মেইল ডেস্ক:
বিক্ষোভকারীরা হোয়াইট হাউজ অবরূদ্ধ করে রাখার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোপন সুড়ঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এসময় তার স্ত্রী-পুত্রকেও অন্য সুড়ঙ্গে নিয়ে যায় নিরাপত্তারক্ষীরা। আমেরিকার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের অনলাইনে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে বিক্ষোভকারীরা যখন হোয়াইট হাউজের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে তখন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বরত সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তারা তখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গোপন সুড়ঙ্গে নিয়ে যান। প্রায় এক ঘন্টা সেখানে রাখা হয়েছিল প্রেসিডেন্টকে। ফার্ষ্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প এবং ছেলে ব্যারনকেও গোপন সুড়ঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে প্রেসিডেন্টের স্ত্রী-পুত্র সেখানে ঠিক কত সময় ছিল তা জানা যায়নি।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় জানান, বিক্ষোভকারীরা হোয়াইট হাউজের ভিতরে ঢুকলে তাদের দমনের জন্য অস্ত্রধারী সিক্রেট সার্ভিসের সদস্য এবং হিংস্র কুকুর অপেক্ষা করছে। প্রেসিডেন্টের এই টুইটে আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বিক্ষোভকারীরা।
রোববার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা হোয়াইট হাউজ সংলগ্ন “সেন্ট জনস চার্চে” আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আইকনিক চার্চটি হোয়াইট হাউসের পাশেই অবস্থিত এবং এটি "চার্চ অফ দ্য প্রেসিডেন্টস" হিসাবে পরিচিত কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ অনেক প্রেসিডেন্টই সেখানে গিয়েছেন। ওই এলাকায় আরো কয়েকটি ভবনে রাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানী ওয়াশিংটনে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে পুলিশের হাতে নৃশংসভাবে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হত্যার ঘটনায় ষষ্ঠ দিনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যেই প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ চলেছে। ১৫টি অঙ্গরাজ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
মিনিয়াপোলিস শহরে গত ২৫মে সন্ধ্যায় সন্দেহভাজন একটি প্রতারণার ব্যাপারে কল পেয়ে পুলিশ ৪৬ বছর বয়স্ক জর্জ ফ্লয়েড নামের এক ব্যাক্তিকে আটক করে। তিনি স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে কাজ করতেন। গ্রেফতারের পর ডেরেক চাউভিন নামের এক পুলিশ অফিসার রাস্তার উপর ফেলে হাঁটু দিয়ে তার ঘাড় চেপে ধরে রাখেন প্রায় ৯ মিনিট। পরে ওই ব্যক্তি মারা যায়। পুলিশী নির্যাতনের সেই ভিডিও স্যোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে মুহুর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় জর্জ ফ্লয়েড নি:শ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারকে বলছেন, "আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না।" এঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়।
বৃহষ্পতিবার মিনিয়াপোলিস অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবন, গাড়ি এবং স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। শুক্রবার সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষ বাহিনী মার্কিন ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মার্কিন বিশেষ বাহিনীরও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
হত্যার দায়ে শুক্রবার সকালে পুলিশ অফিসার ডেরেক চাউভিন কে গ্রেফতার করা হয়।
সিএনএন জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে শুক্রবার বিকেলে কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে হোয়াইট হাউজের দিকে মিছিল করে যায়। কাছাকাছি পৌঁছালে সিক্রেট সার্ভিস অফিসাররা হোয়াইট হাউজের সবক’টি গেট বন্ধ করে দেয়। ব্রিফিংরুমের দরজা বন্ধ করে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করা হয়। সিক্রেট সার্ভিস অফিসাররা কাউকে হোয়াইট হাউসে ঢুকতে বা বের হতে দেয়নি। কয়েকঘন্টা অবরূদ্ধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করার পর সন্ধ্যা ৮.৪০ মিনিটে বিক্ষাভকারীরা হোয়াইট হাউস এলাকা ত্যাগ করে ক্যাপিটল হিলের দিকে চলে গেলে আবারো সব গেট খুলে দেয়া হয়।
মিনিয়াপোলিসের মেয়র জ্যাকব ফ্রে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করেছেন।