরা সৌদি সরকারের কাছ থেকে বাড়ি এবং মাসোহারা পাচ্ছেন।
ইসলামী আইন অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যরা ক্ষমা করে দিলে অপরাধীর সাজা মওকুফ বা কম হতে পারে। তবে খাসোগি হত্যাকাণ্ডে শাস্তিপ্রাপ্তদের সাজার ক্ষেত্রে সালাহর ঘোষণা কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়।
জামাল খাসোগি এক সময় সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। তবে এক পর্যায়ে অবস্থান পাল্টে তিনি রাজপরিবারের কঠোর সমালোচকে পরিণত হন। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে তিনি সৌদি রাজপরিবারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে কলাম লিখতেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে খাসোগিকে হত্যার পর তার লাশ গুম করে দেওয়া হয়।
সৌদি রাজপরিবারের, বিশেষ করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রত্যক্ষ মদদে খাসোগিকে ইস্তাম্বুলে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। সৌদি এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সৌদির এ দাবিতে সন্তুষ্ট ছিল না। পরে সৌদি আরব জানায়, সরকারি একটি বাহিনীকে ইস্তাম্বুলে পাঠানো হয়েছিল খাসোগিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু সেই ‘অভিযানটি বিশৃঙ্খল’ হয়ে পড়ায় খাসোগি খুন হয়ে যান। এরপর সৌদি ১১ জনকে খাসোগি হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত করে। রিয়াদে একটি গোপন বিচারালয়ে তাদের মধ্যে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড, তিন জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
সালাহ এর আগে বলেছিলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষের তদন্ত ও বিচারে তার পূর্ণ আস্থা আছে। এ ছাড়া বাবার হত্যাকাণ্ডের সমালোচনাকারীদের সৌদি আরবের ‘শত্রু’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
তবে বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, খাসোগির ছেলে সালমানের বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তার তুর্কী বাগদত্তা হাতিস চেংগিজ। শুক্রবার তিনি টুইটারে লেখেন, জামাল খাসোগি এখন একজন “আন্তর্জাতিক প্রতীক, তিনি আমাদের সবার ঊর্ধ্বে, ভালোবাসা এবং সম্মানের পাত্র তিনি।“ সুতরাং তার হত্যাকারীদের এভাবে ক্ষমা করে দেওয়া যায় না।
মিস চেংগিজ লেখেন, “তার বিয়ের জন্য কাগজপত্র আনতে গিয়ে জামাল তার দেশের কনসুলেটের মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাকে লোভ দেখিয়ে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার জন্য সৌদি আরব থেকে লোক যায়।”
তিনি বলেন, জঘন্য এই হত্যাকাণ্ডের হোতাদের ক্ষমা করে দেওয়ার অধিকার কারো নেই, এবং বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ করবেন না।
শিগগির এ হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।